বাংলা হান্ট ডেস্ক: ফের রাজ্যে (West Bengal) ঘটল বড়সড় আর্থিক প্রতারণার (Financial Fraud) ঘটনা। যেটি সামনে আসার পরেই অবাক হয়েছেন প্রত্যেকেই। মূলত, স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে এবং মিড-ডে মিলের সামগ্রী মজুত রাখার বরাত পাইয়ে দেওয়ার নামে আমাদের রাজ্যেই তোলা হয়েছিল কোটি কোটি টাকা। এমতাবস্থায়, অনেকেই মিড-ডে মিলের চাল, ডাল, আলু রাখবেন বলে দোকানঘর কিনে ফেলেছিলেন। আবার কেউ কেউ, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সামগ্রী রাখার জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন ঘর।
যদিও, টাকা দেওয়ার পরেও একটার পর একটা দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো কাজ না হওয়ায় এই প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে। আর তারপরেই অভিযোগ ওঠে যে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বিভিন্ন সামগ্রিক মজুত রাখার বরাত পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই একজনের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। তবে, এখানেই শেষ নয়। বরং, আরও একাধিকজনের কাছ থেকে লক্ষাধিক করে টাকা তোলা হয়েছে বলেও অভিযোগ সামনে এসেছে।
যার ফলে, সামগ্রিকভাবে প্রায় ছ’কোটি টাকা প্রতারণার ঘটনা ঘটে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে মোট ৩ জনকে। এর পাশাপাশি, আরও ৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, এই প্রতারণার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর থানায় গত ১৭ মে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। সেখানে অভিযোগকারীর দাবি ছিল যে, প্রতারকদের মধ্যে একজন নিজেকে IAS অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে রাজ্য সরকারের কাজে নিযুক্ত বলে দাবি করে।
তারপরেই অভিযোগকারীর কাছ থেকে মিড-ডে মিলের সামগ্রী মজুত রাখার বরাত পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। পাশাপাশি, প্রমাণ হিসেবে রবার স্ট্যাম্প মারা একটি কাগজও দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারী। এরপর তদন্তে নেমে পুলিশ গত মঙ্গলবার বলরাম বসাক এবং মীনাক্ষী বসাক নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে। পাশাপাশি, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার মাধ্যমে তৃতীয় ব্যক্তি শিবশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের তিনজনকেই বাবুইহাটি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি, আরও ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কাঙালিপনায় কমল তেজ! “নতুন ভারত ঘরে ঢুকে মারছে”, জাতিসংঘে কান্নাকাটি পাকিস্তানের
এমতাবস্থায়, পুলিশ ধৃতদের জেরা করে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, এই চক্রের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ওই দলটি কমপক্ষে ৬০ জনের কাছ থেকে টাকা তুলে তাঁদের সাথে প্রতারণা করেছে। মূলত, স্কুলে চাকরি দেওয়ার পাশাপাশি মিড ডে মিলের সামগ্রী মজুত রাখার বরাত পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়েই এই টাকা তোলা হয়। এদিকে, পুলিশ দাবি করেছে যে টাকা তোলার পরে চাকরি পাকা হওয়ার কিংবা সামগ্রী মজুদ রাখার বরাতের ভুয়ো কাগজ দেওয়া হত। ধৃতদের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে ভুয়ো রাবার স্ট্যাম্প। তবে, তদন্ত নেমে পুলিশের খটকা লাগছে আরেকটি বিষয়ে।
আরও পড়ুন: চুনোপুঁটি USA-র কাছেও হার বাংলাদেশের! T20 বিশ্বকাপের আগে ল্যাজেগোবরে টাইগাররা
মূলত, পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই দলটি স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে সংশ্লিষ্ট স্কুলে প্রতারিতদের নিয়েও গিয়েছিল। এমতাবস্থায়, স্কুলের কেউ এই চক্রের সাথে জড়িত কিনা সেই বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে, সামগ্রিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, ‘‘স্কুলের কেউ এই ঘটনার সাথে জড়িত কিনা এখনও এই বিষয়ে কোনো প্রমাণ না মিললেও সবদিক দেখা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রেই ভুয়ো কাগজ তৈরি করে এই কাজ করা হয়। এক্ষেত্রেও সেই রকমই ভুয়ো কাগজ তৈরি করে সরকারের তরফে পরিদর্শন করা হচ্ছে বলে প্রতারিতদের স্কুলে ঘোরানো হয়ে থাকতে পারে।”