বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: কাল দক্ষিণ আফ্রিকায় ইতিহাস তৈরি করেছে শেফালী ভার্মার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলা দল। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার তারা অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলা বিশ্বকাপ জয় করেছে। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে অসাধারণ বোলিং করেছেন বাংলার তিতাস সাঁধু। এছাড়াও গোটা টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে অসাধারণ ছন্দে ছিলেন শ্বেতা শেরাওয়াত। গতকাল ফাইনালে ইংল্যান্ড কে মাত্র ৬৮ রানে আটকে ৬ ওভার বাকি থাকতেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে ফেলে ভারত।
কাল ভারতীয় দলের বোলিং ছিল অসাধারণ। ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের কাছে ভারতীয় বোলিংয়ের কোনও জবাবই ছিল না। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড মাত্র ৯৮ রান তুলে অস্ট্রেলিয়ার মতন দলের বিরুদ্ধে সেই রানই ডিফেন্ড করে নিয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় বোলাররা তাদের কালকে ওইটুকু রানও তুলতে দেননি। ভারতীয় বোলিংয়ে কাল তিতাস সাঁধু, পার্সাভি চোপড়ার পাশাপাশি দুরন্ত বোলিং করেছেন অর্চনা দেবী। কিন্তু তার আজকে এই জায়গায় পৌঁছানোর ঘটনাটা কোনরূপকাথার গল্পের চেয়ে কম নয়।
অত্যন্ত বেশি সংঘর্ষ করে আজ বিশ্বের দরবারে নিজের এবং নিজের দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পেরেছেন অর্চনা। মাত্র ৩ বছর বয়সে ২০০৭ সালে বাবাকে হারিয়েছিলেন ভারতীয় স্পিনার। এর পাশাপাশি ঠিক ৬ বছর আগে মারা যায় তার ছোট ভাইকেও হারাতে হয়েছিল তাকে। তার ছোট ভাই মারা গিয়েছিলেন সর্পদংশনে। বহু কষ্টের পর আজ অর্চনার ঘরে সুখ ধরা দিয়েছে।
মেয়ের এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর আবেগপ্রবণ অর্চনার মা। একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি আমার ১ একর খামারে কাজ করে গিয়েছি এবং তারপরেও বেঁচে থাকার জন্য আমাকে দুটি গরুর দোয়া দুধ বিক্রি করতে হয়েছিল ওই সময়। কারণ আমি অর্চনাকে বাড়ি থেকে গঞ্জ মোরাদাবাদের কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকতে পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু সেটা তখন চল ছিল না। তাই লোকেরা আমাকে কটূক্তি করতো। কিন্তু আমার কাছে কোনও উপায় ছিল না। ওখানে ভর্তি হওয়ার পর দৈনিক ৩০ টাকা বাস ভাড়ার খরচ চালনা করা আমার পক্ষে কঠিন ছিল।
কাল অর্চনা ভারতীয় দলের দ্বিতীয় সেরা বোলার ছিলেন। নিজের ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলেছেন। ভালো বোলিং করার পাশাপাশি একটি অসাধারণ ক্যাচও নিয়েছেন তিনি। গোটা টুর্নামেন্টে খুব ভালো পারফরমেন্স না করতে পারলেও আসল খেলায় তিনি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। এবার তার সামনে লক্ষ্যটা আরেকটু বড়। মহিলা আইপিএলে দল পাওয়ার সাথে সাথে ভারতীয় সিনিয়র মহিলা দলেও জায়গা অর্জন করা তার পরবর্তী লক্ষ্য।