বাংলাহান্ট ডেস্ক : বাংলার রাজনীতিতে চলছে ব্যক্তিগত আক্রমণের ধারা। বিধানসভার অধিবেশনেই এ বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Biman Banerjee)। কিন্তু ব্যক্তি আক্রমণের ধারা থামার পরিবর্তে বেড়েই চলছে। একদিকে তৃণমূল বিরোধী দলনেতার ‘যৌন পছন্দ’ নিয়ে প্রশ্ন তলছে, অপরদিকে বিরোধী দলনেতা শাসক শিবিরের শীর্ষনেতার পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রকাশ্যে আক্রমণ করছেন!
বিজেপির নবান্ন অভিযানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে ‘মহিলা’ পুলিস অফিসারের কথা কাটাকাটি হয়। সেখানে শুভেন্দু মহিলা আধিকারিককে বলেন, ‘ডোন্ট টাচ মাই বডি!’ ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধেই মাঠে নামে তৃণমূল। শুভেন্দুর ‘যৌন পছন্দ’ নিয়ে কটাক্ষ করা শুরু হয়। শাসক শিবিরের অন্যতম শীর্ষনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুকে ‘পুরুষ পছন্দ-করা নেতা’ বলে অভিহিত করেন। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ শুভেন্দুর নাম না-করেও তাঁকে ‘সমকামী’ এবং ‘বিকৃতি যৌনরুচির’ বলে কটাক্ষ করেন। তৃণমূলের দাবি, যেহেতু শুভেন্দু মহিলাকে তাঁর দেহ স্পর্শ করতে দেননি, তাই তিনি ‘পুরুষ পছন্দ-করা নেতা’। শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘ডোন্ট টাচ মাই বডি’ লেখা পোস্টার পড়ে শুভেন্দুর বাসস্থান কাঁথি শহরে। তৃণমূল যেহেতু ওই মন্তব্যটি নিয়ে রাজনীতির ময়দানে নামে, তাই অনেকে মনে করছেন, ওই পোস্টার দেওয়ার পিছনে তাদের হাত থাকলেও থাকতে পারে। প্রসঙ্গত, একটি শিশুকে কোলে নিয়ে শুভেন্দুর একটি পুরনো ছবি দিয়েও নেটমাধ্যমে প্রচার শুরু হয়। ওই ছবিতে এক তরুণীও রয়েছেন। তাঁর নমোল্লেখ করেই ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন করা হয়েছে টুইটারে। অনেকের দাবি, ছবিটি এই ভাবে আগেও প্রচার করা হয়েছিল। এখন আবার সামনে আনা হয়েছে।
এর পরেই রবিবার মুখ খুলেছেন শুভেন্দু। তিনি আবার অভিষেকের পিতৃপরিচয় নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তৃণমূলেরই প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন আমলা দীপক ঘোষের লিখিত একটি বইয়ের উল্লেখ করে প্রকাশ্য এক সভায় শুভেন্দু ওই কথা বলেন।
এর পরেই সোমবার ওই বিষয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁরা বলেন, এটা বঙ্গ সংস্কৃতি নয়! মন্ত্রী শশী বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতি করি, তারা যদি কোনও ব্যক্তিকে আক্রমণ করি, তা হলে আমি মনে করি অন্যরাও অপমানিত বোধ করেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক জন মায়ের সন্তান। তাঁর পিতৃপরিচয় নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী, তাতে তাঁর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেন’ তিনি আরও বলেন, ‘এ সব উক্তি পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। নারীশক্তিকে অপমান করেছেন শুভেন্দু। এক জন মা হিসাবে, এক জন রাজনীতিক হিসাবে আমি শুভেন্দুর মন্তব্যে লজ্জিত!’’
পাশাপাশিই শশী শুভেন্দুকে ‘বিকৃতমনস্ক’ এবং ‘ব্যর্থ রাজনীতিক’ বলে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর কথায় ‘আমি কি ধরে নেব যে উনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন?’
নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের ভোটগণনা বিতর্কের কথা তুলে শশী বলেন, ‘রাজনীতি হবে ইস্যুভিত্তিক। কোনও ব্যক্তি আক্রমণের স্থান নেই সেখানে। সস্তা হাততালির জন্য কোনও রাজনীতিকেরই কুমন্তব্য করা উচিত নয়। বিরোধীদলের উচিত শিষ্টাচার-শিক্ষা নেওয়া!’
কুণাল ঘোষ বলেন, ‘শুভেন্দু কেন অভিষেককে এত হিংসা করেন? রাজনীতিতে বিরোধিতা থাকবে। কখনও তা তীব্রও হবে। কিন্তু পিতৃপরিচয় তুলে আক্রমণ কেমন ধরনের রাজনীতি?’ কুণালের বক্তব্য, অভিষেককে দেখে এখনই পা কাঁপছে শুভেন্দুর। তিনি বলেন কথায়, ‘অভিষেক নির্বাচিত সাংসদ। দু’বার জিতেছেন। নিজেকে তৈরি করছেন। শুভেন্দুর থেকে তিনি প্রায় ১৫ বছরের ছোট। এখনই তাঁকে দেখে পা কাঁপছে শুভেন্দুর! এর পরে কী হবে?’ পাশাপাশিই তৃণমূলের নেতারা জানান, আগামিদিনে অভিষেক এ নিয়ে কী পদক্ষেপ করবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে দল এটা অনুমোদন করে না।