গৌরনাথ চক্রবর্ত্তী, পূর্ব বর্ধমান
বাংলার হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টিং বা কাঁথা-বাটিকের ও হ্যান্ড ফেব্রিক প্রিন্টের চাহিদা চিরকালই। বাজারের একঘেয়ে শাড়ির বদলে যদি একটু অন্য রকম ডিজাইনের শাড়ি পাওয়া যায়, যা আর পাঁচজনের চেয়ে একটু আলাদা, তা হলে মন্দ কীসের l এই ভাবনা থেকেই অনেকে বুটিক খোলার কথা ভাবেন। ফুলিয়া, বাঁকুড়া, শিরামপুর, শান্তিনিকেতন— বাংলায় হাতের কাজের জায়গার কমতি নেই। এই সব জায়গায় গিয়ে একটু অন্য রকম ডিজাইন দিয়ে কারিগরদের কাছ থেকে শাড়ি বানানোটাও খুব একটা মুশকিল কাজ নয়। তাই অনেকেই বুটিক খুলতে উৎসাহী। কেউ শখে খোলেন। আবার কারও ডিজাইনিং ছোট থেকেই প্যাশন। তবে অনেক সময় একঘেয়েমি কাটাতে গৃহবধূরাও বুটিক খোলেন। অবসর সময় কী করে কাটাবেন, বুঝতে না পেরে অনেকেই রোজগারের কোনও পথ খোঁজেন। কলকাতার সীমানা ছাড়িয়ে এ বার অন্যান্য শহরগুলোতেও লাগছে বুটিকের ছোঁয়া। নামজাদা দোকানগুলোকে টেক্কা দিয়ে দুপুর-বিকেল-সন্ধ্যা গড়িয়ে উপচে পড়ছে ভিড়। কেনাকাটার ফাঁকেই চলছে মেয়েমহলের জমাটি আড্ডা। কোনওটা বড় রাস্তার ধারে তো কোনওটা তস্য গলির মধ্যে। সে যাই হোক, রীতিমতো নিশব্দে ওরা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে প্রথাগত পোশাক ব্যবসাকে। ঝাঁ চকচকে শো-রুম নেই। দেওয়াল জোড়া আয়না লাগানো চেঞ্জ রুমই বা কোথায়! বাহারি বিজ্ঞাপনের নজরকাড়া চটকও উধাও। এমনকী শাড়ি বা অনান্য পোশাকের বিরাট সম্ভারও নেই। এক কথায় চেনাছকের ব্যবসা-বানিজ্যের অনেক কিছুই অমিল। তবু ‘বুটিক’ নামের এই ঘরোয়া বিপণন কেন্দ্রগুলি ক্রমশ মহিলা ক্রেতাদের পছন্দের ঠিকানা হয়ে উঠছে।
আর বর্ধমানে এই প্রথম বুটিকের সম্ভার নিয়ে হাজির হল বুটিকের হাট। বর্ধমান শহড়ে পুজোর আগেই বুটিকের হারে বিভিন্ন সম্ভার পাওয়া যাবে বলে জানালেন এখানকার বিক্রেতারা।এখানে পাওয়া যাবে তাঁত সহ বিভিন্ন অলঙ্কার চুড়িদার সহ বাজার অপেক্ষায় কম দামে ।প্রত্যেক সপ্তাহের শনিবারে এই বিপুল সম্ভার নিয়ে হাজির হবে বর্ধমানের বি সি রোডে বুটিকের হাট । যদিও এই ব্যবস্যা এখন অনলাইনে করার বেশ কিছু সুবিধে রয়েছে। সহজেই প্রচার করা যায়। আলাদা করে বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ হয় না। প্রথমেই দোকান ভাড়া করা বা সাজানোর খরচ নেই। আগে থেকে অনেক স্টক কিনে ব্যবসা শুরু করলেন, কিন্তু দেখলেন তেমন বিক্রি হচ্ছে না। অনলাইনে সেই লোকসানেরও ভয় নেই। কয়েকটা স্যাম্পল ছবি আপলোড করার অর্ডার অনুযায়ী স্টক তৈরি করা যায়। তাই শুরুর খরচ অনেকটাই কমে যায়। তাই বর্ধমানে এই বুটিকের মাহাজদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
এক বিক্রেতা জানান, বছর কয়েক হল বুটিক চালাচ্ছেন তিনি। শাড়ি নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষামূলক নকশা তিনি স্কুল জীবন থেকেই করে আসছেন। কিন্তু তখন সেটা ছিল নিতান্তই শখের। তাঁর কথায়, ‘‘বুটিকের শাড়ি যাঁরা কিনতে আসেন, তাঁরা এমন কিছু প্রত্যাশা করেন, যা সাধারণ দোকানে মিলবে না।’’ কী রকম? তিনি বলেন, ‘‘কোনও একটা বিশেষ ডিজাইন ক্রেতা নিজেই হয়তো দিয়ে গেলেন। আমরা সেই মতো শাড়ি তৈরি করে দিলাম। ফলে পুজোর দিনে ওটা ভীষণ ভাবে তাঁর শাড়ি। এই ব্যাপারটা এখন মফস্সলের মেয়েদের ভীষণ টানছে। ফলে ক্রমশ ভিড় বাড়ছে বুটিকে।’’বড় দোকানের ব্যবসায়ীরা মনে করেন, বুটিকের শাড়ির দাম সব সময় বেশি হয়। কারণ, বুটিকে তো শাড়ি তৈরি হয় না। ওঁরাও শাড়ি কিনেই তাঁর উপর নানা কাজ করেন। সে ক্ষেত্রে ওই একই শাড়ির দাম বুটিক ঘুরে ক্রেতার কাছে যখন পৌঁছয়, তখন তার দাম দেড় থেকে দু’গুন হয়ে যায়। সাধারণ ক্রেতা কিন্তু এই সব কিছুই মাথায় রাখেন। যদিও বুটিক-মালিকেরা এমন অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের কথায়, ‘‘তিনশো থেকে তেরো হাজার, সব রকমের শাড়িই বুটিকে মেলে। তাই তো এত মানুষ আসছেন।’’