বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছেছে নারদ কান্ড নিয়ে। ২০১৬ সালে ভিডিও প্রকাশের পর থেকেই জনপ্রতিনিধিদের টাকা নেওয়ার দৃশ্যে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এরপর থেকে নির্বাচনে বারবারই ইস্যু হয়েছে নারদ কান্ড। ব্যতিক্রম নয় ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনও।তবে আজ সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং নবনির্বাচিত কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। সাথে সাথে গ্রেপ্তার করা হয় শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। এই ঘটনা নিয়ে এখন রীতিমত চরম উত্তেজনা।
এই গ্রেপ্তার অনৈতিক বলে ইতিমধ্যেই নিজাম প্যালেসে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে গিয়ে ১৫ তলায় সিবিআইয়ের দপ্তরের সামনেই ধরনা দেন তিনি। চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, তাকেও গ্রেপ্তার করা হোক এবং যতক্ষণ না গ্রেফতার করা হচ্ছে ততক্ষণ সিবিআই দপ্তর ছেড়ে যাবেন না তিনি। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকরা। নিজাম প্যালেসের সামনে গিয়ে জমায়েত করে ইট-পাথর বৃষ্টি শুরু করেন তারা। ঘটনা এতটাই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছিল রাজ্য পুলিশকে।
এরই মাঝে পরপর তিনটি টুইট করে ফের একবার জ্বলতে থাকা আগুনে ঘৃতাহুতি করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। অন্তত এমনটাই দাবি তৃণমূল সমর্থকদের। রাজ্যে এই সংঘর্ষ দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে নিজের প্রথম টুইটে রাজ্যপাল লেখেন, “রাজ্যের এই পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন, মুখ্যমন্ত্রীকে আমি বলব, দয়া করে সংবিধান এবং আইন মেনে চলুন। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অনুরোধ করব পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ, কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকেও। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয় যে, পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে দেখেও প্রশাসন এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।”
নিজের দ্বিতীয় টুইটেও একইভাবে রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতা কে সামনে আনেন তিনি। তার মতে নীরব দর্শকের মতোই দাঁড়িয়ে রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। তিনি লেখেন, “প্রতি মিনিটে অবনতি হচ্ছে পরিস্থিতির। অথচ পুলিশ এবং প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছে, আশা করি এই ধরনের আইন-শৃঙ্খলাহীন পরিস্থিতির পরিণতি কি তা আপনি বোঝেন। এটি আসলে সাংবিধানিক পরিকাঠামোর ব্যর্থতা।”
নিজের তৃতীয় টুইটেও তিনি জানান সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা দেখে তিনি তাজ্জব। মুখ্যমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “টিভিতে এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে এই ঘটনা দেখে আমি তাজ্জব। আমি এ ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তিনি দেখুন, কী ভাবে এই সব ঘটনা ঘটতে দেখেও রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশ স্রেফ দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। আমার অনুরোধ, রাজ্যে দ্রুত আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যবস্থা করুন।”
রাজ্যপালের পরপর এই তিনটি টুইটেও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। নিজাম প্যালেস ছেড়ে রাজ ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। তাদের মতে, এমনিতেই যখন রাজ্যে সৃষ্টি হয়েছে রীতিমতো জটিল পরিস্থিতি। তখন একের পর এক টুইট করে সেই আগুনে ঘি ঢালার কাজ করছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। সূত্রের খবর অনুযায়ী রাজভবনের একদম গেটের সামনেই বসে পড়েন তারা। শুধু তাই নয় অনেকে গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, যতক্ষণ অভিযুক্তদের ছাড়া না হবে ততক্ষণ তারা রাজভবনের সামনে থেকে নড়বেন না। রাজভবনের সব গেটের সামনেই বর্তমানে বিক্ষোভ চলছে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের। রাজ্যপাল টুইট করার আগে নিজাম প্যালেসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করছিলেন কর্মীরা। পুলিশের দিকে ইট, কাচের বোতলে ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই অবশ্য বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়েছিল বিপুল কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে রাজ্যপালের এই ট্যুইটের পর ফের একবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল পরিস্থিতি। এখন এ বিষয়ে নতুন কি সমীকরণ তৈরি হয় সেদিকে নজর থাকবে সকলের।
‘ভারত আজ পর্যন্ত অলিম্পিকে সোনা পায়নি …’ ভরা মঞ্চে বেফাঁস মমতা