বাংলা হান্ট ডেস্ক: জয়, পরাজয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। আপনি যদি হেরে গিয়ে আর ঘুরে দাঁড়াতে না পারেন তাহলেই বুঝবেন আপনি আসলেই দুর্বল। কিন্তু যে হেরে গিয়ে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেই আসল জয়ী। আর এবার হারকে সামনে রেখেই, শিক্ষা নিয়ে কাহিনী গড়লেন জগদীশ বাঙ্গারওয়া। ইউপিএসসি (UPSC) ক্র্যাক করে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করেছেন তিনি।
ইউপিএসসি (UPSC) ক্র্যাক করা জগদীশ বাঙ্গারওয়ারের কাহিনী:
রাজস্থানের বারমের জেলার একটি ছোট গ্রাম বায়তু শহরের বাসিন্দা জগদীশ বাঙ্গারওয়া। ছোট থেকে যে তিনি খুব মেধাবী ছিলেন তা কিন্তু নয়। এমনকি ক্লাসেও তাঁর স্থান খুব একটা ভালো ছিল না। অন্যান্যদের তুলনায় তিনি পড়াশোনায় একটু দুর্বলই ছিলেন। কিন্তু এমন নয় যে তিনি পড়াশোনাকে ভালবাসতেন না। তবে হঠাৎই দশম শ্রেণীতে এসে জোর ধাক্কা খেতে হয় তাকে। দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় তিনি ফেল হয়ে যান।
এই বিষয়ে, জগদীশ বাঙ্গারওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি যখন দশম শ্রেণীতে পড়ছেন তখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। যার ফলে তিনি ফেল করেছিলেন। যদিও পড়ে আবার দশম শ্রেণীতে পড়ে মোটামুটি ভালই ফলাফল করেন।
তবে প্রথমবারের এই ব্যর্থতা তাকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল। তবে তিনি ঘুরে দাঁড়ান। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে খারাপ ফলাফল তাকে আবারো ভেঙে দেয়। জানা যায় জগদীশ একাদশ শ্রেণীতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি অংক নিয়েছিলেন। তবে উচ্চ মাধ্যমিকে অংকে পান মাত্র ৩৮। বারবার এমন খারাপ ফলাফল করতে দেখে নিজের উপর রাগ হয় জগদীশের। এরপর তিনি ঠিক করেন না এইভাবে চলা যাবে না। জীবনে বড় কিছু করতে গেলে তাকে আরো পরিশ্রম করতে হবে।
এরপর কলেজের পড়াশুনা শুরু করেন। যদিও তিনি কখনোই সেভাবে ভাবেননি ইউপিএসসি (UPSC) পড়বেন। যেহেতু তিনি ছোট গ্রাম থেকে এসেছেন এর ফলে ইউপিএসসি (UPSC) কি সে বিষয়ে কোনো জ্ঞান ছিল না। ভেবেছিলেন পড়াশোনা করে সাধারণ চাকরি করবেন। তবে যখন তিনি জানতে পারেন সিভিল সার্ভিসের কথা, তখন থেকেই এই পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন। কলেজ সম্পন্ন করার পর প্রথমবার তিনি আরএএস পরীক্ষায় বসেন, আর এই পরীক্ষায় সফল হন। তবে জগদীশের লক্ষ্য এখানেই থেমেছিল না। তিনি স্বপ্ন দেখেন আইপিএস অফিসার হওয়ার। দিনরাত এক করে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি ইউপিএসসি (UPSC) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: ৩০০ টাকা রোজগার, দিনমজুরি করেও ছাড়েন নি পড়া! অভাবী সরফরাজের NEET’য়ে বেনজির সাফল্য
এরপর ২০১৮ সালে তিনি ৪৮৬ তম র্যাঙ্ক পেয়ে IPS পদে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি রাজকোট ডিসিপি পদে কর্মরত কর্তা। একসময় তার দূর্বলতা নিয়ে যারা ঠাট্টা করেছিলেন আজ তারাই জগদীশ বাঙ্গারওয়াকে সমীহ করে চলে। সদ্যই তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন সেই খবরও সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে তিনি বসুন্ধরা সাংওয়ানের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন। বসুন্ধরা হচ্ছেন হরিয়ানার বাসিন্দা, সব থেকে বড় বিষয় তিনি AIIMS-এর ডাক্তার।
চলতি বছরে ১২ই নভেম্বর যোধপুরের একটি রিসোর্টে গাঁটছড়া বাঁধেন। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন অনেক পুলিশ কর্মকর্তারা এবং উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। এই বিশেষদিনে উপস্থিত ছিলেন বিয়েতে বারমেরের সাংসদ উমেদারাম বেনিওয়াল এবং সমাজকর্মী রুমাদেবীর মত বিশিষ্ট মানুষেরা। IPS অফিসার জগদীশ বাঙ্গারওয়ারের এই সাফল্যের গল্প তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে। সেই সাথে তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন ব্যর্থতা থেকে কিভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়।