বাংলাহান্ট ডেস্ক : খোদ ফিরহাদ হাকিমের সামনে দলের দুর্নীতির প্রসঙ্গে সরব হলেন তৃণমূলেরই চেয়ারম্যান। যা ঘিরে কার্যতই তোলপাড় ঘাসফুল শিবির। চেয়ারম্যান ছাড়াও দলের আরও দুই নেত্রীর মন্তব্যেও বেশ অস্বস্তিতেই রাজ্যের শাসক দল।
পুরভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় লাভ করেছে তৃণমূল। আর এরপরই আপাতত দলের পাখির চোখ রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন। কিন্তু তার আগে বাংলায় ঘটে গিয়েছে একাধিক সন্ত্রাস এবং হিংসার ঘটনা। যার মধ্যে সবার আগে উঠে আসে রামপুরহাট গণহত্যা কাণ্ডের নাম। নারকীয় এই হত্যালীলায় নাম জড়িয়েছে একাধিক তৃণমূল নেতার। কিন্তু তার চেয়েও বড় বিষয়, হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি তোলাবাজি, বালি -পাথর পাচার, ইত্যাদিতে যুক্ত সেই সমস্ত নেতাই জেলা এবং পঞ্চায়েত স্তরের। এই সমস্ত নেতাদের দুর্নীতির নীরব সাক্ষ এঁদের প্রাসাদোপম বাড়ি,গাড়ি এবং বিপুল অলিখিত সম্পত্তি। ফলে পঞ্চায়েত এবং জেলা স্তরে এই সব ঘটনার কারণেই যে মুখ পুড়েছে তৃণমূলের তা বলাই বাহুল্য। এই সব নেতাদের থেকে দূরত্ব বাড়াতে চাইলেও যে স্বস্তি মিলছে না শাসক দলের সেই প্রমাণই মিলল বৃহস্পতিবার।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মালদহের সাহাপুরের একটি কর্মীসভায় যোগ দেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম। সেখানেই দলের তিন নেতা নেত্রীর মন্তব্যে ভরা কর্মিসভায় অপ্রস্তুতে পড়তে হল তাঁকে। এদিন সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র এবং সাবিনা ইয়াসমিন। সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘যে সব প্রধান, সভাপতি দলের হয়ে কাজ করছেন না, আর তাদের পায়ে পড়ার দরকার নেই। একটা বছর রয়েছে। সাংগঠনিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দলের হয়ে কাজ করুন, তাদেরকে ছেড়ে দিন। যাঁরা এখনও শুধরাচ্ছেন না, তাঁরা এক বছরে শুধরোবেন না। আর দলকে ভাঙিয়ে যদি কেউ মনে করেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাব, দলের ক্ষতি করব, দয়া করে চলে যাবেন। পথ খোলা আছে। আমিও এই জেলার মন্ত্রী, বিগত দিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। নীচু স্তরে দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু লোক আছে, যারা দলের নাম ভাঙিয়ে দলকে বদনাম করতে চান। যদি আমার নামেও কেউ কিছু বলে থাকে, যাচাই করে নিন। আমাকে ফোন করে জানান।’ কার্যতই একই অভিযোগ শোনা যায় অপর আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রর গলাতেও।
সভার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ফিরহাদ হাকিমও। দুই নেত্রীর অভিযোগ কার্যত মেনে নিতেই দেখা যায় তাঁকে। একই সঙ্গে ইংরেজবাজারের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর দাবি, ‘কেউ যদি প্রকাশ্যেই চুরি করে, তাকে প্রকাশ্যেই ভর্ৎসনা করা উচিত। মানুষ দেখতে পাচ্ছে দুর্নীতি হচ্ছে, এবার আমরা যদি মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখি, তাহলে তো মানুষ ক্ষমা করবেন না। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো বলছেন প্রকাশ্যে দুর্নীতি হচ্ছে।’
স্বভাবতই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুটা চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। যেখানে দলের সুপ্রিমো সহ একাধিক তাবড় নেতা নেত্রীই স্বীকার করে নিচ্ছেন তৃণমূলের দুর্নীতির কথা, সেখানে পঞ্চায়েত ভোটে সেই দলের উপর কতখানি ভরসা রাখবে মানুষ? পঞ্চায়েত ভোটে ঠিক কতখানি প্রভাব পড়বে রামপুরহাট গণহত্যা কাণ্ডের? এই ঘটনাক্রমকেই কি তুরুপের তাস হিসেবে সাজাবে বিরোধী শিবির? উঠছে একাধিক প্রশ্ন।