বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমানে প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (PLI) যোজনা ভারতে কুটির শিল্পের প্রসারের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই স্ব-নির্ভর ভারত মিশনের অধীনে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নতির জন্য ১৪ টি মূল সেক্টরের ক্ষেত্রে ১.৯৭ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ের ঘোষণা করেছেন। এমতাবস্থায়, ভারতের উৎপাদন ও রপ্তানি ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে, বস্ত্রশিল্প ছিল PLI প্রকল্পের অধীনে অনুমোদিত ১৪ টি প্রধান ক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম একটি। এই পরিস্থিতিতে মনে করা হচ্ছে ভারতীয় বস্ত্রশিল্প PLI স্কিমের সুবাদে একটি গতি লাভ করবে। যার ফলে বাংলাদেশি বস্ত্রশিল্পও পিছনে পড়তে পারে।
বস্ত্রশিল্পের জন্য PLI:
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোরে সিমা (সাউদার্ন ইন্ডিয়া মিলস অ্যাসোসিয়েশন) টেক্সফেয়ার এক্সপোর উদ্বোধনে জানিয়েছেন, “আমরা পোশাক উৎপাদন খাতকে সমর্থন করতে আগ্রহী এবং আমরা আরও একটি PLI প্রকল্প নিয়ে আসতে চাইছি। কেন্দ্র ন্যাশনাল টেকনিক্যাল টেক্সটাইল মিশনের অধীনে প্রতিরক্ষা কর্মীদের জন্য উন্নতমানের ইউনিফর্ম তৈরির জন্য কোয়েম্বাটোর-ভিত্তিক সাউথ ইন্ডিয়া টেক্সটাইল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (SITRA)-এর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২০ সালে বস্ত্রশিল্পের জন্য PLI প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ১০,৬৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। এই স্কিমটি মূলত, দু’টি ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে ন্যূনতম ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং ন্যূনতম ৬০০ কোটি টাকার টার্নওভার প্রয়োজন ছিল এবং দ্বিতীয়ভাগে ন্যূনতম ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ২০০ কোটি টাকার ন্যূনতম টার্নওভার দরকার ছিল।
এমতাবস্থায় দ্বিতীয় পর্বের PLI চালু করার কারণ হল, বাংলাদেশি বস্ত্রশিল্প কম ইনপুট খরচে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছে। যে কারণে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সরকারকে পদ্ধতিগত সংস্কার প্রবর্তন করতে হবে। আর সেই কারণেই বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল অর্থাৎ তন্তু থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত কৌশলেও পরিবর্তন নিয়ে আসা প্রয়োজন।
বাজার থেকে বাংলাদেশি পোশাক বাদ দেওয়ার কৌশল:
বাংলাদেশ যখন অখন্ড ভারতের অংশ ছিল তখন থেকেই এই অঞ্চলটি ঐতিহ্যগতভাবে মসলিন, সিল্ক এবং সুতির কাপড়ের জন্য বিখ্যাত। এমতাবস্থায়, দক্ষতার উপর ভিত্তি করে, সরকার পদ্ধতিগত কিছু সংস্কার করে দেশকে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসে যে আমরা এখন আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ পণ্য ঘরোয়া ভাবেই তৈরি করতে পারি।
কম শ্রম খরচ, দুর্বল স্থানীয় মুদ্রা এবং ঐতিহ্যগত দক্ষতা এই শিল্পটিকে বিশ্বের পোশাক রপ্তানি বাজারে একটি পথ দেখিয়েছে। বর্তমানে, ঘরোয়া ভাবে উৎপাদিত পোশাক এবং বস্ত্রশিল্প দেশের জিডিপিতে ৫ শতাংশ অবদান দেয়। পাশাপাশি, এখন এটি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক। এছাড়াও, এই শিল্প ভারতে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মানুষের জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ করেছে।
এদিকে বাংলাদেশের মতো, সস্তা ইনপুট খরচ এবং কাঁচামালের বিপুল প্রাপ্যতার কারণে ভারতের একটি সুবিধা রয়েছে। বস্ত্রশিল্পের জন্য পূর্বে ঘোষিত PLI স্কিমটিতে উচ্চ বিনিয়োগের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এমতাবস্থায়, PLI-এর অধীনে লাভ পাওয়ার জন্য ১০০ থেকে ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের সীমার ক্ষেত্রে একাধিক মাইক্রো গার্মেন্ট শিল্পকে বাদ দেওয়ায় স্কিমের সুযোগ কিছুটা সীমিত হয়।
কিন্তু, PLI 2.0-র সর্বশেষ আপডেট অনুসারে, এই স্কিমটি আগের ১০০ কোটি টাকা থেকে ২ কোটিতে কমিয়ে দেবে এবং ফাইবার ও প্রযুক্তিগত টেক্সটাইল ছাড়াও একাধিক পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে এটি বাজারকে প্রসারিত করবে এবং প্রচুর সংখ্যক MSME-কে সুযোগ দেবে। যা পূর্বের PLI-তে বাদ পড়েছিল। মনে করা হচ্ছে যে, এর ফলে ভারতের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার ভারতীয় বস্ত্রশিল্পকে আরও সুবিধা দেবে এবং পদ্ধতিগতভাবে বাংলাদেশি বস্ত্রশিল্পের প্রতিযোগিতাকে দূর করবে।