বাংলা হান্ট ডেস্কঃ মঙ্গলবার ভোরে একের পর এক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারতীয় সেনা (Indian Army)। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা করে একাধিক ভারতীয় মহিলার সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়েছিল জঙ্গিরা। এবার অপারেশন সিঁদুরের (Operation Sindoor) মাধ্যমে তার জবাব দিল ভারত। গুঁড়িয়ে দেওয়া হল জঙ্গিদের একাধিক ডেরা। এরপরেই সুর চড়িয়েছে পাকিস্তান। প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। এবার এই নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya)। অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তান কী কী করতে পারে? চুলচেরা বিশ্লেষণ করলেন তিনি।
‘পাকিস্তানের তো ধন্যবাদ জানানো উচিত’! দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya)
এদিন বিকেলে নিজের সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেন তৃণমূল নেতা। ক্যাপশনে লেখা, ‘পাকিস্তানের ফিজিক্যাল টেররিজম আটকেছে এবং আটকাবে আমাদের বীর সেনাবাহিনী। সাইকোলজিক্যাল টেরোরিজম আটকাতে হবে আমাকে-আপনাকে… তবেই প্রকৃত ভারতবাসী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারব!’
ভারতীয় সেনা ও সেনাবাহিনীর প্রত্যেককে কুর্নিশ ও পাকিস্তানকে ‘শুভ দীপাবলি’র শুভেচ্ছা জানিয়ে ভিডিও শুরু করেন দেবাংশু। তিনি বলেন, ‘এই যে অ্যাকশনটা হল, এরপর পাকিস্তান বড্ড লাফালাফি করছে। তাদের একটাই বক্তব্য, আমরা প্রত্যাঘাত করব, আমরা বদলা নেব। কিন্তু সত্যিই কি তারা সেটা পারবে? ভারতের প্রধানত ব্রহ্মস ধরণের কিছু মিসাইল রয়েছে। যা তৈরি হয়েছিল ‘মিসাইল ম্যান’ নামে পরিচিত এপিজে আব্দুল কালাম স্যারের হাত ধরে। প্রধানত সেই মিসাইল পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে’।
আরও পড়ুনঃ অপারেশন সিঁদুরের পরেই বড় খবর! সর্বদলীয় বৈঠক ডাকল কেন্দ্র, ফের বড় কোনও সিদ্ধান্ত?
তৃণমূল (Trinamool Congress) নেতা বলেন, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেরই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে। তাদের কাজই হল, বিদেশের মাটি থেকে ড্রোন বা মিসাইল জাতীয় কিছু এলে আকাশেই সেটিকে চিহ্নিত করে ধ্বংস করে দেওয়া। দেবাংশু বলেন, ‘ভারতের অন্যান্য মিসাইল পাকিস্তান ধ্বংস করতে পারবে কিনা জানি না। তবে ব্রহ্মস এমন একটি মিসাইল যা পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও চিহ্নিত করতে পারবে না… পাকিস্তান এখন বলছে তারা প্রত্যাঘাত করবে। এখানে প্রথম প্রশ্ন, পাকিস্তান কেন প্রত্যাঘাত করবে? ভারত কি সেদেশের সাধারণ নাগরিককে মেরেছে? ভারত কি সেদেশের সেনাবাহিনীর ওপর হামলা করেছে? জবাব হল, না। ভারত পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিগুলো ভেঙেছে। পাকিস্তানের নিজের, পাকিস্তান সরকারের এগুলো ভাঙা দরকার ছিল। আজ সেটা ভারতকে করতে হল। এর জন্য পাকিস্তানের ধন্যবাদ জানানোর কথা… এটা না বলে পাকিস্তান বলছে প্রত্যাঘাত করব’।
তৃণমূল (TMC) নেতা বলেন, এই ‘প্রত্যাঘাতে’র কথা বলে পাকিস্তান আদতে প্রমাণ করে দিচ্ছে তারা জঙ্গি পোষে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে ভারতের ভেতর অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে পাকিস্তান। বর্তমান সময়ে তারা ‘সাইকোলজিক্যাল টেররিজমে’র পথ বেছে নিয়েছে বলে দাবি করেন তৃণমূল নেতা। পহেলগাঁওয়ে বেছে বেছে হিন্দু খুনের মাধ্যমে ভারতে বসবাসকারী দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাইছিল এই ‘শত্রু’ দেশ। এমনটাই দাবি করেন তিনি।
দেবাংশু (Debangshu Bhattacharya) বলেন, ‘ভারত কী? আজ সেনাবাহিনীর সাংবাদিক বৈঠকে যা দেখেছেন, সেটাই ভারত। একদিকে বসে কুরেশি ম্যাডাম, একদিকে বসে সিং ম্যাডাম, মাঝে আরেকজন। ধর্ম মতে দেখলে একজন মুসলিম, একজন শিখ, একজন হিন্দু। কিন্তু তাঁরা সবাই কি তাঁদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে বসে আছেন? তাঁদের একমাত্র পরিচয়, তাঁরা ভারতীয় সেনা। তাঁরা ভারত মায়ের হয়ে দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। আজকের এই ছবিটা কত শক্তিশালী, কত সুন্দর। এটাই তো ভারত’।
তৃণমূল নেতা বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদীদের দিয়ে ধর্ম জিজ্ঞেস করে খুন করাবে, তাতে ভারতের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হবে। কিছুটা হয়তো তৈরি হয়েছিল। তবে শেষ অবধি তো গান্ধী, সুভাষের দেশ। তাই পাকিস্তানের চেষ্টা সফল হয়নি। হিন্দু মুসলিম একত্রে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে’।
দেবাংশু দাবি করেন, পাকিস্তান এখন যাই চালাক না কেন, সেদেশের হাতে এমন কোনও অস্ত্র নেই যাতে ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে ভাঙতে পারে। পাকিস্তান থেকে যে মিসাইলই পাঠানো হোক না কেন, তা আকাশেই ভারত ধ্বংস করে দেবে বলে দাবি করেন তিনি।
দেবাংশু বলেন, ‘পাকিস্তানের কাছে এখন দু’টো বিকল্প রয়েছে। এক, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মর্টার ছোঁড়া, গুলি চালানো, ভারতীয় সেনাদের ওপর গুলি চালানো। অথবা দুই, ফের কোনও জঙ্গি সংগঠনকে ভারতে পাঠিয়ে কোনও ধ্বংসলীলা চালানো। এর বাইরে গিয়ে পাকিস্তানের আর কোনও ক্ষমতা নেই। আর তাদের পাশে সেই অর্থে কোনও দেশ দাঁড়াবে না। কারণ যারাই তাদের পাশে দাঁড়াবে, তাদের এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, তোমরা তাহলে সন্ত্রাসবাদকে ঘুরপথে সমর্থন করছ’।
তৃণমূলের এই যুব নেতা বলেন, এমনিতেই জল বন্ধ সহ নানান ইস্যুতে পাকিস্তান ভীষণ খারাপ জায়গায় রয়েছে। সেদেশের অর্থনীতিও ধুঁকছে। ফলে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে পাকিস্তান বেশি সাহস দেখাবে না, যদি দেখায় ভারতীয় সেনা তৈরি রয়েছে বলে দাবি করেন দেবাংশু (Debangshu Bhattacharya)। সবশেষে বাঙালি ভারতীয় সহ সমগ্র দেশবাসীর কাছে তৃণমূল নেতার অনুরোধ, পাকিস্তানের ‘সাইকোলজিক্যাল টেররিজমে’র চেষ্টাকে সফল হতে দেবেন না। ‘আমরা ১৪০ কোটি ভারতবাসী। এটাই আমাদের পরিচয়। এর মধ্যে কোনও ধর্ম, ভাষা, জাতির বিভেদ নেই’, বলেন তিনি।