ভারত ও UAE-র মধ্যে স্বাক্ষরিত হল গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, বিপদে পাকিস্তান

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ফের বড়সড় ধাক্কা খেল পাকিস্তান। এমনিতেই এখন সারা বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের আবহের দিকে। এমতাবস্থাতেই, পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে ভারত। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ওমানের নৌবাহিনীর প্রধান এবং সৌদির সেনাপ্রধান ভারত সফরে এসেছেন।

শুধু তাই নয়, সবচেয়ে বড় কথা হল ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মধ্যে একটি “মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি” স্বাক্ষরিত হয়েছে। এদিকে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, স্বাক্ষরিত এই চুক্তি ভারতকে ব্যাপকভাবে উপকৃত করার পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়ায় কূটনৈতিকভাবে যেমন শক্তিশালী করবে ঠিক তেমনি এর প্রত্যক্ষ প্রভাব সরাসরি পাকিস্তানের ওপরেও পড়বে।

জানা গিয়েছে, এই চুক্তির আওতায় ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহী একে অপরের পারস্পরিক বাণিজ্যের পরিমান ১০০ বিলিয়ন ডলারের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চলেছে। তবে, এই বাণিজ্যে তেল অন্তর্ভুক্ত থাকবেনা। এদিকে, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সাথে ভারতের তেল-বহির্ভূত বাণিজ্য প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের।

এমতাবস্থায়, এই চুক্তিটি ভারতের জন্য অত্যন্ত লাভজনক হতে চলেছে। এর কারণ হল সংযুক্ত আরব আমিরশাহী তেল ছাড়া অন্য কোনও বিশেষ উল্লেখযোগ্য দ্রব্য সেভাবে রপ্তানি করে না। অন্যদিকে ভারত টেক্সটাইল, রত্ন-অলঙ্কার, হস্তশিল্পর সাথে সম্পর্কিত পণ্য ছাড়াও চামড়া এবং জুতো বিপুল পরিমাণে রপ্তানি করে।

এছাড়াও, এই চুক্তির পর সংযুক্ত আরব আমিরশাহী আগামী কয়েক বছরে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পাইপলাইন প্রজেক্ট (NIP)-এর অধীনে ভারতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলেও জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, NIP-র অধীনে ভারত ২০২৫ সালের মধ্যে পরিকাঠামো খাতে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ১১১ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।

এই বিনিয়োগের মাধ্যমে অত্যাধুনিক সড়ক, রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, বিমানবন্দর, বন্দর এবং অন্যান্য লজিস্টিক সুবিধা তৈরি হবে। আর এই পরিকল্পনাতেই UAE ভারতের প্রধান অংশীদার হতে চলেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মধ্যে একটি ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তিকে বলা হচ্ছে ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (CEPA)। পাশাপাশি, এই চুক্তি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য কারণ এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সময়ে কোনো দেশের সঙ্গে প্রথম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। এই প্রসঙ্গে বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন যে, “এই চুক্তির পর প্রথম দিন থেকেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে ভারতীয় স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত ৯০ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করা সহজ হবে। এছাড়াও, ভারতের রপ্তানির ৮০ শতাংশ UAE-তে শুল্কমুক্ত করা হবে।”

পাশাপাশি, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার প্রথমবারের মতো এমন একটি দেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য নীতির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যার সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারত লাভজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। এদিকে, এই চুক্তিতে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত হবে পাকিস্তান। এমনিতেই বর্তমানে বিশাল বৈদেশিক ঋণের তলায় থাকা পাকিস্তান আরও বিদেশী ঋণ পাওয়ার জন্য ছুটছে।

download 12 2

পাশাপাশি, ইসলামিকরণের বিষয়টিকে খাড়া করে ক্রমশ ইসলামিক দেশ ও ভারতের মধ্যে দূরত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছে পাকিস্তান। কিন্তু পাকিস্তান এটা বুঝতে পারছে না যে, বর্তমান সময়ে বৈদেশিক সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অর্থনৈতিক অগ্রগতি। এমনিতেই আগামী কয়েক বছরে বিশ্বে তেলের পরিমান ক্রমশ কমবে। ঠিক সেই কারণেই তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো তেল থেকে তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাইছে।

এমতাবস্থায়, ভারতের মত গুরুত্বপূর্ণ দেশে ক্রমশ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বেড়েই চলেছে। যে কারণে যে কোনো দেশই পাকিস্তানের পরিবর্তে ভারতের পাশে দাঁড়াবে। বিশেষ করে এই তালিকায় প্রথমসারিতে থাকবে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলি।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর