সোনা-রুপো কিংবা হিরে নয়! এই জিনিসটির জন্যই চিন-আমেরিকার সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে ভারত

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বিশ্বের প্রতিটি শক্তিধর দেশ বর্তমানে বিরল খনিজ সন্ধানের ক্ষেত্রে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। এদিকে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারত (India) সরকার জাম্বিয়ার এখ অঞ্চলে তামা ও কোবাল্ট অনুসন্ধানের জন্য ৯,০০০ বর্গকিলোমিটার ব্লক সংরক্ষণের ঘোষণা করে। ওই অঞ্চলটি উচ্চ-গ্রেডের তামা এবং কোবাল্ট মজুতের জন্য পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্পটি অভ্যন্তরীণভাবে কম উৎপাদনের কারণে বিদেশি খনির কার্যক্রম স্থাপনের জন্য ভারতের (India) ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

তামার পেছনে ছুটছে ভারত (India):

কেন হুঁশিয়ারি দিয়েছে হোয়াইট হাউস: এদিকে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, হোয়াইট হাউস “তামা আমদানির দ্বারা সৃষ্ট জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি” বিষয়ে একটি তথ্য পত্র প্রকাশ করেছে। যেখানে সতর্ক করে জানানো হয়েছে যে, “বিদেশি তামার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা” “মার্কিন প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।” এই কারণে আমেরিকাও তামার সরবরাহ বাড়াতে সারা বিশ্বে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

চিনও তামার প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে: জানিয়ে রাখি যে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারী, ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে যে তামার আকরিক সরবরাহ হ্রাস পাওয়ার কারণে চিন তামা গলানোর ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরছে। এদিকে, চিনা কোম্পানিগুলি তামার খনি দখলের জন্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির জন্য জোর দিচ্ছে। এই কোম্পানিগুলির বেশিরভাগই কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (ডিআরসি), চিলি এবং পেরুতে কাজ করছে। যেখানে প্রচুর পরিমাণে তামা পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চিন বিশ্বের অর্ধেক তামা গলানোর এবং পরিশোধন ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

This is why India is competing with China and America.

কেন তামা খনি গুরুত্বপূর্ণ: বর্তমানে বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ির (EV) ব্যাটারি এবং ক্লিন এনার্জি প্রযুক্তিতে ব্যবহারের কারণে তামার চাহিদা বাড়ছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে এই চাহিদা খনি থেকে উত্তোলিত তামার পরিমাণকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কারণেই ভারত (India), চিন এবং আমেরিকার মতো দেশগুলি সাপ্লাই চেন সুরক্ষিত করতে এবং অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা শক্তিশালী করতে লড়াই করছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী দশকে তামার জন্য দৌড় আরও তীব্র হবে।

আরও পড়ুন: বিরাটের দুর্ধর্ষ ইনিংস! অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারত

ভারতের বিদেশ ফোকাস: ভারতে (India) তামা একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০২৩-২৪ সালে এই দেশীয় আকরিকের উৎপাদন ছিল ৩.৭৮ মিলিয়ন টন (MT)। যা ২০১৮-১৯-এর তুলনায় ৮ শতাংশ কম। চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল থেকে জানুয়ারির মধ্যে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হিন্দুস্তান কপার লিমিটেডের (HCL) তামার আকরিক উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ কমেছে। অভ্যন্তরীণ আকরিক উৎপাদনে স্থবিরতার কারণে ২০১৮-১৮ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত ভারতের তামার ঘনত্বের আমদানি মূল্যের দিক থেকে দ্বিগুণ হয়ে ২৬,০০০ কোটি রুপি হয়েছে।

আরও পড়ুন: ক্রমশ বাড়ছে উদ্বেগ! এই একটা জিনিস দিয়েই ৩ দিক দিয়ে ভারতকে ঘিরে ধরেছে পাকিস্তান-মলদ্বীপ-বাংলাদেশ

ভারতেও তামার বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ভারতে তামার (India) বিশাল ভাণ্ডার থাকলেও খনন শুরু করার আগে তাদের ব্যাপক অনুসন্ধানের প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী, একটি তামার খনি শুরু করতে গড়ে ১৭ বছর সময় লাগে। স্বল্পমেয়াদে চাহিদা মেটাতে, ভারত জাম্বিয়া, চিলি এবং DRC-র মতো তামা-সমৃদ্ধ দেশগুলিতে গ্রিনফিল্ড এবং ব্রাউনফিল্ড উভয় খনিজ সম্পদ সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছে। এই দেশগুলির ভাণ্ডারগুলি সাধারণত ভারতের তুলনায় উচ্চতর গ্রেডের হয় এবং খনির ওপর তাদের বিস্তৃত ফোকাসের কারণে, প্রকল্পগুলি দ্রুত বিকাশ করা যেতে পারে। তবে, বিদেশি খনিজ সম্পদে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকিও বহন করে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর