দু পয়সার সাংবাদিক! একের পর এক মুখ খুললেন টলিউড তারকারা

Published On:

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ নদিয়ার গয়েশপুরে দলীয় কর্মীদের নিয়ে রবিবার এক বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। সেই বৈঠকেই কিছু কারণে উত্তেজিত হয়ে এক বেফাঁস মন্তব্য করেন তৃণমূল সাংসদ, যা নিয়ে তোলপাড় চলছে গোটা বাংলায়। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘দুপয়সার প্রেস, ওদের সরাও’।

তৃণমূল সাংসদের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে শুধুমাত্র সংবাদ দুনিয়াই নয়, সরব হয়েছেন রাজনীতিবিদ থেকে চলচিত্র দুনিয়ার মানুষেরাও। মহুয়া মৈত্রের এই মন্তব্যের জেরে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তৃণমূলেরই দুই সাংসদ তথা অভিনেত্রী নুসরত জাহান ও মিমি চক্রবর্তী।

মহুয়া মৈত্রের বিপক্ষে গিয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ নিয়ে অভিনেত্রী সাংসদ মিমি চক্রবর্তী বলেন, ‘সাংবাদিকরা বিভিন্ন সংকটজনক পরিস্থিতিতেও তাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। সাধারণ মানুষের পক্ষে যাওয়া দুসাধ্য বিষয়, এমন জায়গা থেকেও খবর সংগ্রহ করে আনছেন। তারা শুধুমাত্র খবর আদান প্রদান করেই থেমে থাকে না, মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে অণুপ্রেরণা দেয়। আমার কেরিয়ারের শুরুতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য’।

মহুয়া মৈত্রের কথার প্রতিবাদ জানিয়ে সাংসদ অভিনেত্রী নুসরত জাহান বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এরকম মন্তব্য শোনা সত্যই একটি দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। গণতন্ত্রের শক্ত স্তম্ভ হল সংবাদমাধ্যম। আমাদের বাংলার সাংবাদিক বন্ধুরা যেকোন পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে সর্বক্ষণ খবর পৌঁছে দিচ্ছেন। শুধুমাত্র তাদেরকেই নয়, অন্য কাউকেই এভাবে অসম্মান করা উচিত নয়’।

অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষও মহুয়া মৈত্রকে আক্রমণ করে দুটো পোস্ট করেন। একটিতে লেখেন,  ‘সরি বললে, কখনই কোন মানুষ ছোট হয়ে যান না, বড় হন সম্মানে’। এরপরই কিছুটা কাব্যিক স্বরে দ্বিতীয় পোস্টে লেখেন, ‘অহঙ্কারের রোদচশমায় আঁধার হলেও দেশ, সবার কাছে ভরসা আজও দু’পয়সার প্রেস’।

অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত প্রথমেই মহুয়া মৈত্রের রুচিবোধের প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘দুপয়সায় কোন কিছুকে সম্বোধন করার অর্থ নিজের রুচিবোধকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো। আমরা কাউকে দুপয়সার মানুষ বলে অসম্মান করতে পারি না, তাহলে প্রকৃত অর্থে আমাদের ক্ষীণ মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সংবাদমাধ্যম এবং বিনোদন একই মুদ্রার দুই দিক। অভিনেতা অভিনেত্রীরা যেমন সংবাদমাধ্যমের মধ্যে দিয়েই সকলের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়, তেমনই সংবাদমাধ্যমও তাদের কাজ ছাড়া অচল। তাই সংবাদমাধ্যমকে ছোট করলে, বিনোদন দুনিয়ার তো গায়ে লাগবেই’।

অন্যদিকে অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তীও সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘বিনোদন দুনিয়ায় সংবাদমাধ্যম একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকেই অনেক ব্যক্তিকে অপছন্দ করেন, কিন্তু তাই বলে গোটা পেশাটাকে অপমান করা ঠিক নয়। আমিও একটা সময় সাংবাদিকতা করেছি, সব জায়গাতেই সবরকম মানুষ থাকেন’।

অভিনেতা কৌশিক সেন এবিষয়ে মহুয়া মৈত্রকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘নির্বাচনের পূর্বে দলের বিভিন্ন ভাঙ্গা গড়া দেখে হয়ত মাথা ঠিক রাখতে পারেননি মহুয়া মৈত্র। মেজাজ হারিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন। তবে সেলিব্রিটিরাই কিন্তু জনপ্রতিনিধি। তাই তাদের যা মুখে আসবে তা বললে চলে না, সমস্ত মানুষ তাদের দেখছে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। অনেক সময় সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমাদেরও ইচ্ছা করে। কিন্তু তাই বলে এই নয় যে, আমি তাঁকে আঘাত করব’।

অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রও সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে বলেন, ‘এটা মহুয়ার থেকে আশা করিনি একদমই। দুপয়সার শব্দটা সত্যই অসম্মানের। অযথা ‘বিলো দ্য বেল্ট’ আঘাত করলেন তিনি। অনেক সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যম হয়ত কোন রাজনৈতিক দলের হয়ে কথা বলেন, তবে সকল সাংবাদিক কিন্তু এখনও সম্পূর্ণরূপে বিক্রি হয়ে যায়নি’।

X