বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমেরিকা (America) এবং চিনের (China) সম্পর্ক ক্রমশ প্রভাবিত হচ্ছে। বর্তমানে, চিন সুপার পাওয়ার হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমেরিকা এটা চায়না। তাই তারা চারদিক থেকে চিনকে কড়া ধাক্কা দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, চিনের বিরুদ্ধে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে আমেরিকা। এই কারণে মেজাজ হারাচ্ছে ড্রাগন। প্রথমে তাইওয়ানকে সমর্থন করা, তাকে অস্ত্র দেওয়া এবং এখন তিব্বতের বিষয়ে হস্তক্ষেপ, এইসব ঘটনার মাধ্যমে আমেরিকা চিনকে সমস্যায় ফেলেছে। এদিকে, চিনের প্রবল বিরোধিতা সত্বেও আমেরিকা প্রথমে “তিব্বত নীতি ও সমর্থন আইন ২০২০” পাশ করে। এখন মার্কিন পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল দলাই লামার সঙ্গে দেখা করতে ধর্মশালায় পৌঁছেছে। ন্যান্সি পেলোসি সহ মার্কিন পার্লামেন্টের সদস্যরা বুধবার তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামার সঙ্গে দেখা করেছেন।
মূলত, চিন দালাই লামাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে বিবেচিত করে। পাশাপাশি, চিন চায় না আমেরিকার কোনো প্রতিনিধি দালাই লামার সঙ্গে দেখা করুক বা তিব্বতের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক। এদিকে, চিনের বিরোধিতা উপেক্ষা করে, প্রভাবশালী মার্কিন সাংসদদের একটি দল বুধবার ভারতীয় হিমালয়ে তাঁর বাড়িতে নির্বাসিত তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামার সাথে দেখা করেছেন। ম্যাককল ছাড়াও, ওই দলে মার্কিন পার্লামেন্টের আরও ছয়জন বিশিষ্ট সদস্য রয়েছেন। যাঁর মধ্যে ন্যান্সি পেলোসি, ম্যারিওনেট মিলার, গ্রেগরি মিক্স, নিকোল ম্যালিওটাকিস, জিম ম্যাকগভর্ন এবং অ্যামি বেরা রয়েছে।
আমেরিকা একাধিক ধাক্কা দিয়েছে: এর আগে চিন বড় ধাক্কা তখন পেয়েছিল যখন আমেরিকা “তিব্বত নীতি ও সহায়তা আইন ২০২০” পাশ করে। এখন শুধু এটিতে জো বাইডেনের স্বাক্ষর বাকি আছে। বাইডেনের অনুমোদন পেলেই এটি আইনের রূপ নেবে। সাক্ষাৎ করতে আসা আমেরিকান আইনপ্রণেতারাই দালাই লামার সাথে তিব্বত নীতি সংক্রান্ত আমেরিকান বিল নিয়েও আলোচনা করবেন। এই বিলের উদ্দেশ্য হল তিব্বত বিরোধ সমাধানে চিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। আমেরিকা এই বিলের মাধ্যমে বলার চেষ্টা করছে যে তারা তিব্বতের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।
কেন টেনশনে চিন: মার্কিন প্রতিনিধি দলের এই সফরকে কেন্দ্র করে চিন প্রবল চিন্তার মধ্যে রয়েছে। বেজিং দালাই লামাকে বিপজ্জনক বিভাজনকারী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে অভিহিত করে। চিন এই সফর ও বিল নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই কারণেই চিন তড়িঘড়ি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিলে স্বাক্ষর না করতে বলেছে। এছাড়াও, আমেরিকান আইন প্রণেতাদের দালাই লামা এবং তাঁর দলের ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ বা দেখা না করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাই দিল শিক্ষা? এবার ৩ গুণ বেশি লোকো পাইলট নিয়োগ করবে রেল
আমেরিকাকে হুমকি দিয়েছে: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, চিন তিব্বতকে “শিজাং” বলে। পাশাপাশি, তাঁরা শিজাংকে চিনের অংশ বলে। এমতাবস্থায়, চিন মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মার্কিন পক্ষকে তিব্বতের স্বাধীনতাকে সমর্থন না করার আহ্বান জানিয়েছে। ভারতে চিনা দূতাবাসের মুখপাত্র বলেছেন যে চিন তার সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং স্বার্থ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেবে। এদিকে, চিন স্পষ্টভাবে বলেছে, আমেরিকা যেন এটা করে বিশ্বকে ভুল বার্তা না দেয়। আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করে চিন বলেছে, জিনজিয়াং ইস্যু সম্পূর্ণভাবে চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং চিন কোনো বাহ্যিক হস্তক্ষেপ করতে দেবে না। চিনকে নিয়ন্ত্রণ ও দমন করার জন্য কোনো ব্যক্তি এবং কোনো শক্তির জিনজিয়াংকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা উচিত নয়। পাশাপাশি, এই ধরণের প্রচেষ্টা কখনোই সফল হবে না বলেও জানিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন: ৮০০ বছর পর প্রাণ ফিরে পেল নালন্দা ইউনিভার্সিটি! নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
দালাই লামা কি বাইডেনের সাথে দেখা করবেন: উল্লেখ্য যে, দলাই লামা ১৯৫৯ সালে তিব্বতে চিনা শাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর ভারতে চলে আসেন। দালাই লামা এবং অন্যান্য দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে যেকোনও আলোচনাতেই চিনা কর্মকর্তারা বিরক্ত হয়েছেন। দলাই লামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ববর্তী সফরের সময়ে রাষ্ট্রপতি সহ আমেরিকান কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন। কিন্তু, ২০২১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জো বাইডেনের সাথে তিনি দেখা করতে পারেননি। তবে, দলাই লামাকে তাঁর চিকিৎসার জন্য চলতি সপ্তাহে আমেরিকা যেতে হবে। যদিও, তিনি তখন কোনো বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন কি না তা স্পষ্ট নয়।