বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) ইস্যুতে ধুন্ধুমার রাজ্যে। বিগত কিছুমাস ধরে শিক্ষক কেলেঙ্কারিতে একের পর এক তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীর নাম জড়ানোর যথেষ্টই অস্বস্তিতে শাসকদল (Trinamool Congress)। নিজেদের ওপরে ওঠা অভিযোগ সরিয়ে পাল্টা বাম জমানায় নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে জোড়াফুল শিবির। এই পরিস্থিতিতেই সিপিএম আমলে চাকরিক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (Sovandeb Chattopadhyay)।
এদিন খড়দহে এক দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেন শোভনদেব। সেখানে দাঁড়িয়েই প্রকাশ্যে তিনি বলেন, ‘পুরোহিত চোর হতে পারে, দেবতা নন, আমি চোর হতে পারি, মমতা নন’। মন্ত্রীর এহেন মন্তব্য নিয়েই জোর চৰ্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রসঙ্গত, সিপিএম জামানায় পলিটেকনিক কলেজে অন্তত ২০০ অধ্যাপককে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে এদিন সরব হন শোভনদেব।
সেই ইসুকে হাতিয়ার করে অধ্যাপনার জন্য প্রয়োজনীয় ৬৫ শতাংশ নম্বর না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তাদের নিয়োগ করা হল সেই বিষয়ে প্রশ্ন করেন তিনি। উদাহরণও তুলে ধরেন মন্ত্রী। বলেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হতে গেলে মাধ্যমিক থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পর্যন্ত ৫০ শতাংশ নম্বর থাকা প্রয়োজন। কিন্তু যেখানে রজত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়োগ করা হয়েছিল, তার কোনও স্তরেই ওই নম্বর ছিল না। এরকম অনেকগুলো কেস রয়েছে। কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়েছে। আমার কাছে তথ্য রয়েছে।”
এদিন হাতে করে কিছু নথি নিয়ে সভায় পৌঁছন মন্ত্রী। পলিটেকনিক কলেজের নিয়োগ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “২০০ অধ্যাপককে নিয়োগ করেছিল ওরা। অধ্যাপক নিয়োগ সেসময় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা ছাড়া হয় না। তাদের ৬৫ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। কিন্তু যারা নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাদের একজনেরও এই নম্বর ছিল না। এখন আমরা যদি বলি, সিপিএমের আমলে কারা চাকরি পেয়েছিল, তাদের তাড়িয়ে দেও, সেটা হয় না।”
তবে এদিন মন্ত্রীর গলায় কিছুটা ভিন্ন সুরও শোনা গেল বইকি। দিন দিন দুর্নীতির তদন্তে শাসকদলের সদস্যদের নাম জড়ানোয় যথেষ্টই কোণঠাসা তৃণমূল। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে দলের ওপর থেকে দুর্নীতির দাগ সরাতেই পুরোনো সরকারের প্রসঙ্গ টানা হচ্ছে। পাশাপাশি দলের কোনো ব্যক্তির করা দুর্নীতির দায় যে তৃণমূল নেবেনা এদিন নিজের কথায় সেই ইঙ্গিতও দিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
সাফাই দিয়ে মন্ত্রী এদিন বলেন, “সমাজের মধ্যে ভাল খারাপ রয়েছে। সৎ ও অসৎ দুটো শব্দই রয়েছে। কিছু অসৎ লোক নিশ্চয়ই আছে, তার জন্য তো গোটা দল নষ্ট হয়ে যায় না। একটা মন্দিরে পুরোহিত চোর, দেবতা কি চোর হয়ে যায়? অপবিত্র হয়ে যায়? যাকে আমরা দেবতা মনে করি, সত্যিই শ্রদ্ধা করি, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন চোর হবেন? আমি চোর হতে পারি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন চোর হবেন?” নেতার এই মন্তব্যের পর সমালোচনার ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।