এক জায়গায় মিলবে সবকিছু! সুপার অ্যাপ লঞ্চ করার প্রস্তুতি গৌতম আদানির

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমানে এশিয়া তথা ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনকুবের গৌতম আদানি (Gautam Adani) একের পর এক বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হচ্ছেন। জানা গিয়েছে, এবার তিনি সুপার অ্যাপ (Super App) লঞ্চ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মূলত, সুপার অ্যাপগুলির সাহায্যে একক প্ল্যাটফর্মে একজন ব্যবহারকারী একাধিক পরিষেবার সুবিধা পেতে পারেন। অর্থাৎ, সুপার অ্যাপ থাকলে আপনাকে আর বিভিন্ন অ্যাপে ঢুঁ মারতে হবে না। যার ফলে সুপার অ্যাপ মারফত আপনি কেনাকাটা, গ্রোসারি, ফ্যাশন, এডুকেশন, রাইড ও স্বাস্থ্যসেবার মতো পরিষেবাগুলি এক জায়গায় পেতে পারবেন। এমতাবস্থায়, গৌতম আদানি এই বাজারটি দখল করার জন্য বড়সড় পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

গৌতম আদানির এই সুপার অ্যাপ আগামী ৩-৬ মাসের মধ্যে লঞ্চ হবে: এই প্রসঙ্গে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে যে, গৌতম আদানি বিমানবন্দরের যাত্রীদেরকে আদানি গ্রুপের অন্যান্য পরিষেবার সাথে সংযুক্ত করতে আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে একটি “সুপার অ্যাপ” লঞ্চ করার পরিকল্পনা করছেন। যেটি একটি ইন-হাউস স্টার্টআপ দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, ওই প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে যে, এই মোবাইল অ্যাপটি আদানির বিমানবন্দরের যাত্রীদের, গ্রুপের অন্যান্য পরিষেবার সাথে সংযুক্ত করতে সক্ষম হবে। মূলত, গৌতম আদানি গত সপ্তাহে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, ওই পোর্টাল বা অ্যাপটি আগামী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে লঞ্চ হতে পারে।

কিভাবে লাভবান হবেন আদানি: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যেই দেশের সাতটি বিমানবন্দর চালানোর পাশাপাশি, গৌতম আদানি গ্রুপ মুম্বাইতে দ্বিতীয় ফ্যাসিলিটির জন্য একটি নতুন টার্মিনাল এবং রানওয়ে তৈরি করছে। বর্তমানে ভারতের বিমান চলাচলের ২০ শতাংশ আদানি গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এদিকে, এমনও খবর আছে যে, যেসব শহরে আদানির নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দর রয়েছে সেখানে ট্যাক্সি ফ্লিটেও বিনিয়োগ করা হচ্ছে। রিপোর্ট অনুসারে, গৌতম আদানির এই সুপার অ্যাপটি আদানি গ্রুপের দ্বারা প্রদত্ত অন্যান্য পরিষেবার সাথে বিমানবন্দরগুলির যাত্রীদেরও সংযুক্ত করবে। যার ফলে ডাউনলোড সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে।

সুপার অ্যাপের ধারণাটি এসেছে চিন থেকে: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফাইন্যান্স ছাড়াও অনলাইন শপিং, পেমেন্ট, বিনোদনের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস দেওয়ার মডেলটি এসেছে চিন থেকে। সেখানে আলিবাবা গ্রুপ হোল্ডিং লিমিটেড, টেনসেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড এবং মেইতুয়ান ইতিমধ্যেই এই কাজ করেছে।

গৌতম আদানির সুপার অ্যাপের রাস্তা সহজ ছিল না: করোনার মত ভয়াবহ মহামারীর সময়ে বিশ্বজুড়ে অ্যাপ ব্যবসা এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ব্যবসায় একটি শক্তিশালী বৃদ্ধি হয়েছিল। তবে এই পথটি গৌতম আদানির পক্ষে এত সহজ ছিল না। কারণ, টাটা গ্রুপ এবং রিলায়েন্স জিও ইতিমধ্যেই এই ক্ষেত্রে ভারতে তাদের স্থান বজায় রেখেছে। টাটা গ্রুপের সুপার অ্যাপ Tata Neu এবং মুকেশ আম্বানির JioMart ইতিমধ্যেই গ্রাহকদের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

ই-কমার্স ব্যবসার জন্য চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ শুরু হয়েছে: এদিকে, কোভিডের বাড়বাড়ন্ত শেষ হওয়ার পরে, এখন ই-কমার্স সেক্টরগুলি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারছে না। উদাহরণস্বরূপ, এডুকেশন, বিউটি এবং ফ্যাশনের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় লাভের অঙ্ক কমেছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি অ্যামাজন তার টেস্ট প্রিপারেশন বিজনেস এবং মিল ডেলিভারি বিজনেস বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে, ভারতের বৃহত্তম ডিজিটাল পেমেন্ট প্রোভাইডার পেটিএম তার আইপিও আনার এক বছরের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বিরাট পতন পরিলক্ষিত করেছে। এমনকি, এটি একটি মেগা আইপিওর প্রথম বছরে সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে।

আদানির সুপার অ্যাপ কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে: যদিও বর্তমান যুগে অনলাইন গ্রোসারি শপিংয়ের রমরমা চলছে। কিন্তু টাটার সুপার অ্যাপটি নিয়ে খুব একটা উৎসাহব্যঞ্জক খবর নেই। ইতিমধ্যেই Tata Neu প্রায় ১৫ মিলিয়ন বার ডাউনলোড করা হয়েছে। তবে, এটি একটি ছোট সংখ্যা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। কারণ দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৬০০ মিলিয়ন। এমতাবস্থায়, আদানি গ্রুপের সুপার অ্যাপটি অবশ্যই আম্বানির ডিজিটাল ব্যবসার কাছ থেকেও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে। কারণ মুকেশ আম্বানির Jio মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কোম্পানির প্রায় ৪২৮ মিলিয়ন টেলিকম ব্যবহারকারীর কাছে অ্যাক্সেস রয়েছে।

goutam adani

গ্লোবাল মার্কেটে সুপার অ্যাপ প্লেয়ার কারা: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, চিনের WeChat, Alipay, ভারতের Paytm, ইন্দোনেশিয়ার গোটো, সিঙ্গাপুরের গ্র্যাব, ভিয়েতনামের জালো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কাকাও ছাড়াও আরও একাধিক জনপ্রিয় সুপার অ্যাপ ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে উপস্থিত রয়েছে। তবে ভারতে সুপার অ্যাপের ব্যবসায় কতটা সুযোগ রয়েছে, তা আগামী দিনেই জানা যাবে।

ad

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর