বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: গ্রামের মেয়ের রাস্তার কাঁচা ধুলোমাখা পথ ছেড়ে ফুটবলের রাজপথে উঠে আসা, যদিও লড়াইটা কখনই সহজ ছিল না মমতার জন্য। গরিব সাঁওতালি পরিবারের মেয়ে ফুটবলের মঞ্চে নামবে। তার কাছে না আছে মাঠ, না আছে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। আর্থিক সমস্যার কথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের দরিদ্র সাঁওতাল পরিবারের কন্যা মমতা হাঁসদা বুট পরে ফুটবল পায়ে মাঠ দাপিয়েছে।
এতদিনে নিজের পরিশ্রমের যোগ্য স্বীকৃতি পেলেন মমতা। ঝাড়গ্রামের কন্যা এবার ভারতের মহিলা ফুটবল দলে খেলবেন। এবার মমতাকে নীল জার্সি পরে খেলতে দেখা যাবে। এই খবরে খুশির হাওয়া বইছে জঙ্গলমহলে। দেশের হয়ে ফুটবল খেলার সুযোগ পাওয়ার খবর পেয়ে জঙ্গলমহলের তারকা ফুটবলার জানান, ‘দেশের জার্সি পরে মাঠে নামবে তাতে খুব খুশি আমি। বাংলার নাম উজ্জ্বল করার চেষ্টা করবো। বরাবরই বাড়ির লোকের সহযোগিতা পেয়ে এসেছি, আমার কোচ অশোক সিংহ-রও এই জায়গায় পৌঁছনোর পেছনে অবদান অনেক। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া আমার কাছে অত্যন্ত গর্বেরব্যাপার’।
মমতার বাবা পৃথিবীতে নেই অনেকদিন। মা, দাদা আর দুই দিদির পর পরিবারের সবচেয়ে ছোট সমস্যা মমতা। চাষবাস করে কোনওরকমে সংসার চলে। মমতার কোচ অশোক সিংহ তার ছাত্রীর প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘আমার ছাত্রী ভারতের হয়ে ফুটবল খেলার সুযোগ পাওয়ায় গর্ব বোধ করছি। বরাবরই বিশ্বাস করে এসেছি যে একদিন আমাদের এলাকার মেয়েরাও সুযোগ পাবে বড় মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করার’। তাঁর কথায়, জঙ্গলমহলের মেয়েদের প্রতিভার অভাব নেই, অভাব রয়েছে সঠিক পরিকাঠামোরকোচের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মমতা হাঁসদাও। তাঁর কথায়, অশোক স্যার না থাকলে আমার ফুটবল খেলাটাই হতো না।
আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতে পারতেন না মমতা। ২০১১ সাল থেকে ফুটবলের প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার পর মমতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল শারীরিক সমস্যাকে হার মানানো। নিজের অদম্য জেদ কাজে লাগিয়ে সেই বাঁধা অতিক্রম করে মমতা। ২০১৪ সালে স্কুল টিমের সাথে দিল্লিতে সুব্রত কাপ খেলতে যায় সে। ২০১৫ সালে তাঁর দল সেই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় এবং মমতা হয় টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার। এরপর আর পেছন ফিরে দেখতে হয়নি। ২০২০ তে ইস্টবেঙ্গলের ক্লাবের হয়ে কন্যাশ্রী কাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে জাতীয় নির্বাচকদের নজরে আসেন মমতা। তারপর সুযোগ আসতে সময় লাগেনি। এবার দারিদ্রের সাথে লড়ে নিজেকে এই জায়গায় তুলে আনা মমতার লক্ষ্য দেশের জার্সিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার।