বাংলাহান্ট ডেস্ক: উত্তমকুমার (Uttam Kumar), বাঙালির সর্বকালের সেরা নায়ক। মহানায়ক (Mahanayak) তকমাটা একমাত্র তাঁর নামের সঙ্গেই যেন সঠিক ভাবে খাপ খায়। একমুখ উচ্ছল হাসি আর অসাধারন অভিনয় দক্ষতা দিয়ে তিনি জয় করেছিলেন আপামর বাঙালির মন। বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তমের ছাপ এতটাই প্রকট যে এখনও একইরকম উজ্জ্বল হয়ে রয়েছেন তিনি বাঙালির মনে।
এমন হীরের টুকরো ছেলের মা ও যে ততটাই ব্যক্তিত্বশীল এবং স্নেহময়ী হবেন তা বলাই বাহুল্য। উত্তমকুমারের কাছে মা চপলা দেবী ছিলেন সত্যিই এক মানবী রূপে দেবী। মায়ের কাছে মনের সব কথা খুলে বলতেন তিনি। উত্তমকুমারের আত্মজীবনী আমার আমি তে এমনই নানা ঘটনাবলী লিখে গিয়েছেন তিনি।
এক জায়গায় উত্তমকুমার লিখছেন, এক বিকেলবেলার কথা। উত্তমকুমার মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে রয়েছেন। হঠাৎ চপলা দেবী হাসতেই উত্তম জিজ্ঞাসা করেন, ‘কি হল মা, হাসছ!’ উত্তরে চপলা দেবী বলে ওঠেন, ‘তোকে নিয়ে একবার কি মুশকিলেই না পড়তে হয়েছিল-‘ এদিকে অভিনেতা তখন কৌতূহলে অধীর। অনেক আবদারের পর মুখ খোলেন চপলা দেবী।
আরও পড়ুন: বিছানায় শুয়ে কাটছে দিন, উঠে বসার ক্ষমতা হারিয়েছেন! গুরুতর পরিস্থিতি অপর্ণা সেনের
তিনি বলতে শুরু করেন, ‘তুই যখন জন্মালি তখন এই গাট্টা গোট্টা, ফর্সা চেহারা, চোখদুটো টানাটানা। কিন্তু মণিজোড়া একটু ট্যারা। তবে আমি সেসব নিয়ে কিছুই ভাবিনি। তোর দাদামশায়ের কি খেয়াল হল, আমায় ডেকে বললেন চপল শোন, তোর ছেলের নাম দিলাম উত্তম। আমার বাবা তো তোর নাম রেখে খুব খুশি হলেন। কিন্তু আমার সে নাম পছন্দ হল না। একটু রেগেও গিয়েছিলাম বাবার ওপর। বাঙালি ছেলের নাম উত্তম! কিন্তু তবুও বাবার দেওয়া নাম। তাই মনের রাগ মনেই চেপে রাখলাম।’
আরও পড়ুন: দেবের ‘ব্যোমকেশ’ পাশ করল নাকি ডাহা ফেল? বাংলাহান্টের ক্যামেরায় জনতার বিষ্ফোরক প্রতিক্রিয়া!
এরপর চপলা দেবী আরও জানান, একবার তাঁদের বাড়ির কুল গুরুদের শ্রীপূর্ণ সন্ন্যাসী এসেছিলেন তাঁদের বাড়িতে। প্রতি চার বছর অন্তর আসতেন তিনি। উত্তম কুমারের যখন তিন মাস বয়স তখন তাঁর মামারবাড়ি আহিরিটোলায় এসেছিলেন তিনি। সেই সময় ছোট্ট উত্তমের হাসি দেখে কুল গুরুদেব বলেছিলেন, এই হাসি দিয়েই একদিন গোটা বাংলা জয় করবেন তিনি। উত্তমের দাদুর দেওয়া নামেই বিখ্যাত হবেন।
তাঁর কথা ফলে গিয়েছিল অক্ষরে অক্ষরে। জানা যায়, মহানায়ক হওয়ার পরেও মাকে প্রতিদিন প্রণাম করে তারপর শুটিংয়ে বেরোতেন উত্তমকুমার। জীবনে একবার ছাড়া কখনও মায়ের অবাধ্য হননি তিনি। জানা যায়, জন্মদিনের রাতে স্ত্রী গৌরী দেবীর সঙ্গে তুমুল ঝামেলা করে নিজের বাড়ি ছেড়ে সুপ্রিয়া দেবীর কাছে চলে এসেছিলেন অভিনতা। সেই সময় বারবার বারন করা সত্ত্বেও মায়ের কথা শোনেননি উত্তম কুমার।
ঋণস্বীকার: আমার আমি, উত্তমকুমারের আত্মজীবনী