বাংলা হান্ট ডেস্ক: ফের বড়সড় সাফল্যের পথে এগোচ্ছে ভারত (India)। শুধু তাই নয়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চিনকে (China) টক্কর দিয়ে ম্যানুফ্যাকচারিং (Manufacturing) খাতে এগিয়ে যেতে পারে আমাদের দেশ। কারণ ভারতে উৎপাদন খরচ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই প্রসঙ্গে US News And World Report সূত্রে জানা গিয়েছে যে, চিন ও ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে উৎপাদন খরচে বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা দেশ হয়ে উঠেছে ভারত।
ভারত ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে: মূলত, সবচেয়ে সস্তায় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এমতাবস্থায়, এই সমীক্ষার ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য যে, কেন্দ্রীয় সরকার ক্রমাগত ভারতকে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করার চেষ্টা করছে। গত ২ বছর আগে করোনার প্রথম ঢেউ চলাকালীন আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মাধ্যমে এই মিশনটি শুরু হয়েছিল। এর জন্য বিদেশি সংস্থাগুলিকে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (PLI)-এর মত স্কিমের মাধ্যমে বিশ্বের একাধিক বড় কোম্পানিও ভারতে উৎপাদন শুরু করেছে। এছাড়াও, ভারতের উৎপাদন খাতে Compliance-এর বোঝা কমে যাওয়ায় একটি বড় সুবিধা মিলেছে।
সমীক্ষায় মোট ৮৫ টি দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল: US News And World Report মোট ৭৩ টি প্যারামিটারে ৮৫ টি দেশকে মূল্যায়ন করেছিল। এই বৈশিষ্ট্যগুলি ১০ টি সাব-সেগমেন্টে বিভক্ত ছিল। এর মধ্যে ছিল সাহসিকতা, তৎপরতা, উদ্যোক্তা, ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত দিক, সামাজিক উদ্দেশ্য এবং জীবনযাত্রার মানের মত মাপদন্ডগুলি। তবে, উৎপাদনের খরচ কমানোর ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল করলেও ভারত অন্যান্য অনেক প্যারামিটারে বাকি দেশগুলির থেকে পিছিয়ে রয়েছে। ভারত “Favorable Tax Environment” সেগমেন্টে ১০০-র মধ্যে ১৬.২ এবং “Not Corrupt” বিভাগে মাত্র ১৮.১ পয়েন্ট পেয়েছে। পাশাপাশি, “অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল” (Economically Stable) সাব-সেগমেন্টে আমাদের দেশ মাত্র ৯.৯ স্কোর করেছে। অন্যদিকে স্বচ্ছ সরকারি নীতির ক্ষেত্রে ভারত পেয়েছে মাত্র ৩.৫ পয়েন্ট। এছাড়াও, “জীবনের গুণমান” (Quality of Life) বিভাগে ভারতের অবস্থা খুবই খারাপ এবং এর সাব-সেগমেন্ট অর্থাৎ, “Income Equality”-তে ভারত মাত্র ১.৯ পয়েন্ট পেয়েছে। পাশাপাশি, নিরাপত্তাতে ৪.৩ এবং Well-Develpoed Public Health System-এ ভারত পেয়েছে ২.৩ স্কোর।
উৎপাদন খরচে ভারত চিন-ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে: মোট ৮৫ টি দেশের ওই তালিকায় ভারত সামগ্রিকভাবে ৩১ তম স্থানে রয়েছে। অপরদিকে, ভারত “ওপেন ফর বিজনেস” বিভাগে ৩৭ তম স্থানে রয়েছে। এই সেগমেন্টের সাব-ক্যাটাগরি ছিল উৎপাদন খরচ, যেটিতে ভারত ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। উল্লেখ্য যে, “ওপেন ফর বিজনেস” সেগমেন্টে চিন ১৭ তম স্থানে রয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচের দিক থেকে চিন ভারতের থেকে পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পাশাপাশি ভিয়েতনাম উৎপাদন খরচের নিরিখে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এছাড়াও, “ওপেন ফর বিজনেস” ক্যাটাগরিতে এই দেশ ৪৭ তম স্থানে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
তালিকার শীর্ষে রয়েছে সুইজারল্যান্ড: সামগ্রিকভাবে, সমস্ত প্যারামিটারের স্কোরের ভিত্তিতে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে সুইজারল্যান্ড। মূলত, জার্মানি, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইডেনকে পেছনে ফেলে সুইজারল্যান্ড এই র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে রয়েছে।
ভারতের কাছে রয়েছে বড় সুযোগ: গত কয়েক বছরে চিন তার উৎপাদনের ভিত্তিতে উন্নতি করলেও ভারত পরিষেবা খাতে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। এদিকে, করোনার পর যেভাবে বিশ্বের সমীকরণ বদলেছে এবং ভারত তার উৎপাদন খাতকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। মূলত, পরিষেবা খাতে এই বৃদ্ধির কারণ হল ভারতে ইংরেজি জানা তুলনামূলক সস্তার “ম্যান পাওয়ার”। যাঁরা ভবিষ্যতে একই ভাবে কাজ করে দেশের বৃদ্ধিতে অবদান রাখবেন। এমতাবস্থায়, যদি ভারত উৎপাদনের ক্ষেত্রে সত্যিই চিনকে ছাড়িয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। পাশাপাশি, এরপরে “ব্যাক অফিস অফ দ্য ওয়ার্ল্ড”-এর পাশাপাশি ভারত “ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টরি” খেতাবও পেতে পারে।