বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কেষ্ট জেল থেকে ফেরার পর থেকেই ফের প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। জেল থেকে ফিরেছেন কদিন হল। এরই মাঝে গোটা বীরভূম জুড়ে চর্চার শিরোনামে ফের সেই অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। বাংলায় ফিরেই ফের স্বমহিমায় কেষ্ট। অনুব্রত বীরভূমের (Birbhum) ফেরার পর এবার মনে করা হচ্ছে মমতার নিজের হাতে গড়ে দেওয়া কোর কমিটির সঙ্গে কাজল শেখের ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়ে গেল! হঠাৎ কেন এমন বলা হচ্ছে?
অভিযোগ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখের সঙ্গে চা খাওয়ার অপরাধে পদ গেল দলেরই বুথ সভাপতির। বীরভূমের সদাইপুর থানার লালমোহনপুরের বুথ সভাপতি শেখ খয়রাত ওরফে কটা নিজে এই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন। সিউড়ির বিধায়ক তথা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর নির্দেশেই তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
ঘটনা কি? ৩১ তারিখ সিউড়ি ১ নম্বর ব্লকের কচুজোড়ে সারদা সন্তান সংঘের কালী পুজোর উদ্বোধন করার পর জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ একটা চা চক্র করেন। সেখানেই ছিলেন সদাইপুর থানার ভরকুনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬ নম্বর সংসদ লালমোহনপুর বুথ সভাপতি শেখ খয়রাত ওরফে কটা। তার অভিযোগ, শুধুমাত্র কাজল শেখের চা চক্রে অংশ নেওয়ার জন্যই তার পদ এভাবে কেড়ে নেওয়া হল। এদিকে কটাকে সরিয়ে নতুন বুথ সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শেখ গিয়াসউদ্দিনকে।
খয়রাতের অভিযোগ, “বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী ও সদাইপুর থানার ওসি মিখাইল মিয়া মিলে শুধুমাত্র কাজল শেখের সঙ্গে চা খাওয়ার অভিযোগে আমাকে পদ থেকে সরিয়েছে। আমি বিধায়ককে গোটা বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, কাজল শেখের লোক হয়েছিস কী আর করা যাবে। বাকি নেতাদের পায়ে ধরে থাক। আমি কাজল শেখকেও এই বিষয়ে জানাব।”
অভিমানের সুরে তিনি আরও বলেন, “আজ ১২ বছর ধরে আমি দলের বুথ সভাপতির পদ সামলেছি। ভোটে লিড দিয়েছি। আর দলের নেতার সঙ্গে চা খাওয়ার অপরাধে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল?” প্রসঙ্গত, অনুব্রত জেলে যাওয়ার পর বীরভূমে তৃণমূলের এক কোর কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন মমতা। রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বিধানসভার উপাধ্যক্ষ আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ এবং তৃণমূল নেতা সুদীপ্ত ঘোষকে নিয়ে গঠিত হয় সেই কমিটি।
লোকসভা ভোটের মুখে প্রথমে ৫ সদস্যের কোর কমিটি তৈরি করে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রত ঘনিষ্ঠদেরই সেখানে প্রভাব অধিক ছিল। পারে অবশ্য অনুব্রত বিরোধী হিসেবে পরিচিত কাজল শেখকেও কমিটিতে নেওয়া হয়। গরু পাচার মামলায় প্রায় দু’বছর জেলে ছিলেন অনুব্রত। সেই সময়ের মধ্যে অনুব্রতর ‘চেয়ার’ কাউকে না দিলেও সব ক্ষমতা ছিল কোর কমিটির হাতেই। সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনেও ভালো মতো দায়িত্ব সামলেছে সেই কোর কমিটি। জেলায় বিপুল ভোটের জয়ী হয়েছে তৃণমূল। যদিও কেষ্ট জেল থেকে ফেরত এলেও এখনও সেই কোর কমিটি রয়েছে।
আরও পড়ুন: অবশেষে বাংলায় বাড়ছে DA! এবার কত শতাংশ? সরকারি কর্মীদের দীর্ঘ আন্দোলনে জয়?
গত ১৭ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তৃণমূলের একাধিক বিজয়া সম্মীলনির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন অনুব্রত। অনুব্রতর সঙ্গে কোর কমিটির বাকি সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও কোনো মঞ্চেই কাজল-কেষ্টকে এক সঙ্গে দেখা যায়নি। এর থেকেই বহু জিনিসপরিষ্কার। কাজলের সঙ্গে অনুব্রতর ও কাজলের সঙ্গে কোর কমিটির বাকিদের সংঘাত যে দিন দিন বাড়ছে তা কার্যত চোখে পড়ছে সকলেরই।