বাংলাহান্ট ডেস্ক: সামান্য এক ফল বিক্রেতা। দিন আনা দিন খাওয়া সংসার। তবে এই ফল বিক্রেতার আত্মহত্যা বদলে দিয়েছে বিশ্ব রাজনীতির চেহারা। তিউনিশিয়ার (Tunisia) ফল বিক্রেতা মোহাম্মদ বোয়াজিজি (Mohamed Bouazizi) ২০১০ সালের ১৮ ডিসেম্বর পুলিশের দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন প্রকাশ্য রাস্তায়।
তিউনিশিয়ায় (Tunisia) তোলপাড়
সেই ফল বিক্রেতার আত্মহুতি মুহূর্তে স্ফুলিঙ্গের মতো প্রতিবাদের জন্ম দেয় তিউনিশিয়া (Tunisia) সহ আরবের বিভিন্ন রাষ্ট্রে। পশ্চিমী মিডিয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই গণ অভ্যুত্থানকে ‘আরব বসন্ত’ নামে আখ্যায়িত করে। ২০১০ সালে শুরু হওয়া এই বিদ্রোহ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে আলজেরিয়া, জর্ডান, মিশর ও ইয়েমেনে।
তিউনিসিয়ায় (Tunisia) জেসমিন বিপ্লবের ফলে পতন ঘটে সেদেশের শাসক জেন এল আবেদিন বেন আলির। এরপর ২৫ জানুয়ারি থেকে বিদ্রোহের আগুনে জ্বলতে শুরু করে মিশরে। ১৮ দিনের এই গণ অভ্যুত্থানে মিশরের ৩০ বছরের প্রেসিডেন্ট মুবারক ১১ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। দেশ ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নেন সৌদি আরবে।
আরোও পড়ুন : বড় হলে মেয়ের ক্ষতি করবে অন্য কেউ! ভয় পেয়ে নিজেই মেয়েকে খুন করলেন মা
খানিকটা ভিত হয়ে, বলা ভালো পরিস্থিতি আগাম আঁচ করতে পেরে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে বাধ্য হন জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ। ইয়েমেনের ৩৫ বছরের রাষ্ট্রপতি আলি আব্দুল্লাহ সালেহ ঘোষণা করেন তিনি ২০১৩ সালের পর সরে যাবেন পদ থেকে।এরপর ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর লিবিয়ার ৪২ বছরের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে জনতা প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে হত্যা করে।
একের পর এক রাষ্ট্রনেতাদের এহেন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিণত হয় আরব সহ আফ্রিকার একাধিক রাষ্ট্র। গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সূচনা হয় নতুন যুগের। তবে এই ‘আরব বসন্ত’ (Arab Spring) আদৌ কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে দ্বিমত। আরব ছাড়িয়ে এই বিপ্লবের আগুন কিন্তু ছড়িয়ে পড়েছিল আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও।
আরোও পড়ুন : ‘দেখা করা মানেই সমঝোতা নয়’! প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে বিস্ফোরক প্রধান বিচারপতি
বিভিন্ন প্রতিবেদন দাবি করেছে, এই গণ অভ্যুত্থানে আহতর সংখ্যা প্রায় ১৯ লাখ। প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ শেষ হলেও ‘আরব বসন্ত’ -এর আগুন এখনো ধিকি ধিকি ভাবে জ্বলছে আলজেরিয়া, বাহরাইন, জিবুতি, মিশর, ইরান, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, মৌরিতানিয়া, সিরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন, মরক্কো, পশ্চিম সাহারা, ওমান, সৌদি আরবের মতো দেশগুলিতে।
গণ অভ্যুত্থানে সিরিয়ার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। এসসিপিআরের বলছে, ‘আরব বসন্ত’ চলাকালীন যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণে নিহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষ। চিকিৎসা ও ওষুধের ঘাটতি, সংক্রামক ব্যাধি, খাবার ও জলের অভাবে প্রাণ গেছে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের।
এমনকি এই যুদ্ধের পরোক্ষ আঁচ এসে পৌঁছেছে আমেরিকা ও ইউরোপেও।’দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান’ – খানিকটা এই মন্ত্রেই যেন দীক্ষিত হয়ে আরবের জনগণ বেছে নিয়েছিলেন গণ অভ্যুত্থানের পথ। আরবের রুক্ষ-শুষ্ক মরুভূমিতে সাধারণ মানুষের ‘বসন্ত’ আনার এই প্রচেষ্টা কিন্তু স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়।