আমেরিকা থেকে ভারতে ফিরে শুরু করেন চাষ, এখন ১২ লাখের টার্নওভার! অবাক করবে তাঁর কাহিনি

Published On:

বাংলা হান্ট ডেস্ক: “কর্মসূত্রে যাঁরা বিদেশে যান, তাঁরা বিদেশেই থেকে যান”- এই প্রচলিত প্রবাদকে কার্যত ভুল প্রমাণ করেছিলেন তিনি। এমনকি, পাঞ্জাবের রাজবিন্দর সিং আমেরিকায় চাকরি করে থিতু হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও দেশের মাটির প্রতি তাঁর চরম আসক্তির কারণে তিনি কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতে ফিরে আসেন। এমতাবস্থায়, তাঁর এই সিদ্ধান্তে পরিবারের সদস্যরা অখুশি হলেও বর্তমানে তিনি চাষাবাদ করে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, আজ তাঁর মোট ৮ একর জমিতে আখ, আলু, হলুদ, সর্ষের মত ফসলের প্রাকৃতিক চাষাবাদ (Natural Farming) হচ্ছে। পাশাপাশি, তাঁর এই সাফল্যের কাহিনি (Success Story) অনুপ্রাণিত করবে সবাইকে।

এছাড়াও, তিনি গুড়, চিনি ও হলুদের গুঁড়োও তৈরি করে। যা বিক্রি করে দারুণ আয় হয়। এই প্রসঙ্গে রাজবিন্দর জানিয়েছেন যে, বর্তমানে তিনি প্রতি একরে ২ লক্ষ টাকা লাভ করছেন। পাশাপাশি, ন্যাচারাল ফার্মিংয়ের মাধ্যমে তিনি আম, পেয়ারা, ডালিম সহ একাধিক ফল গাছের চাষও করছেন।

আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসেন: ৪৪ বছর বয়সী রাজবিন্দর আজ চাষাবাদের মাধ্যমে প্রচুর উপার্জন করছেন। তবে, এর আগে তিনি প্রায় ৫ বছর যাবৎ আমেরিকায় বিভিন্ন কাজ করেন। কখনও ট্রাকচালক আবার কখনও কখনও হোটেলের ব্যবসায়ও যুক্ত থেকেছেন তিনি। যদিও, তিনি বরাবরই তাঁর গ্রামকে খুব ভালোবাসতেন। এরপর রাজবিন্দর ২০১২ সালে দেশে ফিরে এসে হোটেল ব্যবসা শুরু করেন। তবে, সেখানে নির্ধারিত সাফল্য পান নি তিনি। আর তারপরেই চাষাবাদে নিযুক্ত হন রাজবিন্দর।

রাজবিন্দর জানিয়েছেন, আগে তিনি ৮ একর জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে চাষ করতেন, কিন্তু ২০১৭ সালে তিনি প্রাকৃতিক ভাবে চাষ করে আখ ফলিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে সবুজ সার ও গোবর ব্যবহার করে ৫ একর কৃষি জমিতে আখসহ ৩ হাজার ফলের গাছ রোপণ করেন তিনি। তারপর প্রাকৃতিক চাষের মাধ্যমে আখ এবং হলুদ উৎপাদনের পর তা প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রক্রিয়াকরণ মেশিনও কিনে ফেলেন রাজবিন্দর।

আখ থেকে আয় হয়েছে ৮ লক্ষ টাকা: রাজবিন্দর প্রতি বছর প্রায় ১০ টন গুড় উৎপাদন করেন। যা থেকে তিনি ৮ লক্ষ টাকা আয় করেন। এদিকে, আখ ছাড়াও রাজবিন্দর আলু, হলুদ, সর্ষে, পেঁয়াজ এবং অন্যান্য সবজিরও চাষ করেন।

আলু চাষের জন্য, তিনি বেড এবং মালচিং পদ্ধতি অবলম্বন করেন। যার ফলে আলু মাটির ভিতরে না বেড়ে মাটির উপরে অর্থাৎ কৃত্রিম “বেড”-এর ভিতরে জন্মায়। এর উপরে মালচিং দেওয়া হয়। যার দরুন মাটিতে আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং ৩০ শতাংশ পর্যন্ত জল সাশ্রয় হয়। এর পাশাপাশি রাজবিন্দর এখন গো-পালনের মাধ্যমেও দুধ এবং গোবর বিক্রি করে মোটা টাকা উপার্জন করছেন।

অনলাইনে বিক্রি করেন কৃষিজাত পণ্য: রাজবিন্দর সিং-এর চাষাবাদের পাশাপাশি পণ্য বাজারজাত করার পদ্ধতিও বাকি কৃষকদের থেকে একেবারেই আলাদা। তিনি অনলাইন মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে তাঁর খামারের গাছের ফল সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেন। এখন, পাঞ্জাব ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র থেকেও অনেক গ্রাহক তাঁর সাথে যুক্ত রয়েছেন। উল্লেখ্য যে, পরিবেশের কথা মাথায় রেখে তিনি তাঁর ক্ষেতে কোথাও কোনো প্লাস্টিকজাত পণ্যও ব্যবহার করেন না বলে জানা গিয়েছে। আর এভাবেই চাষ করে রাজবিন্দর প্রতি বছর ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করছেন।

Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

X