বাংলাহান্ট ডেস্ক : ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে বড় যে দুর্নীতি নিয়ে জলঘোলা হয় তা হল সারদা (Sarada Scam) এবং নারদা মামলা (Narada Scam)। এবার এই সারদা এবং নারদা মামলার সঙ্গে তুলনা করা হল শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলাকেও (SSC Scam)। এদিন এক বিচারপতি বললেন, ‘আমি চাই না, এটি সারদা-নারদ হয়ে যাক।’ অপর বিচারপতির মন্তব্য করলেন, ‘এটা বিশাল দুর্নীতি। সারদা-নারদ না-হয়ে যায়!’
শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ‘এটি’ এবং ‘এটা’ বলতে যে-দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তকে উল্লেখ করেছেন তা হল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি। এই মামলার তদন্তের ধীর গতি নিয়ে আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আদালত। সেই দুর্নীতির তদন্তে গঠিত সিবিআইয়ের ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তদলে একাধিল বদলও করা হয়। তার পরও যে দুর্নীতি-রহস্যের সুরাহা নিয়ে বিচারপতিদের সন্দেহ রয়েছে, তার মূলে আছে রাজ্যের সাম্প্রতিক কালের দুই বড় কেলেঙ্কারি— সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক নয়ছয় আর নারদ কাণ্ডে কিছু নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ।
সারদা কেলেঙ্কারির দশ বছর পূর্ণ হতে চলল। বছর পাঁচেক পেরিয়ে গিয়েছে নারদ মামলাও। কিন্তু ওই দুই কেলেঙ্কারির তদন্ত এই মুহূর্তে ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে, তার জবাব কারও কাছে আছে কি না— সেই বিষয়ে আদালত থেকে আমজনতা, সকলেরই যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, সারদা-নারদ মামলার তদন্ত অতলে তলিয়ে গিয়েছে।
হাই কোর্টের দুই বিচারপতির পর্যবেক্ষণে। একই দিনে তদন্তের অবস্থা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সারদা এবং নারদ কাণ্ডের উদাহরণ টেনে এনেছেন দুই বিচারপতি। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের সিটে রদবদল করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে একেবারেই সন্তুষ্ট ছিলনা হাই কোর্ট। এ দিন সিটের শীর্ষ কর্তা নিয়োগের সময়েই তদন্তে বিলম্বের প্রসঙ্গ তোলেন মামলাকারীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। তখনই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘আমি চাই না, এটি সারদা-নারদ হয়ে যাক।’ কিছু দিন আগেই তিনি মন্তব্য করেন, স্কুলে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মূল চক্রীর গ্রেফতারি তাঁর জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারবেন কি না, সেই বিষয়ে তাঁর সন্দেহ রয়েছে।
‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে এ দিন অন্য একটি মামলা ছিল বিচারপতি বসুর এজলাসে। সেখানেও মামলাকারীদের হয়ে উপস্থিত ছিলেন সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। তিনি জানান, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে সিবিআইয়ের রিপোর্ট দেখে বিচারপতি বসু বলেন, ‘এটা সারদা-নারদ না-হয়ে যায়!’
আইনজীবীরা মনে করছেন, সারদা ও নারদ কাণ্ডের মতো বড় মাপের দুর্নীতির তদন্ত উধাও হয়ে গিয়েছে। সাধারণের মনেও সারদা-সহ বিভিন্ন বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা এবং নারদ কাণ্ডের তদন্ত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে সারদা-রোজ় ভ্যালি কাণ্ডে বহু সাধারণ মানুষের অর্থ জড়িত। এখনও সেই টাকা ফিরে পাওয়ার আশায় রয়েছেন তাঁরা।