বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও আমাদের দেশে এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে বিদ্যুতের (Electricity) সংযোগ এখনও পৌঁছয়নি। এমতাবস্থায়, স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার বাসিন্দাদের চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। তবে, এবার ঝাড়খণ্ডে (Jharkhand) বসবাসকারী এক ব্যক্তি অভিনব উপায়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে গ্রামে বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটাই মিটিয়ে ফেলেছেন। হ্যাঁ, শুনে অবাক হয়ে গেলেও ঠিক এই ঘটনাই ঘটিয়েছেন তিনি।
অভিনব উপায়ে তৈরি করেছেন বিদ্যুৎ: মূলত, ঝাড়খণ্ডের দুলমি ব্লকের বায়াং গ্রামের বাসিন্দা কেদার প্রসাদ মাহাতো পেশায় একজন বিদ্যুৎকর্মী। তিনি বহু বছর ধরে গ্রামে বিদ্যুতের সমস্যায় ভুগছিলেন। এমতাবস্থায়, কেদার সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য নিজেই বিদ্যুৎ তৈরির মাধ্যমে তাঁর গ্রামটিকে আলোকিত করার সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে, বর্তমানে ৩৩ বছর বয়সী কেদারের এই কাজ করতেই প্রায় ১৮ বছর সময় লেগে যায়। তবুও, তিনি হাল ছাড়েননি। বরং, নিজের গ্রামকে আলোকিত করার জন্য সবরকমের চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি। অবশেষে অভিনব উপায়ের মাধ্যমে জল থেকে পাঁচ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সফল হয়েছেন কেদার।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, ২০০৪ সালে কেদার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই সময় তিনি মাত্র ১২ ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হন। তবে, তিনি হাল ছাড়েননি বরং কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন। এদিকে, ২০১৪ সালে কেদার ১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সবাইকে অবাক করে দেন। যদিও, ১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে পুরো গ্রাম আলোকিত করা না গেলেও কেদারের জেদ আরও বেড়ে যায়। তিনি সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে ২০২১ সালে ৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সফল হন। পাশাপাশি, তাঁর পুরো গ্রামটি আলোকিতও করে ফেলেন কেদার।
দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন তিনি: উল্লেখ্য যে, কেদার কেবল দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এদিকে, স্কুলের পড়া শেষ করার পর, কেদার ওয়ারিংয়ের কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে তিনি যা উপার্জন করতেন তা গ্রামের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যয় করতেন। এদিকে, এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কেদার তাঁর ৩ লক্ষ টাকা খরচ করে ফেলেন।
মূলত, কেদার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সেনেগাদা নদীর কাছে আমঝরিয়ায় একটি কেন্দ্র তৈরি করেছিলেন। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় তাঁর উৎপাদন কেন্দ্রটি বন্যায় ভেসে যায়। এরপর কেদার নদীর মাঝখানে সিমেন্টের পিলার বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি নদী থেকে পাওয়ার হাউসে পৌঁছনোর জন্য একটি বাঁশের কালভার্টও তৈরি করা হয়। এদিকে, এই পাওয়ার হাউসটি থেকেই ৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়েছে। যা থেকে ১০০ ওয়াটের ৪০ থেকে ৪৫ টি বাল্ব সহজেই জ্বালানো যায়।
যদিও, কেদার প্রসাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ এখনও প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। কারণ পুরো গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গেলে অনেক বিদ্যুতের খুঁটি এবং তারের প্রয়োজন হবে। এই প্রসঙ্গে কেদার বলেন যে, এই কাজটি সম্পূর্ণ করতে ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে। কিন্তু, তাঁর কাছে এত টাকা নেই। তাই তিনি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সরকারের সহায়তা চান। তবে, কেদারের উৎপাদিত বিদ্যুতের ওপর ভর করেই রাত্রিবেলায় গ্রামের রাস্তাগুলি আলোকিত করা হয়েছে।