বাংলা হান্ট ডেস্ক: আজকাল সমগ্র বিশ্বেই দুগ্ধজাত শিল্পের রমরমা চলছে। পাশাপাশি, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাহিদাও। এই ব্যবসায় খরচের তুলনায় লাভের পরিমান থাকে বহুগুণ বেশি। যে কারণে আমাদের দেশেও চাকরি ছেড়ে এই ব্যবসায় ঝোঁক বাড়ছে তরুণদের।
সাধারণত দুগ্ধ শিল্পে গরু, মহিষ বা ছাগল পালন করা হয়, যাদের দুধ বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। কিন্তু আজ আমরা আপনাদের এমন একটি ঘটনা জানাবো, যেখানে গাধার দুধ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা করছেন এক যুবক।
এই জন্য অবশ্যই দুগ্ধ শিল্পে নতুন বিপ্লব আনার কৃতিত্ব অ্যাবি বেবিকে দেওয়া যেতে পারে, যিনি মূলত কেরালার বাসিন্দা। ভারতের মত দেশে গাধা পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকেই অবাক করে দিয়েছেন অ্যাবি। যদিও, এই কাজ শুরু করতে গিয়ে অ্যাবিকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হলেও হাল ছাড়েননি তিনি।
বরং সাহসিকতার সাথে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এই কাজ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে অ্যাবি বেবি প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন। প্রথম থেকেই অ্যাবি ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছিলেন। তবে, দুগ্ধ শিল্পে আসার অনুপ্রেরণা তিনি পেয়েছিলেন তাঁর এক বন্ধুর কাছ থেকে। অ্যাবির বন্ধুরা লন্ডন থেকে ভারতে এসে মশা তাড়ানোর জন্য একটি স্টার্টআপ শুরু করেছিলেন।
এমতাবস্থায়, বন্ধুদের স্টার্টআপ দেখে, অ্যাবি নিজের ব্যবসা শুরু করার আইডিয়া পান এবং এরপরই তিনি এই কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রথম থেকেই অ্যাবি গরু, মহিষ বা ছাগল পালন করতে চাইতেন না। তাই, তিনি তাঁর ব্যবসার জন্য গাধাকেই বেছে নেন।
একটি আইটি কোম্পানিতে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন অ্যাবি। কিন্তু একসময়ে তিনি তাঁর চাকরি ছেড়ে এই ব্যবসা শুরু করেন। এরপরে, তিনি ২০০৬ সালে তাঁর খামারে গাধা পালন শুরু করেন। এই কাজের জন্য তাঁকে তার কেরালার বাড়িতে ফিরে যেতে হয়েছিল।
অবশ্য এই কাজের আগে অ্যাবি গাধা পালনের ব্যাপারে অনেক গবেষণা করেছিলেন। সেখান থেকেই তিনি জানতে পেরেছিলেন যে, প্রাচীন মিশরে রানিরা নিজেকে সুন্দর রাখতে গাধার দুধে স্নান করতেন। শুধু তাই নয়, বর্তমান সময়েও বাজারে গাধার দুধের চাহিদা অনেক।
এমতাবস্থায় ২০১৫ সালে, অ্যাবি বেবি সমগ্র দক্ষিণ ভারত ঘুরে বিভিন্ন জাতের ৩২ টি গাধা কিনেছিলেন এবং আড়াই একর জমিও কিনেছিলেন। যদিও, অ্যাবি বেবির জন্য এই কাজটি শুরু করা খুব কঠিন ছিল। কারণ তাঁকে গাইড করা বা নির্দেশ দেওয়ার মতো কেউ ছিল না।
এদিকে, শুরুতেই কোটি কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। এই টাকা তিনি আত্মীয়-স্বজন ও ভাইদের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নিয়েছিলেন। যদিও, লোকসানের মুখে পড়লেও হাল ছাড়েননি অ্যাবি। কারণ তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, একদিন এই কাজে অবশ্যই সফলতা পাবেন। এভাবে ধৈর্য্য ও পরিশ্রমের জেরে অ্যাবি আবারও খামারের কাজ শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে সাফল্যও পেতে থাকেন।
বর্তমানে তিনি গাধার দুধ থেকে প্রসাধনী পণ্য তৈরি করেন। যার মধ্যে রয়েছে বিউটি ক্রিম, শ্যাম্পু এবং সাবান। এই প্রসঙ্গে অ্যাবি জানিয়েছেন, “গাধার দুধ খেলে বা তা থেকে তৈরি পণ্য ব্যবহার করলে অনেক ধরনের রোগ দূর হয়। পাশাপাশি, ত্বকও সুন্দর হয় এতে।”
গাধার দুধ ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ। যার কারণে বাজারে এর দামও অনেক বেশি। গবেষকদের মতে, গাধার দুধে যক্ষ্মা, হাঁপানি, জন্ডিস এবং অ্যালার্জির মতো রোগ দূর করার ক্ষমতা রয়েছে। এদিকে, অ্যাবি বেবি প্রমাণ করেছেন যে, একজন ব্যক্তি যদি তাঁর মনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন তবে তিনি সবচেয়ে কঠিন কাজগুলিও সম্পাদন করতে পারেন। পাশাপাশি, তাঁর এই বিরল ব্যবসার পদ্ধতি অনুপ্রাণিত করবে সবাইকেই।