বাংলা হান্ট ডেস্ক: বিদ্যালয়ের গন্ডী পেরোনোর আগেই তিনি ফেল করেছিলেন দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায়! তবে, ভেঙে পড়েননি তিনি! বরং অসফল হয়ে সফল হওয়ার জেদে কঠোর পরিশ্রম আর গভীর নিষ্ঠার সাথে তিনি শুরু করে ফেলেন মাশরুম চাষ। আর সেখানেই সফলতার শীর্ষে পৌঁছে যান হরিয়ানার হিসার জেলার সালেমগড় গ্রামের ২৪ বছরের যুবক বিকাশ ভার্মা।
সফল হওয়ার পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই তিনি মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষকে। বিকাশ হরিয়ানার হিসারে “বেদান্ত মাশরুম” নামে একটি কৃষি সংস্থা চালান। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে প্রায় ছয় বছর আগে এটি শুরু করেন তিনি। শুরুতে তেমন লাভ না হলেও আজ প্রতিদিন ৪০-৫০ হাজার টাকার ব্যবসা করছেন বিকাশ।
কিভাবে তিনি এই চাষ শুরু করলেন সেই প্রসঙ্গে বিকাশ জানান যে, “২০১৬ সালে আমি দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি তাতে ব্যর্থ হই। যদিও, আমি তা পাত্তা দিইনি এবং পুনরায় চেষ্টাও করিনি।” তিনি আরও বলেন, “আমার বাবা তাঁর পাঁচ একর জমিতে ফসল চাষ করতেন এবং আমিও কৃষিকাজ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অন্যভাবে। এরপর আমি মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিতে এক বন্ধুর সঙ্গে সোনিপত যাই।”
সোনিপত থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর নিজের বাড়িতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে বিকাশ বলেন, “প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আমি নিজেই কম্পোস্ট তৈরি করেছি। কিন্তু সফল হইনি। প্রথম বছরেই আমার প্রায় দু’লক্ষ টাকা লোকসান হয়। তবে আমি সাহস হারাইনি এবং বাড়ির কাছ থেকেও পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি।”
লোকসানের ব্যাপারে তিনি জানান, “আমি বাটন মাশরুম দিয়ে চাষ শুরু করেছিলাম। এটি বৃদ্ধির জন্য ২০-২২ ডিগ্রি তাপমাত্রা প্রয়োজন। এই অর্থে, শীতকাল এই চাষের জন্য সেরা ঋতু। তারপরে এটি বৃদ্ধি করা বেশ কঠিন। আমি বছরে দু’বার এটি বাড়াচ্ছিলাম। পাশাপাশি, কম্পোস্ট তৈরিতে অনেক ভুলও হয়েছিল। এছাড়াও বাটন মাশরুমের জীবনকাল মাত্র ৪৮ ঘন্টা। ওই সময়ে মাশরুম বিক্রি না হলে কৃষকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।”
যদিও, প্রথমবারে ধাক্কা খাওয়ার পর ফের নতুনভাবে শুরু করেন বিকাশ। তিনি বলেন, “প্রথম বছরে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার পরেও, আমি আমার মনোবল বজায় রেখেছিলাম এবং পরের বছর আরও ভাল প্রশিক্ষণের জন্য হিসারের চৌধুরী চরণ সিং হরিয়ানা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। এখানে আমি আমার ভুলগুলো শুধরে নিয়েছি এবং শিখেছি কিভাবে মাশরুম চাষে মূল্য সংযোজন করতে হয়। তারপর আমি প্রথম বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেরেছি।”
তারপর তিনি একে একে বিভিন্ন জাতের মাশরুম চাষ শুরু করেন। বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় সেগুলি বিক্রিও হত চড়াদামে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির মাশরুম যক্ষ্মা, থাইরয়েড, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো অনেক রোগে কার্যকরী বলে চাহিদাও বাড়তে থাকে।
চাষের পাশাপাশি, বিকাশ মাশরুম দিয়ে বিস্কুটও তৈরি করেন। তিনি জানান “৫ কেজি বিস্কুট বানাতে এক কেজিরও কম মাশরুম লাগে। এতে ময়দা, দুধ, ঘি সহ অনেক কিছু মেশানো হয়। আমরা ১ কেজি বিস্কুট ৫০০ টাকায় বিক্রি করি। সেই সঙ্গে বাকি মাশরুম থেকেও আমরা বিভিন্ন ধরণের খাদ্যদ্রব্য তৈরি করি। এভাবে প্রায় এক কেজি মাশরুম থেকে আমরা প্রায় ৮০০০ টাকা পাই। যার মধ্যে ৬০০০ থেকে ৬৫০০ টাকা আমাদের পুরো লাভ থাকে।”
এছাড়াও, মাশরুম চাষের পাশাপাশি, বিকাশ তাঁর এক একর জমিতে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে টমেটো, শসা, বাঁধাকপি, তরমুজের মতো অনেক সবজি চাষ করেন। যার কারণে তিনি বছরে প্রায় আট লক্ষ টাকা আয় করেন। এজন্য তিনি হাইড্রোপনিক্স, ড্রিপ ইরিগেশনের মতো অনেক আধুনিক কৌশল অবলম্বন করেছেন।
তাঁদের এই পুরো কাজ পরিচালনার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন লোকের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও বিকাশ প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ১০ হাজার মানুষকে। তিনি বলেন, “আমি একজন কৃষকের ছেলে এবং যতটা সম্ভব আমার অভিজ্ঞতা ভাগ করতে চাই। আজ কৃষিতে সুযোগের অভাব নেই, শুধু মানুষ সম্পূর্ণ তথ্য পাচ্ছে না। পাশাপাশি, আজ কোন বাবা তাঁর ছেলেকে কৃষক বানাতে চান না। তবে কৃষিতে অনেক সুযোগ রয়েছে।”