বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিগত কিছুমাস ধরে আবাস দুর্নীতি ইস্যুতে (Awas Yojana Scam) রীতিমতো জেরবার রাজ্যসরকার। যোজনার ঘর বরাদ্দে নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগে উত্তপ্ত বঙ্গের মাটি। বাংলার দিকে দিকে ছেয়ে গেছে দুর্নীতির অভিযোগ। কোথাও পেল্লায় ইমারত, পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাসের তালিকায় নাম এসেছে বিত্তবানেদের, কোথাও বা মরা মানুষের নামে ভরেছে যোজনার তালিকা। সেই দুর্নীতির তালিকাতেই সামিল ছিল বর্ধমান জেলাও। এবার ফের প্রকাশ্যে পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলাতে আবাসের ঘর নিয়ে কেলেঙ্কারি অভিযোগ।
কী জানা যাচ্ছে? পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের (Bhatar) ওড়গ্রামে প্রকাশ্যে এল কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ। যোজনার ঘর দেওয়ার পরিবর্তে দিতে হবে কাঠমানি। স্থানীয় তৃণমূল নেতার (TMC Leader) বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন এলাকার এক বিধবা মহিলা। মহিলার বক্তব্যের এক ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই ভাইরালও হয়েছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজা।
জানা গিয়েছে, ভাতারের ওড়গ্রামের ব্লক কমিটিতে সদ্য সহ সভাপতি রূপে দায়িত্ব পেয়েছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা তথা তৃণমূল নেতা মীর নজরুল ইসলাম। এরপরেই তাঁর বিরুদ্ধে কাঠমানির অভিযোগে সরব এলাকারই এক প্রতিবেশী বিধবা মহিলা অতিরন বিবি। সেইমতই ভাইরাল হয়েছে মহিলার বক্তব্যের একটি ভিডিয়ো ফুটেজও। সেখানে মহিলা বলছেন , কী ভাবে তাঁর যোজনার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
তাঁর অভিযোগ, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে আবাস যোজনার তালিকায় তাঁর নাম আসে। সেইমত ধাপে ধাপে আবাসের ১ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা ব্যাংকে ঢোকে। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতা মীর নজরুল ইসলাম ও ফেসিলেটার শেখ বাপ্পা সেই অর্থ থেকে ৭০ হাজার টাকা কাঠমানি নিয়েছে বলে অভিযোগ। তবে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এ নিয়ে কেন কোনো অভিযোগ করেনি ওই বিধবা মহিলা। এই নিয়েও দানা বেঁধেছে প্রশ্ন। এ নিয়ে মহিলা জানান, স্থানীয় তৃণমূল নেতারা তাঁকে এই বিষয় পাঁচকান করতে বারণ করেছিলেন। তাঁর কথায়, বর্তমানে সংবাদমাধ্যমে খবর দেখে সাহস পেয়ে তিঁনি বিষয়টি সামনে এনেছেন ।
বর্তমানে মহিলার দেওয়া ৭০ হাজার টাকা তিঁনি ফেরত চান বলে জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ এতগুলি টাকা কম পাওয়ায় কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে তাঁকে নিজের বাড়ি বানাতে হয়েছে। অন্যদিকে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার দাবি, ব্লক কমিটিতে তৃণমূলের সহ-সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণা হওয়ার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে । বদনাম করার জন্যই এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর। পাশাপাশি বিষয়টি দলীয় স্তরে জানিয়েছেন বলেও জানান তিঁনি। অন্য দিকে, আরেক অভিযুক্ত ফেসিলেটার শেখ বাপ্পারও দাবি , “এটা বানানো অভিযোগ। এত দিন পর এই অভিযোগ কেন জানি না। আমি টাকা নিই নি।” মহিলার কোনো অভিযোগকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছে রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শান্তনু কোঙার।
অন্যদিকে, কাঠমানির বিষয়কে হাতিয়ার করে ময়দানে নেমেছে বিজেপি। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের বক্তব্য, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের চরিত্র সামনে এনেছি। তৃণমূল কতটা নির্দয় তা এই সব ঘটনা দেখিয়ে দেয়। আমরা চাইব প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিক। যাতে আগামী দিনে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পুরো টাকা জনগণ পায়। তৃণমূলের নেতারা ভাগ বসাতে না পারে।”