বাংলা হান্ট ডেস্কঃ হেরে গিয়েছেন দেবাংশু। লোকসভা নির্বাচনে (Loksabha Election) বঙ্গে সবুজ ঝড় উঠলেও অধিকারী গড় তমলুকে ফুটেছে পদ্ম। দেবাংশুকে (Debangshu Bhattacharya) হারিয়ে তমলুক লোকসভা কেন্দ্র থেকে ৭৭ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay)।
বিজেপির কাছে হারের কারণে শনিবার কালীঘাটের দলীয় বৈঠক থেকে দেবাংশুকে কড়া বার্তা দেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেবাংশুর প্রচারসূচি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মমতা বলেন, ওর বয়সে তিনি সকাল ৭টা থেকে রাস্তায় থাকতেন। বেলা ১২টার সময় বাড়ি থেকে বেরোতেন না। জানা গিয়েছে দলের কাছে তমলুক থেকে অভিযোগ এসেছে যে, দেবাংশুকে কখনও সকালের দিকে প্রচারে পাওয়া যেত না। এই নিয়েই এদিন দেবাংশুকে ভর্ৎসনা করেন তৃণমূল নেত্রী। আর এই নিয়ে যখন চৰ্চা চলছে তখন পাল্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক পোস্ট তৃণমূল প্রার্থীর।
নির্বাচনী প্রচারে নিজের ১০১ শতংশ দিয়েছেন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর গলায় দাবি করেছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। বিজেপির কাছে হেরে যাওয়ার কারণ হিসেবে বেইমানি আর অর্থের কথাও উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের এই তরুণ নেতা। অভিমানী দেবাংশু লেখেন, ‘সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে টয়লেট সেরে, স্নান করে, এক বাটি ছাতুর সরবত খেয়ে রোজ বেরিয়ে পড়তাম সকাল ৮-টার মধ্যে। প্রবল রৌদ্রে দুপুর ১ টা পর্যন্ত প্রচার চলত। তারপর ঠিকানায় ফিরে একটু গা ধুয়ে, দুপুরের খাওয়া সেরে পুনরায় ৩ টে নাগাদ রওনা দিতাম। চলত রাত্রি ৯-টা পর্যন্ত.. কখনও কখনও সেটা সাড়ে দশটাও বাজত।’
‘রাতে নিমতৌড়ির বাড়িতে ফিরে খাবার খেয়ে শুরু হত বিভিন্ন নেতা, কর্মীদের সাথে বাড়ির অফিসে অভ্যন্তরীণ মিটিং, কখনও কখনও সেসব মিটিং চলেছে রাত্রি ২-টো পর্যন্তও..। মিটিং শেষে ঘুমিয়ে আবার পরের দিন সকালে ৬ টায় ওঠা..। তমলুকের দলীয় কর্মীরা, যারা সেই বাড়িতে প্রায়শই আসতেন তারা সকলেই এই রুটিন জানেন। পরিশ্রমে নিজের ১০১% দিয়েছি। যা করতে পারি তার বেশি করেছি।” লেখেন দেবাংশু।
আরও পড়ুন: গরমে ফুটবে দক্ষিণবঙ্গ! এই সব জেলায় ৪৪ ডিগ্রিতে পৌঁছবে তাপমাত্রা, আবহাওয়ার খবর
বিস্ফোরক অভিযোগ করে দেবাংশু বলেন, ‘আমার টিম, আই প্যাকের কয়েকজন এবং পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় উন্মাদের মত পরিশ্রম করেছে। সাথে প্রাণপাত করে দিয়েছেন বুথ স্তরের দলীয় কর্মীরা.. নিজেদের সবটা দেওয়ার পরেও অর্থের কাছে হেরে গিয়েছি। এত কোটি কোটি টাকার বিরুদ্ধে আমাদের স্বল্প ক্ষমতার লড়াই ব্যর্থ হয়েছে। গোটা জেলায় নেতা-কর্মী নয়, ভোট করিয়েছে কেবল টাকা। সাথে সাথে ছিল নন্দীগ্রাম ও ময়নার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিস্তৃত সন্ত্রাস; নির্বাচনের দিন তিনেক আগে থেকে বিরুলিয়া, বয়াল, ভেকুটিয়া, হরিপুর, গোকুলনগরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট দিতে না বেরোনোর হুমকি তথা ফতোয়া এবং সোনাচূড়া অঞ্চল জুড়ে ভোটের দিন দেদার ছাপ্পা। ময়নার বাকচা অঞ্চল এতটাই মুক্তাঞ্চল, তৃণমূল নাম উচ্চারিত হলেও মারধর এমনকি প্রাণহানিও সেখানে নতুন নয়। দলের ঝান্ডা বাঁধার লোক অন্ধি সেখানে নেই। তার উপর নির্বাচনের দিন দুয়েক আগেই সেই খুন; যাকে কেন্দ্রে করে গোটা নন্দীগ্রাম হয়ে উঠেছিল দুর্বৃত্তদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। সেই পরিস্থিতে সবটা এতটা একপেশে হয়ে গিয়েছিল, এক সময়ে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল এই নির্বাচন এখন লড়া, না লড়া সমান ব্যাপার। তবুও আমরা হাল ছাড়িনি!
পরিস্থিতির সুযোগে আমার বিপরীতের প্রার্থী আধা বেলা প্রচার না করেও জিতে গিয়েছেন.. আর আমি পাগলের মত বুথ বুথ ঘুরেও জিততে পারিনি।
অনেক মানুষ চেনা, অনেক রকমারি অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে শেষ আড়াই মাস ভিমড়ি খেয়েছি প্রচুর, প্রকাশ্যে সবটা লিখতে কিংবা বলতে চাই না।
মার্চে ওজন ছিল ৮৩ কিলো। যা আজ কমে ৭৭.. সৌজন্যে শেষ আড়াই মাস। এই ৬ কিলো ওজনের বিনিময়ে ৬ লক্ষ ৮৭ হাজার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, আশীর্বাদ পেয়েছি। সেটাই আমার কাছে এই নির্বাচনের নির্যাস..
আগামী দিনে এই রাজনৈতিক নদী পথ আমায় কোন মোহনায় নিয়ে গিয়ে ফেলবে জানিনা.. শুধু এটুকু জানি, আমার নৌকো খোয়া গেছে, কেবল নিজেকে ভাসিয়ে, বাঁচিয়ে রেখেছি এই অগাধ জলরাশির পৃষ্ঠ দেশে..।। এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থীদের মধ্যে কনিষ্ঠতম ছিলেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। এত অল্প বয়সে তাকে লোকসভা ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদও জানান দেবাংশু। তবে গতকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভর্ৎসনা, আর তারপরই দেবাংশুর এহেন অভিমানী পোস্ট ঘিরে ফের নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে।