বাংলা হান্ট ডেস্কঃ চলতি মাসেই ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক (School Teacher) ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। ২০১৬ সালের এসএসসির (SSC Recruitment Scam) সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। যার জেরে জোর ধাক্কা খেয়েছে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা। তার রেশ পুরোপুরি কাটতে না কাটতেই এবার আন্দোলনের হুমকি দিলেন প্রায় ২০,০০০ শিক্ষক। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা।
এবার কোন শিক্ষকরা (School Teacher) আন্দোলনের হুমকি দিলেন?
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরগরম বাংলা। এই দুর্নীতির কারণেই গত বছর ২০১৬ সালের এসএসসির পুরো প্যানেল বাতিল করেছিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই রায়ই বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত। যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব না হওয়ায় সকলের চাকরি বাতিল হয়েছে। এই আবহে আন্দোলনের হুমকি দিলেন আংশিক সময়ের শিক্ষকরা।
তাঁদের বক্তব্য, বছরের পর বছর ধরে সামান্য টাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়াচ্ছেন। স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিকের খাতাও দেখছেন। তবে তাঁদের কোনও দাবি পূরণ হয়নি। সেই কারণে এবার স্কুল বয়কটের পথে হাঁটতে পারেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক নিযুক্ত আংশিক সময়ের শিক্ষকরা (Part Time Teacher)।
আরও পড়ুনঃ ‘টাকা দিয়ে কী হবে? আমরা চাই…’ মুর্শিদাবাদে খুন বাবা-ছেলে! ক্ষতিপূরণ ফিরিয়ে বড় ‘দাবি’ পরিবারের
এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২০,০০০ ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক নিযুক্ত আংশিক সময়ের শিক্ষক (School Teacher) রয়েছেন। এমনটা তাঁরাই জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কাজের চাপ বৃদ্ধি পেলেও তাঁদের কথা ভাবা হচ্ছে না।
জানা যাচ্ছে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেশ কয়েকজন আংশিক সময় শিক্ষক রয়েছেন, যাদের নিয়োগ করেছে শিক্ষা দফতর (School Education Department)। আরেকদল আংশিক সময়ের শিক্ষকদের নিয়োগ করেছে জেলা স্কুল পরিদর্শক। সেই সঙ্গেই অবসরের পর নিযুক্ত আংশিক সময়ের শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক নিযুক্ত প্রায় ২০,০০০ আংশিক সময়ের শিক্ষক আছেন। তাঁদের মাইনে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে দেওয়া হয়।
এই বিষয়ে নর্থ বেঙ্গল পার্ট টাইম টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলির তহবিলে টাকা কম। মাসে আমরা মাত্র ৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে পাই। আমরা যদি না পড়াই তাহলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বহু বিভাগ বন্ধ হয়ে যাবে না। এখন অনেকে বলছেন, ২৬,০০০ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে গেলে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তবে আমরা যদি বিদ্যালয় থেকে হাত গুটিয়ে নিই, তাহলেও বিদ্যালয়গুলির শিক্ষা ব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে যাবে’।
এরপরেই নিজেদের দাবির কথা জানান সুশান্ত। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি, শিক্ষা দফতর থেকে মাইনে দিতে হবে। শিক্ষা দফতরের মাধ্যমে নিয়োগ করতে হবে। ৬০ বছর অবধি বিদ্যালয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে ও একটি বেতন কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে’।
নর্থ বেঙ্গল পার্ট টাইম টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জানান, ইতিমধ্যেই নিজেদের দাবির কথা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের (WBCHSE) সভাপতিকে জানিয়েছেন। এই বিষয়ে সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই শিক্ষকদের ভীষণ দরকার। তবে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ নিয়োগ করে না। শিক্ষা দফতরের থেকে তাঁদের বিষয়ে নির্দেশ এলে সেই অনুযায়ী নির্দেশ পালন করব’।
আরও পড়ুনঃ রাজ্য সরকারি কর্মীদের পোয়া বারো! ফের ২% DA বাড়াল সরকার! কবে থেকে হাতে আসবে?
এদিকে ইতিমধ্যেই স্কুল বয়কটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সুশান্ত। তিনি বলেন, তাঁদের দাবি যদি এবার পূরণ না হয়, তাহলে মে মাসে শহর কলকাতায় মিছিল করবেন। সেই সঙ্গেই বিদ্যালয় বয়কটের পথেও হাঁটতে পারেন।
উল্লেখ্য, ২৬০০০ চাকরি বাতিল কাণ্ডে ইতিমধ্যেই সরগরম বাংলা। শিক্ষকদের অভাবে ধুঁকছে বহু স্কুল। এই আবহে যদি আরও কয়েক হাজার শিক্ষক (School Teacher) আন্দোলনে নামেন, তাহলে চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।