বহু ক্রোশ দূরে লুকিয়ে থাকলেও পাবে না পার! শত্রুদের ঘুম উড়িয়ে বিধ্বংসী কামানের সফল পরীক্ষণ ভারতের

বাংলা হান্ট ডেস্ক: শত্রুপক্ষের ঘুম উড়িয়ে এবার ভারতের সামরিক শক্তি বহুগুণ বাড়তে চলেছে। ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীর জন্য প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) রাজস্থান পোখরান ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে ১৫৫ মিমি/৫২ ক্যালিবারের অ্যাডভান্সড টোয়েড আর্টিলারি গান সিস্টেম (ATAGS)-এর সফলভাবে পরীক্ষা চালিয়েছে। এই কামানটি সীমান্তবর্তী যে কোনো জায়গায় নিয়ে গিয়ে মোতায়েন করা যাবে।

ATAGS বানাতে DRDO-র আরমামেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাব্লিসমেন্ট (ARDE), টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড, মাহিন্দ্রা ডিফেন্স নেভাল সিস্টেম এবং ভারত ফোর্জ লিমিটেড একসঙ্গে কাজ করেছে। মূলত, রাজস্থানের পোখরান সহ আরও একাধিক জায়গায় এই কামানের পরীক্ষা করার পাশাপাশি কয়েক রাউন্ড শেলও ছোঁড়া হয়। যেগুলি নিখুঁতভাবে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে। এই কামানের সর্বোচ্চ রেঞ্জ পর্যন্ত শেল গুলিকে নিক্ষেপ করা হয়।

বর্তমানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে এই ১৫৫ মিমির গান ৭ টি রয়েছে। ২০১৬ সালে এর প্রথম পরীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি, ৪০ টি গানের অর্ডারও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও দেড়শটি কামান তৈরি করা হবে। এগুলির প্রতিটিকে চালানোর জন্য ৬ থেকে ৮ জন প্রয়োজন হয়। এগুলি বার্স্ট মোডে ১৫ সেকেন্ডে ৩ রাউন্ড, ইন্টেন্স মোডে ৩ মিনিটে ১৫ রাউন্ড এবং সর্বোচ্চ মোডে ৬০ মিনিটে ৬০ রাউন্ড ফায়ার করতে সক্ষম। পাশাপাশি, এর ফায়ারিং রেঞ্জ ৪৮ কিমি। কিন্তু, শীঘ্রই এটি বাড়িয়ে ৫২-তে উন্নীত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এছাড়াও, এই সিস্টেমটির ওজন ১৮ টন। পাশাপাশি, এর টিউব অর্থাৎ ব্যারেলের দৈর্ঘ্য ৮,০৬০ মিলিমিটার। এটি মাইনাস ৩ ডিগ্রি থেকে ৭৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উষ্ণতায় সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। তবে, HE-BB বা হাই এক্সপ্লোসিভ বেস ব্লিড অ্যামুনিশন লাগানো থাকলে এটির রেঞ্জ বেড়ে ৫২ কিমি হয়ে যায়। এছাড়াও, এটিতে একটি থার্মাল সাইট এবং গানার ডিসপ্লে লাগানো রয়েছে।

মূলত, ATAGS তৈরি করতে প্রায় চার বছর সময় লেগেছে। এর অর্ডিন্যান্স সিস্টেম এবং রিকোয়েল সিস্টেমের কারণে কিছুটা দেরি হয় এই কাজে। ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে জনসাধারণের কাছে এটি প্রথমবার প্রদর্শিত হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত এটির ছয় থেকে সাতটি পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে, ATAGS ছাড়াও, ভারতের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র আছে। আসুন সেগুলি সম্পর্কেও জেনে নেই।

ধনুষ:
১৫৫ মিমি/৪৫ ক্যালিবার টড হাউইটজার ধনুষকে ২০১৯ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি বোফর্স কামানের দেশীয় সংস্করণ। বর্তমানে সেনাবাহিনীর কাছে ১২ টি ধনুষ আছে এবং আরও ১১৪ টি অর্ডার করা হয়েছে। এটি চালানোর জন্য ৬ থেকে ৮ জনের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও, এটি ৩৮ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্র বার্স্ট মোডে, ১৫ সেকেন্ডে তিন রাউন্ড ফায়ার করে। পাশাপাশি, ইন্টেন্স মোডে ৩ মিনিটে ১৫ রাউন্ড এবং সর্বোচ্চ মোডে ৬০ মিনিটে ৬০ রাউন্ড ফায়ার করতে পারে।

M777:
এই ১৫৫ মিমি লাইট টড হাউইটজার আমেরিকা থেকে ভারতে আমদানি করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রায় ১১০ টি হাউইটজার মোতায়েন রয়েছে। ইতিমধ্যেই আরও ১৪৫ টির অর্ডারও দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তান, ইরাক এবং সিরিয়ার যুদ্ধ সহ একাধিক যুদ্ধে এই হাউইটজার তার দক্ষতা দেখিয়েছে। এটি চালানোর জন্য ৮ জন ক্রু প্রয়োজন। এক মিনিটে এটি ৭ টি শেল ফায়ার করতে পারে। এর শেলগুলির পরিসীমা ২৪ থেকে ৪০ কিলোমিটার।

thediplomat screen shot 2019 04 10 at 4.05.49 pm

Haubits FH77A/B Bofors:
ভারতের কাছে মোট ৪১০ টি বোফর্স কামান রয়েছে। যা ২০৩৫ সালের মধ্যে ধনুষ হাউইটজার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। এই কামান ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। এটি ৯ সেকেন্ডে ৪ রাউন্ড ফায়ার করতে পারে। কার্গিল যুদ্ধের সময় এই কামানের তোপ হিমালয়ের চূড়ায় বসে থাকা পাকিস্তানি শত্রুদের হত্যা করেছিল।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর