বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খবর সামনে এসেছে। এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা এয়ারবাসের (Airbus) উর্ধ্বতন আধিকারিকদের মতে, ২০২৪ সালের নভেম্বরের মধ্যে গুজরাটের (Gujarat) ভাদোদরায় একটি সম্পূর্ণ সচল কারখানা স্থাপন করা হবে। যেখান থেকে ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ ভারতে তৈরি C295 সামরিক পরিবহণ বিমানের উৎপাদন শুরু হবে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে, ভাদোদরাতে তৈরি কারখানা স্পেনের সেভিলে অবস্থিত বিশাল ১.২ মিলিয়ন বর্গমিটারের এয়ারবাস কারখানার মতো হবে। শুধু তাই নয়, ভারতের প্রথম “মেক ইন ইন্ডিয়া” অ্যারোস্পেস কার্যক্রমের আওতায় বেসরকারি ক্ষেত্রে এই বিমানটি তৈরি করা হবে।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, দীর্ঘদিন ধরে ভারতে সামরিক বিমানের উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (HAL) একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, ভারত ২১.৯৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে IAF-এর পুরোনো Avro বিমানের বহর প্রতিস্থাপনের জন্য ৫৬ টি এয়ারবাস C295 বিমানের অধিগ্রহণের চুক্তি সম্পন্ন করে। এই চুক্তির অধীনে, এয়ারবাস সেভিলে তার ফাইনাল অ্যাসেম্বলি লাইন থেকে “ফ্লাই-অ্যাওয়ে” অবস্থায় ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে প্রথম ১৬ টি বিমান হস্তান্তর করবে। বাকি ৪০ টি বিমান ভারতে তৈরি এবং অ্যাসেম্বল করা হবে। যেটি হবে Tata Advanced Systems Limited (TASL)-এর ভাদোদরার কারখানায়। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে TASL এবং এয়ারবাসের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
এখন ভারতেও এয়ারবাসের ফাইনাল অ্যাসেম্বলি লাইন থাকবে: বর্তমানে, C295 বিমানের একমাত্র ফাইনাল অ্যাসেম্বলি লাইন সেভিলে অবস্থিত। যেটি এয়ারবাস A400 বিমানও তৈরি করে। তবে, এই প্রথমবারের মতো এয়ারবাসের অন্য কোনো দেশে একটি সম্পূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থা থাকব। এই প্রসঙ্গে C295 প্রোগ্রামের প্রধান জর্জ টেমারিট জানিয়েছেন, “এই প্রথম এয়ারবাস স্পেনের বাইরে সম্পূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি করছে। কিছু অন্যান্য দেশে ফাইনাল অ্যাসেম্বলি লাইন অথবা প্রি-ফাইনাল অ্যাসেম্বলি লাইন রয়েছে। কিন্তু ফুল প্রোডাকশন সিস্টেম অর্থাৎ সম্পূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থা আর কোথাও নেই।”
উল্লেখ্য যে, সেপ্টেম্বরে ভারতে সরবরাহ করা প্রথম C295 বিমানটি মে মাসে প্রথম উড়ান সম্পন্ন করে। পাশাপাশি, দ্বিতীয় বিমানটি আগামী বছরের মে মাসে ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে হস্তান্তর করার জন্য এখানে রাখা হচ্ছে। তারপরে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এয়ারবাস দ্বারা প্রতি মাসে একটি বিমান সরবরাহের সময়সূচী রয়েছে। এদিকে, ভারতের ভাদোদরার কারখানায় তৈরি করা ৪০ টি বিমানের ডেলিভারি ২০২৬ থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে ভারতীয় বিমান বাহিনীকে দেওয়া হবে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে ফাইনাল অ্যাসেম্বলি লাইনটি ভাদোদরায় তৈরি হবে তার ক্ষমতা থাকবে প্রতি বছর ১২ টি বিমান তৈরি করার। এটি টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হবে এবং স্পেনে এয়ারবাসের ফাইনাল অ্যাসেম্বলি লাইনের মতোই একইভাবে কাজ করবে।
সেভিলে IAF-এর পাইলট এবং মেন্টেনেন্স টিম নিয়েছে ট্রেনিং: আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে, IAF-এর ৬ জন পাইলট ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং ২০ জনের মেন্টেনেন্স টিমের একটি ব্যাচ বর্তমানে সেভিলের এয়ারবাস ফ্যাসিলিটিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। পরের বছর, ভারতীয় বায়ুসেনার আরও ৩ ব্যাচের কর্মীদের সেখানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, গত বছর, TASL হায়দ্রাবাদে একটি কারখানা স্থাপন করেছিল। আগামী সপ্তাহ থেকে এই কারখানায় জোরকদমে নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
হায়দ্রাবাদ ফ্যাসিলিটিতে নির্মিত বিমানের প্রধান অংশগুলিকে আগামী বছর ভাদোদরা ফ্যাসিলিটিতে স্থানান্তরিত করা হবে। সেখানেই অ্যাসেম্বলের পরে বিমানগুলি পরীক্ষা করে ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত করা হবে। এদিকে আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে, ইঞ্জিন এবং অ্যাভিওনিক্সের মতো মূল উপাদানগুলি ব্যতীত অন্যান্য বেশিরভাগ উপাদানের উৎপাদন প্রযুক্তি এয়ারবাস দ্বারা TASL-এ স্থানান্তর করা হবে। যাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারতে উৎপাদিত বিমানের ৯৫ শতাংশই তৈরি করা যায়।