হাজার বছরের বৌদ্ধ মূর্তি স্ক্যান করে তাক লেগে গেল চিকিৎসকদের, ভেতরে রয়েছেন এক ধ্যানমগ্ন সন্ন্যাসী

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের (Netherlands) দ্য মিয়েন্ডার মেডিক্যাল সেন্টারের এক বিস্ময়কর ঘটনায় তাক লেগে যায় সকলের। সেখানে চিকিৎসার জন্য অন্যান্য রোগীদের ন্যায়, নিয়ে আসা হয় এক হাজার বছর বয়সি এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর (Buddhist monk) মূর্তি। সেই মূর্তি স্ক্যান করেই চমকে ওঠেন মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসকারা। সেটি শুধুমাত্র পাথরের মূর্তি নয়, মূর্তির মধ্যে লিউকুয়ান নামে এক সন্ন্যাসী পদ্মাসনে ধ্যানে মগ্ন রয়েছেন।

WhatsApp Image 2020 02 22 at 11.13.48 AM

নেদারল্যান্ডসেরই একটি মিউজিয়াম থেকে নিয়ে আসার পর প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন, এক হাজার বছর বয়সী এক রোগী, যে নড়াচড়া, হাঁটাচলা করতে পারে না। এমনকি যার শ্বাসপ্রশ্বাসও চলছে না। কিন্তু স্থানীয়দের দাবী তাঁর মধ্যে মানবদেহ রয়েছে। এরপর চিকিৎসকার সোনালি রঙের ওই ধাতব বৌদ্ধ মূর্তির সিটি স্ক্যান (City scan) করে হতবাক হয়ে যান। গবেষক ও চিকিৎসকরা দেখেন, সেটি আসলে মূর্তি নয়। ধ্যানমগ্ন এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। যার দেহে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল না। শুধু ছিল বৌদ্ধ ভাষায় লেখা কাপড়। পদ্মাসনে বসে সে ধ্যান করছে। কিন্তু কিভাবে একজন জীবন্ত মানুষের শরীর থেকে তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বার করে তাঁকে মমিতে পরিণত করা হয়েছে, সেই নিয়ে এখন গবেষণা চলছে।

জেরেমিয়া কেন নামে এক লেখকের ‘লিভিং বুদ্ধা’ (‘Living Buddha) নামক এক বইতে উল্লেখ করা আছে কিভাবে নিজের শরীরকে মানুষ মমিতে (Mommy) পরিণত করতে পারবে। এই বিষয়ে ইচ্ছুক সন্ন্যাসীদের খুব কঠিন ডায়েট চার্ট অনুসরণ করতে হত। খুব ধীর গতির প্রক্রিয়া ছিল এটি। তাঁদের খাদ্যতালিকায় চাল, গম, সোয়াবিনের পরিবর্তে থাকত বাদাম, বেরি, গাছের ছাল। এর ফলে তাঁদের শরীরের চর্বি গলে যেত এবং শরীর আর্দ্রতা হারিয়ে ক্রমশ শুষ্ক হয়ে উঠত তাঁরা। জীবন্ত অবস্থায় বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ খেতেন তাঁরা মৃত্যুর পর শরীরে ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধি আটকাতেন। এবং বিষাক্ত হার্ব দিয়ে বানানো এক চা পান করতেন। যার ফলে তাঁদের শরীরও বিষাক্ত হয়ে যেত এবং মৃত শরীরে ম্যাগট তৈরি হতে না।

WhatsApp Image 2020 02 22 at 11.13.48 AM 1

এইভাবে দীর্ঘদিন ধরে কড়া ডায়েটের ফলে যখন ওই সন্ন্যাসী মৃতপ্রায় হয়ে যেতেন, তখন তাঁকে মাটির নীচে একটি কক্ষে একা রেখে আসা হত এবং সেখানে একটা ঘণ্টা থাকত। সেখানে বসেই তিনি ধ্যানে বসতেন এবং বাঁশের তৈরি একটি ফানেলের মধ্যে দিয়ে নিঃশ্বাস নিতেন। সেই কক্ষ থেকে প্রতিদিন তিনি ঘণ্টা বাজিয়ে বোঝাতেন তিনি বেঁচে আছেন। যে দিন আর সেই ঘণ্টার শব্দ হত না, তখন ধরে নেওয়া হত তিনি মারা গেছেন। এবং বাঁশের ফানেলটা খুলে নেওয়া হত। এরপর তিনি সেই সন্ন্যাসী সেখানেই পড়ে থাকত।

এইভাবে তিন বছর পর তাঁকে বের করে আনা হত। তাঁর যদি  মমিফিকেশন না হত, তাহলে তাঁকে কবর দেওয়া হত। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের কাছে এই মমিফায়েড (Mummified) সন্ন্যাসীরা কিন্তু মৃত নন। তাঁরা মনে করেন এই সন্ন্যাসীরা অমরত্ব লাভ করেছেন এবং এ ভাবেই ধ্যানে মগ্ন রয়েছেন।


Smita Hari

সম্পর্কিত খবর