বাংলাদেশ বা পাকিস্তান নয়! ভারতের এই প্রতিবেশী দেশে মন্দির নিষিদ্ধ, পুজোপাঠ করলেই হবে জেল

Published On:

বাংলাহান্ট ডেস্ক : সনাতন ধর্ম বিশ্বের সবথেকে প্রাচীন ধর্মগুলির মধ্যে অন্যতম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। রয়েছে হিন্দু মন্দির, যেগুলি বিশ্বের (India) বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করে দেখতে আসেন। সর্বত্রই হিন্দুদের ধর্মীয় রীতিনীত পালনে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এমনকি পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো মুসলিমপ্রধান দেশগুলিতেও রয়েছে হিন্দু মন্দির। সেখানেও পূজা অর্চনা হয়ে থাকে। তবে জানলে অবাক হবেন, ভারতের (India) আরেক প্রতিবেশী দেশে রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। সেখানে মন্দির তৈরি করা সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। এমনকি রুজি রোজগারের টানে সেদেশে যাওয়া হিন্দুদের লুকিয়ে চুরিয়েই ধর্মীয় রীতিনীতি মানতে হয়।

ভারতের (India) প্রতিবেশী দেশে নেই একটিও মন্দির

একটা সময় এই দেশটিতে ছিল হিন্দু এবং বৌদ্ধ রাজাদের রাজত্ব। কিন্তু আজ সেখানেই একটিও মন্দির তৈরি করা সম্ভব নয়। প্রতিবেশী এই দেশটির সঙ্গে ভারতের (India) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে মাঝেমাঝে উত্থান পতন আসতে থাকে ঠিকই, তবে ভারতের উপরে সর্বতোভাবে নির্ভর করে রয়েছে এই দেশ। জল, সবজিপাতি রপ্তানি থেকে শুরু করে এই দেশের পর্যটনশিল্পেও রয়েছে ভারতের (India) অবদান। এদেশ থেকে বহু মানুষ সেখানে অর্থ উপার্জনের জন্যেও গিয়ে থাকেন। ধরতে পারলেন কোন দেশের কথা বলা হচ্ছে?

This neighboring country of India doesn't have any temple

ভারতের থেকে ঢের ছোট দেশ: দেশটি হল মালদ্বীপ। পর্যটনের ক্ষেত্রে অন্যতম জনপ্রিয় এই দ্বীপরাষ্ট্র। কিন্তু এখানে কেন হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করা সম্ভব নয়? কেন এখানে একটিও মন্দির নেই? আসলে মালদ্বীপের সংবিধান অনুযায়ী, এই দেশের প্রতিটি নাগরিকের মুসলিম ধর্মাবলম্বী হওয়া বাঞ্ছনীয়। ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মীয় প্রতীক, ধর্মীয় চর্চা বা উপাসনালয়ের উপরে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ ভারত (India), শ্রীলঙ্কা সহ একাধিক দেশের মানুষ এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত রয়েছেন। অথচ ভারতের ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরির থেকেও আয়তনে ছোট মালদ্বীপ। এবার প্রশ্ন হল, এই দেশে একটিও মন্দির তৈরি করা সম্ভব নয় কেন?

আরো পড়ুন : মাত্র ৪ দিনেই দর্শকদের প্রিয়, TRP-র খেলাই ঘুরিয়ে দেবে জি বাংলার এই মেগা!

কেন নেই কোনো মন্দির: এর কারণ হল মালদ্বীপের সংবিধান, আইনি ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় নীতি। ২০০৮ সালের সংশোধিত মালদ্বীপের সংবিধান অনুযায়ী, মালদ্বীপ একটি ১০০ শতাংশ ইসলামিক রাষ্ট্র। যারা ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করেন শুধুমাত্র তারাই মালদ্বীপের নাগরিকত্ব পেতে পারেন। পাশাপাশি এই দেশের সংবিধান অনুযায়ী, এখানে ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের প্রচার, ধর্মীয় রীতি পালন এবং হিন্দু মন্দির, চার্চ, গুরুদ্বারার মতো অ-ইসলামীয় উপাসনালয় নির্মাণ সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। দেশের সংবিধানে সংশোধন করে একথা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে, মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয় এখানে নির্মাণ করা যাবে না। মালদ্বীপে বসবাসকারী হিন্দুরা (India) প্রকাশ্যে বা কোনো ‘পাবলিক প্লেসে’ ধর্মীয় রীতি পালন করতে পারেন না। উপার্জনের জন্য প্রায় ১৫০০-২০০০ হিন্দুর বসবাস রয়েছে এখানে। নিজের নিজের বাড়িতে লুকিয়ে চুরিয়ে পুজোপাঠ করতে হয় তাদের। এমনকি বিমানবন্দরেও চলে কড়া তল্লাশি। কোনো ধর্মীয় প্রতীক আনতে গিয়ে ধরা পড়লে জরিমানা, জেলের মতো শাস্তি হতে পারে।

আরও পড়ুন : হচ্ছে না বন্ধ, ধুঁকতে থাকা মেগার ফের স্লট বদল! শেষ মুহূর্তে খেলা ঘুরিয়ে দিল জি বাংলা

মালদ্বীপে বিদেশীরা থাকেন ঠিকই, তবে তারা না নাগরিকত্ব পান, আর না ধর্মীয় রীতি পালনের জন্য সরকারি সুযোগ সুবিধা। আসলে মালদ্বীপে অ-ইসলামীয় ধর্মীয় রীতিনীতি প্রচার এবং এতে অংশগ্রহণ করা গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এমনকি পর্যটকদেরও এখানে অন্য ধর্মীয় প্রতীক আনায় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। একসময় অবশ্য এখানে হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মেরই প্রভাব ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে ভিনদেশী ব্যবসায়ীদের সংস্পর্শে এসে ধর্ম পরিবর্তনের হিড়িক ওঠে। আগে এখানে বৌদ্ধ মন্দিরের কাঠামো থাকলেও ১১৫৩ খ্রিস্টাব্দে মালদ্বীপ সরকারি ভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে সম্ভবত সমস্ত মন্দির ধ্বংস করা হয় বা সেখানে মসজিদ গড়ে তোলা হয়। মালে তে কিছু পুরনো মসজিদের নীচে মিলেছে বৌদ্ধ উপাসনালয়ের ধ্বংসাবশেষ।

Niranjana Nag

নীরাজনা নাগ, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। নারুলা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে স্নাতক পাশ করার পর সাংবাদিকতার সফর শুরু। বিগত ৫ বছর ধরে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত।

X