বাংলাহান্ট ডেস্ক : উত্তরাখণ্ডে আবার বিজেপি ক্ষমতায় এলে কার্যকরী করা হবে ইউনিফর্ম সিভিল কোড, এমনটাই জানিয়েছিলেন সেরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। এবার বৃহস্পতিবার সেই দিকেই এক কদম এগোলো ধামির সরকার। এদিনই ঘোষণা করে তিনি জানান যে অতিদ্রুতই রাজ্যে লাগু হতে চলেছে এই আইন। তিনি আরও বলেন যে উত্তরাখণ্ডই দেশের প্রথম রাজ্য হতে চলেছে যারা এই আইন লাগু করছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেন, ‘রাজ্যের মন্ত্রীসভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই ইউনিফর্ম সিভিল কোডকে গ্রহণ করা হয়েছে।।অতি শীঘ্রই এই সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র আর পি সিং। তিনি বলেন, ‘সকল নাগরিকের জন্যই আইন শৃঙ্খলা অবশ্যই সমান হওয়া উচিত। উত্তরাখণ্ডে ইউনিফর্ম সিভিল কোড কার্যকর করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কথা রাখেন। বুধবারই দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন পুষ্কর সিং ধামি। আর তার পরই এদিন নির্বাচনী ইস্তেহার বাস্তবায়নের ঘোষণা করলেন তিনি।
কী এই ইউনিফর্ম সিভিল কোড?
ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানী বিধি হল ভারতীয় নাগরিকদের জন্য এমন একটি আইন যা দেশের সকলের জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে একই ভাবে প্রযোজ্য হয়। এই বিধি অনুসারে দেশের প্রতিটি মানুষ একই নিয়ম মেনে বিয়ে, বিচ্ছেদ, দত্তক এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার ইত্যাদি করতে পারবেন। ভারতে এই সিভিল কোড প্রণয়েই সচেষ্ট বিজেপি।
এই প্রসঙ্গে গত ১২ ফেব্রুয়ারি উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই প্রথম একটি কমিটি তৈরি করবে বিজেপি সরকার। সেই কমিটিই ইউনিফর্ম সিভিল কোডের একটি খসড়া তৈরি করবে। এই নিয়ম কার্যকর হলে সব ধর্মের মানুষদের জন্যই বিয়ে, বিচ্ছেদ, জমি অধিগ্রহণ, প্রভৃতি সহ একাধিক ক্ষেত্রে একই নিয়ম কার্যকর হবে। আলাদা ধর্মের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা নিয়ম থাকবে না।’
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ‘নতুন করে বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর যত দ্রুত সম্ভব এই বিধি লাগু করা হবে। দেবভূমির সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রাখা আমাদের প্রধান কর্তব্য এবং এতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সবাইকে সমান অধিকার দান করতেই অতি দ্রুত এই নিয়ম কার্যকর করতে চাইছি আমরা’। এদিন তিনি এই কমিটি গঠনের কথাই ঘোষণা করলেন।
এই ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু হলে প্রতিটি ধর্মের মানুষকেই মেনে চলতে হবে এক বিধি। হলে কার্যতই মূল্যহীন হয়ে পড়বে শরিয়তি ও মুসলিম পার্সনাল ল। বিজেপির দাবি এই বিধি কার্যকর হলে রাজ্যের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে। কমবে হিংসা, লিঙ্গ বৈষম্য ইত্যাদির মত ঘটনাও। একই সঙ্গে নারী মর্যাদা এবং রাজ্যের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখতেও এই বিধি কার্যকর হবে বলেও দাবি করেছে গেরুয়া শিবির।
ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ভারতের সংবিধান প্রতিটি মানুষকে নিজের নিজের ধর্মচারণ এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিকে নিজেদের নিয়ম কানুন মেনে চলার অধিকার প্রদান করে। সেখানে মুসলিম আইন এবং অন্যান্য নিয়ম কানুনকে মুছে ফেলতে চেয়ে বিজেপির এই এক বিধি আনার প্রচেষ্টায় সমালোচনার ঝড় বিরোধী মহলে। ব্যাপারটিকে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের রূপভেদ হিসেবেই আখ্যা দিতে চান বিরোধীদের একাংশ।