বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বাংলা তো বটেই, বিগত কয়েক বছরে জাতীয় রাজনীতিরও অতি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ভাইপো নন, তিনি হয়ে উঠেছেন একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ। সাংসদ হিসেবে তাঁর ডায়মন্ড হারবার মডেল (Diamond Harbour Model) নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে। সেই সঙ্গেই শিরোনামে উঠে এসেছে তৃণমূলের অন্দরের ‘বিভাজনে’র জল্পনা।
‘পরিবর্তন’ আনতে উদ্যোগী অভিষেক (Abhishek Banerjee)!
ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ হওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলের (Trinamool Congress) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড তিনি। সম্প্রতি নিজের লোকসভা ক্ষেত্র জুড়ে সেবাশ্রয় কর্মসূচির সূচনা করেছেন। তৃণমূলের দাবি, এই কর্মসূচির মাধ্যমে মাত্র ৭ দিনের মধ্যেই ১ লক্ষ মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন।
যদিও এই প্রথম নয়, এর আগেও ডায়মন্ড হারবারের বুকে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে নিজ লোকসভা ক্ষেত্রের প্রায় ১ লক্ষ প্রবীণ নাগরিককে বার্ধক্য ভাতার আওতায় এনেছেন তৃণমূল নেতা। এবার সেখানকার মানুষদের জন্য সেবাশ্রয় কর্মসূচির সূচনা করলেন তিনি।
এদিকে ডায়মন্ড হারবার মডেল ব্যাপফ সাফল্য পেলেও, এর ফলে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে এসে পড়েছে রাজ্য সরকারের মডেল। তাদের দাবি, যদি অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার মডেল সাফল্যমণ্ডিত হয়, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের (Government of West Bengal) মডেলে নিশ্চয়ই কোনও ত্রুটি রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ‘রাজ্য সরকার সম্ভবত…’! স্যালাইন কাণ্ডে বড় মন্তব্য হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির! জোর শোরগোল
বিগত ১৫ বছর ধরে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। রাজ্য সরকারের অংশ নন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তবে সাম্প্রতিক অতীতে তৃণমূলেরই একাধিক নেতা তাঁকে এই ভূমিকায় দেখার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। কেউ তাঁকে ‘ভবিষ্যতের মুখ্যমন্ত্রী’ তকমা দিয়েছেন, কেউ আবার ‘পুলিশমন্ত্রী’ হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। সেই আবহে ফের একবার শিরোনামে উঠে এসেছে দলের প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্বের কথা।
অভিজ্ঞ নেতা নাকি তরুণ তুর্কি, তৃণমূলের (TMC) অন্দরে কাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে? এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জল্পনা কল্পনা চলছে। অভিষেক এর আগে রাজনীতির ক্ষেত্রেও ‘অবসরে’র কথা বলেছিলেন। তবে গত ডিসেম্বর মাসে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা স্পষ্ট বলেন, ‘আমি এখনও এখানে আছি। আমিই শেষ কথা’। এরপরেই দলের বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেয় তৃণমূল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এই নেতারা জনসমক্ষে অভিষেকের ভূমিকার প্রশংসা করেছিলেন।
আরজি কর কাণ্ডের সময় মমতা এবং সরকারের সমালোচনা করা শিল্পীদের বয়কটের ডাক তুলেছিলেন তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা মন্ত্রী। তবে অভিষেক সেক্ষেত্রে অন্য অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মানুষের কাছে প্রতিবাদের অধিকার রয়েছে। তবে দলের ‘অনুগত’রা স্পষ্ট জানান, দলনেত্রীর কোনও অপমান তাঁরা সহ্য করবেন না। কেউ কেউ এও দাবি করেন, আন্দোলনের সময় দূরে ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি জানেন না, সেই সময় দল এবং দলনেত্রীকে কতখানি সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
নেতা হিসেবে অভিষেক (Abhishek Banerjee) বরাবর ‘প্রফেশনাল’ ও ‘রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড’ কাঠামোর কথা বলেছেন। তিনি ফলাফল দিয়ে নেতা, কর্মীদের বিচার করার পক্ষপাতী। তবে দলের অন্দরে এমন অনেক নেতা-কর্মী রয়েছেন যারা এই ‘কাঠামো’য় ঠিক ‘ফিট’ হন না। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেই কারণে হয়তো দলের ‘পুরনো’রা স্থিতাবস্থাতেই বিশ্বাসী। যেমনটা চলছে, তেমনটা চলতে দেওয়ার পক্ষপাতী তাঁরা। এদিকে ‘বদল’ আনতে উদ্যোগী অভিষেক ডায়মন্ড হারবারের বুকে নিত্যনতুন কর্মসূচি গ্রহণ করছেন। পাশাপাশি হয়তো প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, দলের পরবর্তী নেতা হওয়ার যাবতীয় গুণ রয়েছে তাঁর মধ্যে। এমনটাই অনুমান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।