বাংলা হান্ট ডেস্ক: পিঠে কালো দাগ কাটা এই পাখিটি টেনিস বলের চেয়ে খুব বেশি বড়ো নয়। আগে তো যত্রতত্র দেখা যেত এই পাখি। চলতি ভাষায় একে বলা হয় চড়ুই (Sparrow)। এবং বলা হয় ভারতে (India) নাকি এই পাখিটিকেই সবচেয়ে বেশি দেখা যেত আগে। অনেকেই হয়ত জানেননা যে, চড়ুইকে হ্যাপিনেস, টিম ওয়ার্ক, সরলতা এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তবে আজকাল শহর তো দূর, গ্রামাঞ্চলেও আর এই পাখির দেখা মেলেনা।
তবে একটি পরিবার আছে যারা বিগত ৩০০ বছর ধরে চড়ুই পাখির রক্ষণাবেক্ষণ কথে আসছে। উত্তর প্রদেশের বিজনোরের সায়োহরার শেখরা তাদের বিশাল এবং বিলাসবহুল প্রাসাদে চড়ুইদের আশ্রয় দিয়েছেন। বর্তমানে এটি তাদের কাছে একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এই ঐতিহ্যের কারণে তারা শপথ নিয়েছে যে, এই প্রাসাদের কাঠামো-ও কখনও পরিবর্তন করা হবেনা। এবং এইসব চড়ুইকে কখনোই বাস্তুচ্যুত করা হবেনা।
উল্লেখ্য, আজ থেকে প্রায় ২৩ বছর আগে পরিবারের প্রধান আকবর শেখ তার পৈতৃক বাড়িটি দেন তার বড় ছেলে শেখ জামালকে। এবং তারপর বংশপরম্পরায় এই ব্যাপারটা চলে আসছে। ৫২ বছর বয়সী জামাল তার বাবার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে ঐতিহ্য অব্যাহত রেখেছেন। ইউপির বন বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই প্রাসাদে প্রায় ২,০০০ টিরও বেশি চড়ুই রয়েছে। যেখানে গোটা দুনিয়ায় চড়ুইয়ের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে, সেখানে এই পরিবারের পক্ষ থেকে এই পাখির প্রজাতির সংরক্ষণ প্রশংসনীয়।
উল্লেখ্য, চলতি বছর সোমবার বিশ্ব চড়ুই দিবস পালিত হয়েছে। এইদিন জামালের পরিবারের সহযোগিতায় বন বিভাগ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ উপলক্ষে চড়ুই পাখির যত্ন নেওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ৫০ ব্যাগ শস্য ও মাটির হাঁড়ি বিতরণ করা হয়। জামাল বলেন, “আমার বাবা আকবর শেখের ছয় ছেলে ছিল। তাদের মধ্যে তিনজন তাড়াতাড়ি মারা গিয়েছিল। তারপর আমাকে প্রাসাদ এবং পাখিদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “এটি আমাদের পরিবারে সবসময় একটি ঐতিহ্য ছিল। তাদের সম্পত্তি তাদের বংশধরদের কাছে হস্তান্তর করার সময়, প্রবীণরা শপথ নেন যে তরুণ প্রজন্ম প্রাসাদে চড়ুই পাখির যত্ন নেবে। এই পাখিদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও মমতা এই পাখিদের মাধ্যমেই প্রবাহিত হয়েছে। ওরা আমাদের সন্তানের মতো।” তিনি বলেন, “প্রাসাদের সব জায়গায় চড়ুই দেখা যায়। তাদের জন্য শস্যের ঝুড়ি বিছিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকেরাও তাদের কাজ করে, এবং তারা যা পারে তা দান করে।”
জামালের ছেলে ফারাজ বলেন, “আমি হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছি এবং এখন চাকরি খুঁজছি, কিন্তু আমি আমার ছোট বন্ধুদের মধ্যে শান্তি পাই। তাদের সেবা করা শুধু শখ নয়, আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য ও কর্তব্য।” ফারাজ বলেন, “চড়ুই আমাকে আমার ভালোবাসা খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। আমি ভানিয়া সিদ্দিকীকে বিয়ে করার আগে তাকে এই পাখিগুলোর ভিডিও পাঠাতাম। সে খুব মুগ্ধ হয়েছিল।” ভানিয়ার কথায়, “আসলে এই পাখিগুলোই আমাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে। কিচিরমিচির না শুনলে আমি অস্থির বোধ করি।”