৪ কোটি গাছ লাগিয়ে ব্রহ্মপুত্রের তীরকে বানিয়েছেন জঙ্গল! শুধু ভারতেই নয়, বিদেশেও বিখ্যাত তিনি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে যখন একের পর এক বনাঞ্চল ধ্বংস করে রীতিমতো মারণখেলায় মেতে উঠছে মানুষ ঠিক সেই আবহেই নিঃশব্দে সবুজের পরিমান বাড়িয়ে চলেছেন এক ব্যক্তি। পাশাপাশি, প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে বজায় রাখার চেষ্টায় তিনি বনভূমি তৈরি করে সবাইকে এক অনন্য বার্তা প্রদান করেছেন। মূলত, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা যাদব মোলাই পায়েং (Jadav Molai Paying)-এর প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব। যিনি তাঁর কাজের ভিত্তিতে পরিচিত হয়ে উঠেছেন “Forest Man Of India” হিসেবেও।

আসামের জোড়হাট জেলার বাসিন্দা যাদব মোলাই পায়েং ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ১,৩৬০ একর জুড়ে বনভূমি গড়ে তুলেছেন। এর ফলে তিনি শুধু হাজার হাজার বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলই তৈরি করেন নি, পাশাপাশি, পরিবেশ রক্ষার্থে অনন্য দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। জানা গিয়েছে, যাদব এখনও পর্যন্ত চার কোটিরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন। ২০১৫ সালে তাঁর এই বিরল কৃতিত্বের জন্য তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও , যাদব আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট (পিএইচডি) ডিগ্রিও পেয়েছেন।

   

বন্যা বদলে দিয়েছে জীবনের গতিপথ: যাদব পায়েং ১৯৬৩ সালে আসামের জোড়হাট জেলার একটি ছোট গ্রাম কোকিলামুখে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি তাঁর বিশেষ ভালোবাসা ছিল। এদিকে, ১৯৭৯ সালে আসামে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। সেই সময়ে ১৬ বছর বয়সী যাদব দেখেন ব্রহ্মপুত্রের তীরে বহু বন্যপ্রাণী মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এমনকি, ভূমি ক্ষয়ের কারণে চারপাশের সবুজ জমিকে গ্রাস করে নিয়েছে ব্রহ্মপুত্র। এই ঘটনা যাদবের মনে দারুণ প্রভাব ফেলে।

তারপরে যাদব সিদ্ধান্ত নেন যে, গাছ লাগানোর মাধ্যমে বনাঞ্চল তৈরি করবেন তিনি। এমতাবস্থায়, যাদব তাঁর এই ভাবনা গ্রামবাসীদের সাথে ভাগ করে নিলেও কেউ তাঁর সেই সিদ্ধান্তে রাজি হননি। এমনকি, কোনো সরকারি সাহায্য ছাড়াই এই কাজটি অত্যন্ত কঠিনও ছিল। তা সত্ত্বেও, যাদব হাল ছাড়েননি এবং নিজেই তা শুরু করে দেন। একদম প্রথমে তিনি ২০ টি চারা রোপণ করেন এবং ধীরে ধীরে সংখ্যাটি এতটাই বেড়ে যায় যে প্রায় ১,৩৬০ একর জমি এখন বিশাল বনভূমিতে পরিণত হয়েছে।

যাদব পায়েং কিভাবে স্বীকৃতি পেলেন: এই প্রসঙ্গে যাদব জানান, “২০০৯ সালে, একজন সাংবাদিক একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে আসামের মাজুলি দ্বীপে এসেছিলেন। তাঁকে কেউ একজন জানায়, সেখান থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে একটা জঙ্গল আছে। সেই জঙ্গল বানিয়েছে একজন সাধারণ মানুষ। প্রথমে তাঁর কাছে ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত লেগেছিল। যদিও তিনি এই বন দেখতে এবং সেটি তৈরি করা মানুষটির সাথে দেখা করার জন্য কৌতূহলী ছিলেন।”

76616539 1446542788828215 8992573752931778560 n

যাদব জানান যে, শুধুমাত্র সেই সাংবাদিকের কারণেই সবাই তাঁর কাজের কথা জানতে পেরেছিল। আজ যাদব পায়েং সারা বিশ্বে পরিচিত। ইতিমধ্যেই কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা ম্যাকমাস্টার যাদব পায়েং-এর জীবন নিয়ে “ফরেস্ট ম্যান” নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন। সেটি ২০১৪ সালে মুক্তি পায় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কারও লাভ করে।

এখন মেক্সিকোতে গাছ লাগাবেন যাদব: যাদব পায়েং জানিয়েছেন যে, “প্রকৃতির সুরক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে মেক্সিকোতে প্রায় আট লক্ষ হেক্টর জমিতে গাছ লাগানোর জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট চারা রোপণের জন্য আমন্ত্রণ পাঠান। আমি যখন এই আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম, তখন আমি অত্যন্ত গর্বিত হই।

GettyImages

এছাড়াও তিনি বলেন, মেক্সিকোতে চারা রোপণের জন্য তিনি হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে এই ক্যাম্পেইনের অংশ করবেন। এদিকে, নিজের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে যাদব জানান, “যখন আমি ছোট ছিলাম, কেউ আমার হাতের তালু দেখে বলেছিল যে, আমার জীবন প্রকৃতি অনুসারে চলবে। হস্তরেখায় সত্যতা আছে কি না জানতাম না। কিন্তু সেই ভবিষ্যদ্বাণীটি সত্য হয়ে উঠেছে, প্রকৃতির প্রতি আমার প্রচণ্ড ভালোবাসা রয়েছে।”

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর