বাংলা হান্ট ডেস্কঃ মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ, খুনের ঘটনার পর এক এক করে প্রকাশ্যে আসছে সন্দীপ জমানায় আরজি করে হওয়া নানান দুর্নীতি। বেওয়ারিশ লাশ বিক্রি থেকে শুরু করে টেন্ডার দুর্নীতি, প্রাক্তন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে একাধিক। রাজ্যের স্বনামধন্য মেডিক্যাল কলেজের এই দশা ফাঁস হতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে আমজনতার মধ্যে। এই আবহে এবার শিরোনামে উঠে এল কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের (Sagore Dutta Medical College and Hospital) ‘দুর্নীতি’র আখ্যান।
আরজি কর কাণ্ডের মাঝেই শিরোনামে সাগর দত্তের (Sagore Dutta Medical College and Hospital) ‘দুর্নীতি’!
উত্তর ২৪ পরগণার কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সাম্প্রতিক অতীতে একাধিকবার সংবাদের শিরোনামে স্থান করে নিয়েছে। রোগী মৃত্যুর ঘটনায় অশান্তির নজিরও রয়েছে। তবে এবার সামনে এসেছে মেডিক্যাল কলেজের অন্দরে চলতে থাকা ‘থ্রেট সিন্ডিকেটে’র কথা। বাংলা হান্টের কাছে সাগর দত্তের প্রাক্তনী, ‘প্রভাবশালী’ বীরুপক্ষ বিশ্বাসের (Birupaksha Biswas) একাধিক ‘কীর্তি’ ফাঁস করেছেন তাঁরই একদা জুনিয়র।
অভিযোগ, সাগর দত্তে (Sagore Dutta Hospital) ‘নর্থ বেঙ্গল লবি’র মাথা হলেন বীরুপক্ষ। সেই লবিতে বীরুপক্ষ সহ মোট ৮ রয়েছেন বলে খবর। এর মধ্যে একজনের মাধ্যমেই বীরুপক্ষ হাসপাতালে ‘থ্রেট সিন্ডিকেট’ চালাচ্ছেন বলে দাবি। ‘প্রভাবশালী’ এই প্রাক্তনীর বিরুদ্ধে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে জুনিয়রদের নির্যাতন, একাধিক অভিযোগ এনেছেন সাগর দত্তের আর এক প্রাক্তনী। বর্তমানে তিনি রাজ্যের অন্য একটি মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করছেন। সেই সঙ্গেই ভাইরাল হয়েছে একাধিক অডিও ক্লিপ (সেগুলির সত্যতা যাচাই করেনি বাংলা হান্ট)।
- কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে?
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই পড়ুয়া বলেন, বীরুপক্ষ এবং তাঁর বাহিনী হাসপাতালে রীতিমতো তাণ্ডব চালালেও তাঁদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে ভয় পান সকলে। বীরুপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানো হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে দাবি তাঁর। এমনকি একবার নাকি একজন মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশ ধরে নিয়ে গেলেও পরের দিন বহাল তবিয়তে ফিরে আসেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ ‘অনেক সিরিয়াস ইস্যু আছে’! রাজ্যের আপত্তিতে কান দিল না হাইকোর্ট, এক রায়ে তোলপাড়!
এসবের পাশাপাশি হাসপাতালের (Sagore Dutta Medical College and Hospital) পড়ুয়াদের ওপর নানান রকম ‘অত্যাচার’ করার অভিযোগও করা হয়েছে বীরুপক্ষ এবং তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে। কেউ তাঁদের বিরোধিতা করলে দরজার বাইরে প্রস্রাব করে দেওয়া থেকে শুরু করে মারধর, বাদ দেওয়া হয় না নাকি কিছুই। এমনকি শিক্ষক, শিক্ষিকাদের ট্রান্সফার করিয়ে দেওয়ার হুমকি অবধি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গেই হাউস স্টাফ নিয়োগে দুর্নীতি, পুজোর জন্য পড়ুয়াদের থেকে টাকা নিয়ে তার সদ্ব্যবহার না করা সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগকারী পড়ুয়ার অনুমান, ‘প্রভাবশালী’ বীরুপক্ষের ওপর ‘হেভিওয়েটে’র হাত থাকতে পারে। যদিও সেই ‘হেভিওয়েট’ কে বা কারা সেই বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
এদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই বীরুপক্ষের সঙ্গে বাংলা হান্টের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই সকল অভিযোগে কোনও সত্যতা নেই। স্রেফ কুৎসা রটানো হচ্ছে। যারা এই কুৎসা রটাচ্ছেন তাঁদের ‘হিস্ট্রি’ সাংবাদিক সম্মেলন করে জনসমক্ষে তুলে ধরার কথা বলেন তিনি। একইসঙ্গে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বীরুপক্ষ। তাঁর কথায়, সাগর দত্তের প্রাক্তনী কিছু চিকিৎসক এবং যারা চিকিৎসা ছেড়ে রাজনীতি করে বেড়ায়, এমন কিছু মানুষ এর নেপথ্যে রয়েছেন। ডক্টর সুবর্ণ গোস্বামী, ডক্টর মানস গুমটা সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন বীরুপক্ষ। একইসঙ্গে বেঙ্গল স্ট্রেট ব্রাঞ্চ IMA-র কিছু ‘ছেলেপুলে’রাও যুক্ত আছেন বলে দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর ‘সিন্ডিকেটে’র অংশ হিসেবে যে ছাত্রদের নাম উঠে এসেছে, তাঁদেরও দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তিনি বলেন, মেধাবী পড়ুয়া হওয়ার পাশাপাশি ওই ছাত্ররা ভালো মনের মানুষ।