বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রথম থেকেই পরিবেশের প্রতি অগাধ টান ছিল তাঁর। পাশাপাশি, দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার তাগিদ তো ছিলই। কিন্তু, সেই তাগিদ থেকেই ব্যবসা শুরু করে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে সকলকে অবাক করে দিয়েছেন চাঁদনী খান্ডেলওয়াল।
ওড়িশায় জন্মগ্রহণকারী চাঁদনী প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পর্কে সর্বদা উদ্বিগ্ন ছিলেন। এর একটাই কারণ ছিল, তা হল পরিবেশের ক্ষতি। সময়ের সাথে সাথে, পরিবেশের জন্য এই উদ্বেগ তাঁকে তাঁর নিজস্ব স্টার্ট-আপ,”ইকোলুপ” চালু করার ধারণা দেয়। ওই স্টার্ট-আপটি মূলত পরিবেশ বান্ধব প্যাকেজিং পণ্যগুলির ওপরই ফোকাস করে।
“ইকোলুপ” নামটির মধ্যেই চাঁদনী একটি স্বাতন্ত্রতা বজায় রেখেছেন। তাঁর মতে “ইকো” শব্দটি পরিবেশকে বোঝায় এবং “লুপ” বলতে বোঝায় যে, একটি ঘটনাক্রম যা যেখান থেকে শুরু হয় ঠিক সেখানেই শেষ হয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হওয়া, এই স্টার্ট-আপটি ভারত জুড়ে তাঁর পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে। পাশাপাশি, প্রতি মাসে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করছেন চাঁদনী।
চাঁদনী যখন কলেজের হোস্টেলে থাকতেন, তখন তিনি লাঞ্চ এবং ডিনারের জন্য বহনযোগ্য খাবার পেতেন, যা প্লাস্টিকের ব্যাগে প্যাক করা থাকত। এদিকে, তিনি প্লাস্টিকের এই বহুল ব্যবহার দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। তিনি সবসময় ভাবতে থাকেন যে, প্রতিদিন কত প্লাস্টিক এভাবেই বর্জ্য হিসেবে স্থান পাচ্ছে আস্তাকুঁড়ে! এরপরই তিনি ধীরে ধীরে প্লাস্টিকগুলিকে একটি ব্যাগে সংগ্রহের মাধ্যমে সেগুলি শুকোতে শুরু করেন। পাশাপাশি, সেখান থেকেই তিনি বাড়িতে ব্যবহারের উপযোগী বিভিন্ন জিনিসও তৈরি করতে থাকেন।
ভুবনেশ্বরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি (NIFT) থেকে স্নাতক হওয়া চাঁদনীর মতে, তিনি সবসময়ই নতুন কিছু করার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। দ্য বেটার ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে যে, চাঁদনীর মা তাঁকে তাঁর আগ্রহগুলি অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেছিলেন। NIFT-তে পড়াকালীন, চাঁদনী ওড়িশার বেশ কয়েকটি শিল্প সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। সেখান থেকেই তিনি আরও অনুপ্রাণিত হন।
এরপর ধীরে ধীরে তিনি স্থানীয় কারিগরদের সাথে কাজ করেন এবং এই সময়ে তিনি আরও অনেক প্রাকৃতিক উপকরণ (সাবাই ঘাস, বাঁশ, তাল পাতা, জাল) সম্পর্কে জানতে পারেন। ওই সময়ে এসব জিনিস প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহারের চিন্তা মাথায় আসে তাঁর। তিনি ভেবেছিলেন যে, একটু যান্ত্রিকীকরণ এবং একটু শৈল্পিক কৌশলের উন্নতি ঘটালেই এগুলি একটি প্যাকেজিংয়ের স্থায়ী রূপ পেতে পারে। পাশাপাশি, এগুলি প্লাস্টিককেও প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম।
তারপরেই ইকোলুপ প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে উপহারের প্যাকেজিং তৈরি করতে শুরু করে। এটি এখন ঝুড়ি, ট্রে এবং বাক্স সহ প্রায় ২০ ধরণের পণ্য তৈরি করছে। চাঁদনীর মতে, তাঁরা প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত স্টাইরোফোম বোর্ডগুলি প্রতিস্থাপন করার জন্য ধানের খড়ের মতো উপাদানগুলির ব্যবহার করেন। পাশাপাশি, কেক ও কুকিজের মত খাবারের বাক্স তৈরিতে তাঁরা বাঁশ ও পাতা ব্যবহার করছেন। চাঁদনীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া বেশিরভাগ নারীই এখন তাঁর সঙ্গে কাজ করেন।
ইকোলুপে চাঁদনীর প্রাথমিক বিনিয়োগ ছিল ২০,০০০ টাকা। অথচ, এখন তিনি মাসে প্রায় ১-২ লক্ষ টাকা আয় করছেন। তাঁর স্বামীও একটি এগ্রি-টেক স্টার্টআপ চালান। তিনি সবসময় চাঁদনীকে সমর্থন করেছেন। এরপরে চাঁদনী বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক পাতার কাঁচামাল খুঁজছেন। অর্থাৎ প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে এবার পাতার ব্যবহার করতে চাইছেন তিনি।