বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) সময় কাটান না এমন মানুষ রীতিমতো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পাশাপাশি, নেটমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে অনেকে উপার্জনের রাস্তাও খুঁজে পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষরাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও তৈরি করার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। যাঁদের মধ্যে রয়েছে সবজি বিক্রেতা থেকে শুরু করে নিরাপত্তারক্ষী সকলেই। এমনকি, জনপ্রিয়তার পাশাপাশি মাসের শেষে মোটা উপার্জনও করছেন সবাই।
এই প্রসঙ্গে পেশায় ডেলিভারি বয় রাহুল জানিয়েছেন যে, তাঁদের কাজের জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা দু’টোই প্রয়োজন। বছর দু’য়েক আগে রাহুল তাঁর ইউটিউব চ্যানেলটি শুরু করেন। সেখানে রাহুল তাঁর কাজ এবং ডেলিভারি সংক্রান্ত নানান বিষয় উপস্থাপিত করেন। রাহুল জানান যে, ডেলিভারির ক্ষেত্রে ঠিক কি কি সমস্যা আসে হয় সেগুলিই দেখাতে চেয়েছিলেন তিনি। প্রথমে মানুষ এই কাজে তেমন গুরুত্ব দিত না। কিন্তু ভিডিও দেখার পর লোকজন এটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করে এবং ডেলিভারি বয়দের সম্মানের চোখেও দেখতে শুরু করে।
বদলেছে সময়! এবার ইউটিউবেও জয়জয়কার সাধারণ মানুষের: এখন সময় যত এগোচ্ছে ততই ইউটিউবের মত প্ল্যাটফর্মে ট্রাক চালক, সবজি বিক্রেতা, ডেলিভারি বয়দের ভিডিও সামনে আসছে। মূলত, এইসব পেশার সাথে যুক্ত থেকেও তাঁদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও বানিয়ে তাঁরা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। ইতিমধ্যেই ছত্তিশগড়ের ২৫ বছর বয়সী সবজি বিক্রেতা চন্দ্র প্রকাশ প্যাটেল তাঁর ইউটিউব চ্যানেল “চান্দু দ্য ভিলেজার”-এ ৩৬ লক্ষ ভিউস পেয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি জানিয়েছেন যে, “আমি দেখাতে চেয়েছিলাম যে একজন সবজি বিক্রেতা সারাদিন পরিশ্রম করে কত টাকা রোজগার করেন। সবাই সবজি বিক্রেতাদের সাথে ২ থেকে ৩ টাকার জন্য দর কষাকষি করেন। কিন্তু তাঁদের পরিশ্রম কেউ দেখে না।” তিনি তাঁর ভিডিওতে একটি সবজি বিক্রেতার দিনলিপি সবার সাথে ভাগ করে নেন।
প্রথমে প্রশ্ন করতে ভয় পেতাম: এই প্রসঙ্গে রাহুল জানিয়েছেন যে, তিনি সিনেমায় কাজ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সুযোগ পাননি। এখন তিনি তাঁর কাজের পাশাপাশি এমন ভিডিও আপলোড করেন যাতে মানুষ বিনোদন পায়। রাহুলের ইউটিউব চ্যানেলে মানিটাইজেশনও রয়েছে। রাহুল জানিয়েছেন যে, তাঁর বাবা-মা সরকারি চাকরির প্রসঙ্গে জানলেও তাঁদের ইউটিউব সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।
এদিকে, সতীশ পান্নার যাত্রা শুরু হয় কুরিয়ার রাইডার হিসেবে। সতীশ বলেন, প্রথমে তিনি ভিডিও দেখতেন এবং নিজে ভিডিও করতে চাইতেন। কিছু দিন পর, সতীশ প্রতিদিন যে কাজ করতেন তার ভিডিও আপলোড করতে শুরু করেন। ডেলিভারির কাজ সম্পর্কে গ্রাহকদের সাথে প্রশ্নোত্তরের ভিডিও আপলোড করেন তিনি। এমতাবস্থায়, প্রথম দিকে তিনি অচেনা ব্যক্তিদের প্রশ্ন করতে ভয় পেলেও দ্রুত তাঁর এই ভয় চলে যায়।
সতীশ জানিয়েছেন যে, “প্রথমে সবাই আমাকে নিয়ে মজা করত। সবাই বলত যে এগুলো কে দেখবে। ধীরে ধীরে মানুষ আমার ভিডিও পছন্দ করতে শুরু করে।” এদিকে, করোনার পর থেকে তিনি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে থাকেন। পাশাপাশি, এই মুহূর্তে, তিনি ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন বলেও জানা গিয়েছে।
জনপ্রিয় হয়েছেন ট্রাক ড্রাইভার: এদিকে, সম্প্রতি রাজেশ নামের পেশায় একজন ট্রাক ড্রাইভারও ইউটিউবে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। রাজেশ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। পাশাপাশি, সেই সময়ে তিনি সবার সঙ্গে কথাও বলেন। এছাড়াও, সফরকালে একজন ট্রাক ড্রাইভারের জীবন যেভাবে অতিবাহিত হয় সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন তিনি। এর পাশাপাশি, ট্রাকের ভেতরেই বিভিন্ন রান্নাও করতে দেখা যায় তাঁকে।
স্বাভাবিকভাবেই, নেটিজেনরা রাজেশের ভিডিও খুব পছন্দ করেন। পাশাপাশি, রাজেশও ভিডিও বানাতে ভালোবাসেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সবজি বিক্রেতা, ডেলিভারি বয়, ট্রাক চালকদের দ্বারা তৈরি করা এই ভিডিওগুলি বর্তমানে তুমুল জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। অর্থাৎ, সেগুলি দেখতে পছন্দ করছেন সবাই। এমতাবস্থায়, এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের তৈরি ভিডিওই সুপারহিট হয়ে উঠছে ইউটিউবে।