বাংলা হান্ট ডেস্ক: দিল্লিতে অবস্থিত AIIMS-এর ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠা অঙ্গদাতা হিসেবে নাম তুলে ইতিহাস গড়লেন রৌলির। মাত্র ৫ বছর ১০ মাস বয়সেই নিজে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও সে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল দু’জনকে।
অঙ্গদানের মাধ্যমেই সে বাঁচিয়েছে দু’জনকে:
এই কম বয়সেই মাথায় গুলি লেগে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত্যু হয় রৌলির। মাত্র ৫ বছর বয়সেই সবাইকে ছেড়ে চলে যায় সে। যদিও, সে যেতে যেতে শরীরের অঙ্গ দানের মাধ্যমে তৈরি করেছে ইতিহাস। এমনকি, সে দু’জনের জীবনও বাঁচিয়েছে এই মহতী উদ্যোগের মাধ্যমে।
কিভাবে ঘটল রৌলির মৃত্যু:
এই প্রসঙ্গে রৌলির বাবা হরিনারায়ণ প্রজাপতি জানিয়েছেন, গত ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা নাগাদ নয়ডা সেক্টর ১২১-এ অবস্থিত বাড়ির বাইরে খেলছিল রৌলি। সেই সময়ে রৌলির বাবা হরিনারায়ণ ছিলেন ঘরে। পাশাপাশি, তার মা পুনমও ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু, হঠাৎই একটি বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পান তাঁরা। ঠিক তারপরেই পাওয়া যায় রৌলির কান্নার শব্দও।
তার মাথায় গুলি লাগে:
তৎক্ষণাৎ হরিনারায়ণ সেখানে গিয়ে দেখেন রৌলির রক্তে ভেসে গিয়েছে চারিদিক। তারপর তাকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় নয়ডার সরকারি হাসপাতালে। যদিও এই সরকারি হাসপাতাল থেকে দিল্লির AIIMS-এ রেফার করা হয় রৌলিকে। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে তাঁরা AIIMS-এ এসে পৌঁছান। রৌলিকে সেখানে তৎক্ষণাৎ ভর্তি করে তার মাথার সিটি স্ক্যান করা হলে দেখা যায় যে, তার মাথায় একটি গুলি লেগেছে এবং ২টি হাড়ও ভেঙ্গে গিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে AIIMS-এর সিনিয়র নিউরোসার্জন ডাঃ দীপক গুপ্ত জানিয়েছেন, ওই বাচ্চা মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় তার অবস্থা গুরুতর ছিল। টানা দুই দিন রৌলির চিকিৎসা ও পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু শুক্রবার সকাল ১১.৪০ মিনিটে রৌলির “ব্রেন ডেথ”-এর ঘোষণা করা হয়।
অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার:
ডাঃ গুপ্তার মতে, রৌলির বাবা-মা অবশ্যই দরিদ্র কিন্তু তাঁরা খুব বাস্তববাদী। ডাঃ গুপ্তা ওই অবস্থায় তাঁদের অঙ্গদানের কথা বললে প্রথমে তাঁরা অস্বীকার করলেও কিছুক্ষণ পর রাজি হয়ে যান রৌলির বাবা-মা।
এদিকে, এই মর্মান্তিক ঘটনায় রৌলির বাবা হরিনারায়ণ স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, তাঁর হাসিখুশি মেয়ে পৃথিবী থেকে চলে গেছে কিন্তু তিনি অন্য কোনো সন্তানের হাসি ছিনিয়ে নিতে পারেননি। তাই তিনি রৌলির অঙ্গ দান করতে রাজি হয়েছেন।
এদিকে, পরিবারের সম্মতির পর রৌলির যকৃৎ অ্যাপোলোতে ভর্তি একটি শিশুর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং দুটি কিডনিই এইমসের একটি রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত করা হয়। এছাড়াও, রৌলির হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব এবং চোখের কর্নিয়া সুরক্ষিত ভাবে রাখা রয়েছে। যা বাঁচাতে পারে আরও কিছু মানুষের জীবন।