বাংলা হান্ট ডেস্ক: WWE-র জগতে “দ্য গ্রেট খালি” একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নাম। পাশাপাশি, আমাদের দেশেও তাঁর নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এক কথায়, সমগ্র বিশ্ব আজ তাঁকে চেনে। তবে, WWE-তে আন্ডারটেকারকে নাকানিচোবানি খাওয়ানো গ্রেট খালির গলি থেকে রাজপথের সফরের যাত্রা কিন্তু মোটেও সহজ ছিলনা! বরং প্রতি পদক্ষেপে তাঁকে করতে হয়েছে ভীষণ লড়াই।
“দ্য গ্রেট খালি”র আসল নাম দলীপ সিং রানা। যদিও, সর্বত্রই তিনি পরিচিত গ্রেট খালি হিসেবেই। ১৯৭২ সালের ২৭ আগস্ট হিমাচল প্রদেশের সিরমুর জেলার ধীরাইনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন খালি। ছোট থেকেই তীব্র অভাবের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে। একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তিনি তাঁর ছোটবেলার কথা তুলে ধরেছিলেন।
সেখানে তিনি জানান যে, এমনও দিন তিনি দেখেছেন যখন খালির দরিদ্র বাবা-মা তাঁর স্কুলের ফি বাবদ মাত্র আড়াই টাকাও দিতে পারেননি। শুধু তাই নয়, ওই কারণে তাঁর নামও স্কুল থেকে বাদ দেওয়া হয়। এমনকি, ৮ বছর বয়সে দিনে পাঁচ টাকা রোজগারের জন্য তাঁকে গ্রামে বাগানের কাজও করতে হয়েছিল।
এদিকে, ছোটবেলায় সকলেই খালির শরীরের গঠনের কারণে তাঁকে নিয়ে মজা করত। তবে, সমস্ত কিছুকে উপেক্ষা করে দৃঢ় সংকল্পের জেরে খালি আজ সেই জায়গা অর্জন করেছেন যা এর আগে কোনো ভারতীয় কুস্তিগীর করতে পারেননি। তিনিই প্রথম ভারতীয় কুস্তিগীর যিনি, WWE-তে নিজের নাম স্বমহিমায় উজ্জ্বল করেছেন।
“দ্য ম্যান হু বিকেম খালি” নামের একটি বইয়ের মাধ্যমে এই দুরন্ত কুস্তিগীরের জীবনের অনেক দিকই সামনে আনা হয়েছে। খালি এবং বিনীত কে.বনসাল যৌথভাবে এই বইটি লিখেছেন। ওই বইটি মারফত জানা গিয়েছে যে, ১৯৭৯ সালের এক গ্রীষ্মের দিনে তাঁকে তাঁর স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
বৃষ্টির অভাবে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে খালির বাবা-মায়ের কাছে স্কুলের ফি দেওয়ার মতো টাকা ছিল না। এমনকি, সেদিন অপমানও করা হয় তাঁকে। পাশাপাশি, খালির সহপাঠীরাও বিষয়টি নিয়ে মজা করতে থাকে। এদিকে, এরপরই খালি সিধান্ত নেন যে, আর কখনও স্কুলে যাবেন না তিনি।
এই প্রসঙ্গে খালি জানান, এরপর পরিবারকে সাহায্য করার জন্য আমি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ঠিক তখনই তিনি একদিন জানতে পারেন যে, গ্রামে দিনমজুরির জন্য লোকের প্রয়োজন, যেখানে মজুরি হবে ৫ টাকা। তখন এই টাকাটাই তাঁর কাছে ছিল অনেক। তাই, বাবার বারণ সত্বেও তিনি ওই কাজে যোগ দেন।
ওই কাজের জন্য তাঁকে পাহাড়ের চার কিলোমিটার নিচে থাকা এক গ্রামের নার্সারি থেকে চারা নিয়ে এসে রোপণ করতে হত। সব চারা রোপণের পর নতুন গাছ আনতে যেতে ফের নিচে যেতে হত তাঁকে। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান যে, ” আমার প্রথম মজুরি পাওয়ার সেই মুহূর্তটা এখনো মনে আছে। সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে পারব না। আমি কঠোর পরিশ্রমের জন্য সবকিছু অর্জন করেছি। আমি এখনও আমার মায়ের হাতে খেতে পছন্দ করি, কিন্তু এখন তাঁর বয়স হয়েছে।”
এদিকে, একসময় স্কুলের আড়াই টাকা দিতে না পারা “দ্য গ্রেট খালি” আজ প্রায় ৯৬ কোটি টাকার মালিক। তবে, এই বিপুল সম্পত্তির মালিক হতে তিনি তীব্র পরিশ্রম এবং লড়াই করেছেন। এক্কেবারে শূন্য থেকে শুরু করে তিনি যেভাবে নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, সেই কাহিনি নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণা জোগাবে সবাইকে।