বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিশ্বাসে মিলায় বস্তু! শ্রাবণ মাসে মহাদেবের পূজা-অর্চনায় মেতে উঠেছে সকলে। চলছে শিবের মাথায় জল ঢালার পর্ব। অন্যদিকে এই সময়ই এক অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। সোমবার একটি মামলায় শিবলিঙ্গ উচ্ছেদের রায় (Verdict on Shifting Shivling) নথিভুক্ত করতে গিয়ে অবাক কাণ্ড কলকাতা হাইকোর্টে। বিতর্কিত জমিতে শিবলিঙ্গ স্থাপন করা যায় না বলে সেটিকে সরানোর রায় দিয়ে দিলেন বিচারপতি (Calcutta HC Judge)। তারপরেই যা হল তা কল্পনাতীত।
মামলার রায় নথিভূক্ত করছিলেন এজলাসে উপস্থিত সহকারী কোর্ট রেজিস্ট্রার। তবে সেই রায় লিখতে গিয়ে হঠাৎই সংজ্ঞা হারালেন তিনি। নড়েচড়ে বসলেন সকলে। এও সম্ভব! চমকে উঠলেন খোদ বিচারপতিও। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হল সহকারী কোর্ট রেজিস্ট্রারকে। তবে ঘটনার পরই তড়িঘড়ি নিজের মত বদলালেন বিচারপতি। ঘটনায় স্তম্ভিত সকলে।
পুরো ঘটনাটা কি? মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) এক জমি ঘিরে এর সূত্রপাত। জেলার বেলডাঙ্গার খিদিরপুরের নিবাসী সুদীপ পাল ও গোবিন্দ মন্ডলের মধ্যে একটি জমিকে কেন্দ্র করে বিবাদ চরমে পৌঁছয়। মারামারিও হয় উভয়পক্ষের। দুজনেই দুজনার বিরুদ্ধে বেলডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। জামিন পেয়ে যান দুজনেই। এই পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল।
অন্যদিকে অভিযোগ, এর কিছুদিন পরই ওই জমিতে ওই একটি শিবলিঙ্গ প্রতিস্থাপন করেন গোবিন্দ মন্ডল। তবে সুদীপ পালের তাতে আপত্তি। শিবলিঙ্গ জমি থেকে উপড়ে ফেলতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সুদীপ। এরপর কোনও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নিলে সুদীপ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন।
মামলা ওঠে আদালতে। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে মামলার শুনানি ছিল। বিচারপতি গোবিন্দ মণ্ডলের আইনজীবিকে বিতর্কিত জমিতে শিবলিঙ্গ স্থাপন করার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। বলেন, ‘এইভাবে বিচারাধীন সম্পত্তিতে শিবলিঙ্গ প্রতিস্থাপন করা কি যায়?’
অন্যদিকে গোবিন্দর আইনজীবীর সওয়াল, ‘আমার মক্কেল শিবলিঙ্গ প্রতিস্থাপন করেনি। ওই জমিতে শিবলিঙ্গ নিজেই মাটি ফুঁড়ে উঠেছে।’ সব শেষে বিচারাধীন জমিতে হঠাৎ শিবলিঙ্গ এইভাবে প্রতিস্থাপন করা যায় না বলে সেটি সরানোর নির্দেশিকা জারি করেন বিচারপতি সেনগুপ্ত।
আদালতের নির্দেশের পর সহকারি কোর্ট রেজিস্ট্রার বিচারপতির রায় নথিভুক্ত করতে শুরু করেন। তবে রায় কিছুটা নথিভুক্ত করতে গিয়েই জ্ঞান হারান তিনি। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে দ্রুত হাইকোর্টের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার প্রায় ১০ মিনিট পর এজলাসে ফিরে বিচারপতি নিজের রায় পরিবর্তন করেন। বলেন, হাইকোর্ট এই বিষযয়ে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না। শিবলিঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়টি নিম্ন আদালতের দেওয়ানি মামলার মাধ্যমে বিচারের নির্দেশ দেন তিনি।