বাংলা হান্ট ডেস্ক: অবশেষে জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সামনে এল হাই স্পিড ট্রেনের লুক! পাশাপাশি, প্রকাশ পেয়েছে এই ট্রেনের একাধিক ফিচার্স সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। এছাড়াও, এবার দিল্লি এনসিআর-এ যাতায়াত এখন অত্যন্ত সহজ হতে চলেছে যাত্রীদের জন্য। দিল্লি-মিরাট এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির পরে, এখন এনসিআর-এর যাত্রীরা দেশের প্রথম আঞ্চলিক র্যাপিড রেল ট্রানজিট সিস্টেম (আরআরটিএস)-এর সুবিধা পেতে চলেছেন। এই দ্রুতগতির ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে যাত্রীদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাবে।
এই ট্রেনে (দিল্লি-মিরাট হাই স্পিড ট্রেন) বসে আপনার মনে হবে আপনি যেন বিমানে ভ্রমণ করছেন। অত্যাধুনিক এই ট্রেনের ভেতরে বিমানের মত বসার ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি আপাতত ট্রেনগুলিতে মোট ৬ টি বগি থাকবে, যা আগামী সময়ে বাড়িয়ে ৯ টি করা হতে পারে। এই বগি গুলির মধ্যে একটি বগি সম্পূর্ণ প্রিমিয়ার ক্লাস হিসেবে তৈরি হবে। এছাড়াও, এই ট্রেনে একবারে মোট ১৫০০ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।
দিল্লি থেকে মিরাটের দূরত্ব প্রায় ৮২ কিলোমিটার। বর্তমানে বাসে এই দূরত্ব যেতে ২ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। অপরদিকে, এই উচ্চ গতির ট্রেনটি এক ঘন্টারও কম সময়ে এই দূরত্ব খুব সহজেই অতিক্রম করতে সক্ষম হবে। এছাড়াও, হাই-স্পিড ট্রেনটিতে ওয়াই-ফাইরও সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
দিল্লিএনসিআর-এ সংযোগ উন্নত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থান সরকার ন্যাশনাল ক্যাপিট্যাল রিজিয়ন ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (এনসিআরটিসি) গঠন করেছে। এই কর্পোরেশন আঞ্চলিক সংযোগের জন্য ৩ টি করিডোর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে, দিল্লি-গাজিয়াবাদ-মিরাট করিডোরে (৮২ কিলোমিটার) কাজ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে, দিল্লি-গুরুগ্রাম-আলওয়ার (১৬৪ কিমি) করিডোর এবং তৃতীয় পর্যায়ে দিল্লি-পানিপথ করিডোর (১০৩ কিমি) কাজ করা হবে। ইতিমধ্যেই এই দু’টি করিডোরের নকশা প্রণয়নও করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে যে, দিল্লি-মিরাট হাই স্পিড ট্রেন করিডোরটি দিল্লির সারাই কালে খান স্টেশন থেকে শুরু হবে। এই করিডোরে মোট ২৫ টি স্টেশন থাকবে। সরাই কালে খান স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার পরে, ট্রেন নিউ অশোক নগর এবং আনন্দ বিহার স্টেশনের পরে উত্তরপ্রদেশে প্রবেশ করবে। এখান থেকে সাহিবাদ, গাজিয়াবাদ, দুহাই, মুরাদনগর, মোদিনগর দক্ষিণ, মোদিনগর উত্তর, মিরাট দক্ষিণ, পারতাপুর, রিথানি, শতাব্দী নগর, ব্রহ্মপুরি, মিরাট সেন্ট্রাল, ভৈনসালি, বেগমপুল, এমইএস কলোনি, মিরাট উত্তর হয়ে মোদিপুরম পর্যন্ত ট্রেনটি যাবে।
এই ট্রেন সম্পূর্ণ বিদ্যুতে চলবে। যার ফলে এনসিআরের দূষণ পরিস্থিতি এবং রাস্তায় যানজটের সমস্যাও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। গুজরাটের সাভলিতে দিল্লি-গাজিয়াবাদ-মিরাট করিডোরে চলাচলকারী ট্রেন তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে এই ধরনের মোট ৪০ টি ট্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। চলতি বছরেই ট্রেনগুলিকে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য দিল্লিতে আনা হবে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধার্য করা হয়েছে ৩০,২৭৪ কোটি টাকা।
এই প্রসঙ্গে NCRTC-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিনয় কুমার সিং জানিয়েছেন যে, দিল্লি-মিরাট হাই স্পিড ট্রেনে অসুস্থ রোগীদের জন্য স্ট্রেচার রাখার ব্যবস্থা থাকবে। এর সাথে ল্যাপটপ এবং মোবাইল চার্জ করার জন্য একটি সিঙ্গেল চার্জিং পয়েন্টও করা হয়েছে, যা প্রতিটি সিটে পাওয়া যাবে। প্রতিটি কোচে বড় বড় আয়না বসানো হয়েছে যাতে যাত্রীরা বাইরের দৃশ্য দেখতে পারেন। এছাড়াও, রেলের স্টেশনটি এমনভাবে ডিজাইন করা হচ্ছে যাতে অসুস্থ ব্যক্তিদের স্ট্রেচারের মারফত দ্রুত রেলের বগিতে পৌঁছন যেতে পারে।
এছাড়াও, তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রতিটি ট্রেনে একটি করে প্রিমিয়াম ক্লাস কোচ থাকবে এবং মহিলাদের জন্যও একটি কোচ সংরক্ষিত রাখা হবে। যাত্রীদের সুবিধার্থে র্যাপিড রেল কোচে আরামদায়ক স্ট্যান্ডিং স্পেস-লাগেজ র্যাক বসানো হয়েছে। এই দ্রুতগতির ট্রেনটি প্রতি ৫ থেকে ১০ মিনিট অন্তর পাওয়া যাবে এবং ১ ঘন্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করবে।
উল্লেখ্য যে, দিল্লি-গাজিয়াবাদ-মিরাট আরআরটিএস করিডোরের কাজ পুরোদমে চলছে এবং ২০২৩ সালের মার্চ মাসে সাহিবাদাবাদ থেকে দুহাই পর্যন্ত সবার প্রথম আঞ্চলিক ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এটি একটি ১৭ কিলোমিটারের দীর্ঘ পরীক্ষা হবে। একইসঙ্গে ২০২৫ সালের মধ্যে সারাই কালে খান থেকে মিরাট পর্যন্ত এই ট্রেন চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রথমে আরআরটিএস করিডোর প্রায় ৮ লক্ষ যাত্রী বহন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ৮২ কিলোমিটারের দিল্লি-গাজিয়াবাদ-মিরাট করিডোরে মোট ২৫ টি স্টেশন থাকবে, যার মধ্যে দুহাই এবং মোদিপুরমে দুটি ডিপো এবং জংপুরায় একটি স্ট্যাবলিং ইয়ার্ড রয়েছে।