বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রত্যেকেই কষ্ট করে তাঁর স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করেন। স্বাভাবিকভাবেই, তার আগে বেছে নেওয়া হয় বাড়ি তৈরির উপযুক্ত স্থান। এমতাবস্থায়, একবার বাড়ি বানানো হয়ে গেলে তা সরানোর পরিকল্পনা রীতিমতো ভাবাই যায়না। কিন্তু, এবার এক চমকপ্রদ ঘটনা সামনে এল পাঞ্জাবের (Punjab) সাংরুর (Sangrur) থেকে। যেখানে এক কৃষক কার্যত অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। জানা গিয়েছে, ওই কৃষক তাঁর নবনির্মিত দোতলা বাড়িটি পূর্বের অবস্থান থেকে প্রায় ৫০০ ফুট দূরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। হ্যাঁ, শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঠিক এই ঘটনাই কিন্তু ঘটেছে।
মূলত, দিল্লি-জম্মু-কাটরা এক্সপ্রেসওয়ের মাঝে তাঁর বাড়িটি পড়ে যাওয়ায় সুখবিন্দর সিং নামের ওই কৃষক এহেন নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নেন। এই প্রসঙ্গে সুখবিন্দর জানিয়েছেন যে, নতুন বাড়িটি সরাতে যে খরচ হবে তার থেকে বহুগুণ বেশি খরচ হবে বাড়িটি ফের তৈরি করতে। আর ওই কারণেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে, ইতিমধ্যেই ওই বাড়ি সরানোর একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, “ভারতমালা” প্রকল্পের অধীনে দেশে একাধিক এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হচ্ছে। এমতাবস্থায়, দিল্লি এবং জম্মুর মধ্যে এমন একটি এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা হচ্ছে যা হরিয়াণা এবং পাঞ্জাব হয়ে জম্মুর কাটরা পর্যন্ত যাবে। এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়া টুডের খবর অনুযায়ী, এই এক্সপ্রেসওয়ে সাংরুর জেলার রোশনওয়ালা গ্রামের মধ্য দিয়েও যাবে। সুখবিন্দর সিং-ও এই গ্রামেই থাকেন।
এদিকে, ঘটনাচক্রে সুখবিন্দরের বাড়ির ঠিক ওপর দিয়েই এক্সপ্রেসওয়ে যাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। এই ঘটনায় সুখবিন্দর জানান, তাঁর প্রায় আড়াই একরের একটি জমি রয়েছে। সেই জমিতেই নির্মিত হয়েছে বাড়িটি। পাশাপাশি, তিনি আরও বলেন, “আমি অনেক ভালোবেসে এই বাড়িটি তৈরি করেছি। বাড়িটির কাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়েছিল, এবং এটি ২০১৯ সালে শেষ হয়। এতে আমার প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন এই বাড়িটি এক্সপ্রেসওয়ের মাঝখানে চলে আসায় এটিকে সরাতে ৪০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। এমতাবস্থায়, অনেকে আমাকে বলেছিলেন যে ৪০ লাখে নতুন বাড়ি তৈরি হবে। কিন্তু এটা আমার স্বপ্নের বাড়ি।” সুখবিন্দর আরও জানান, বাড়িটি তৈরি করতে প্রচুর কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। যার দাম কয়েক লক্ষ টাকা। তাই, বাড়িটি ভেঙে অন্য জায়গায় নির্মাণ করলে তাঁর লক্ষ লক্ষ টাকা নষ্ট হয়ে যাবে।
বাড়িটিকে ২০০ ফুট পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে: জানা গিয়েছে, সুখবিন্দরের এক বন্ধুও তাঁর বাড়িটি কিছুটা স্থানান্তরিত করেছিলেন। তাই, বন্ধুর কাছ থেকেই তিনি দক্ষ কারিগরদের খোঁজ পান। এই প্রসঙ্গে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত মোহাম্মদ শহীদ জানান, “আমার এই কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদিও, এর আগে আমি মাত্র ৫ থেকে ১০ ফুট দূরত্বে বাড়ি সরিয়েছিলাম। এমতাবস্থায়, ৫০০ ফুট অনেক দূরত্ব। কিন্তু আমরা এই চ্যালেঞ্জটি নিয়েছি এবং এখনও পর্যন্ত আমরা ২০০ ফুট পর্যন্ত বাড়িটি সরিয়েছি।”
পাশাপাশি, তিনি আরও বলেন, একদিনে বাড়িটি মাত্র ১০-১২ ফুট স্থানান্তর করা হয় এবং পুরো কাজটি করতে ২ মাস মত সময় লাগবে। তবে, বাড়িটিকে নিরাপদে স্থানান্তরিত করার বিষয়ে তাঁরা যথেষ্ট আশাবাদী। অপরদিকে, সুখবিন্দর সিং জানিয়েছেন যে, তিনি নতুন এই এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণে অত্যন্ত খুশি। কারণ সেটি দেশ ও রাজ্যের অগ্রগতিতে সাহায্য করবে। তবে তাঁর অভিযোগও রয়েছে।
#WATCH | A farmer in Punjab's Sangrur is moving his 2-storey house 500 feet away from its existing place pic.twitter.com/nrQoQhM0vO
— ANI (@ANI) August 20, 2022
জানা গিয়েছে, এই জমিতে তাঁর একটি বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাও ছিল। এমতাবস্থায়, সেটিও স্থানান্তরিত করতে হয়েছে। এছাড়াও, এই এক্সপ্রেসওয়ে তাঁর জমির উপর দিয়ে যাওয়ার কারণে তিনি সমস্যাতেও পড়েছেন। মূলত, তিনি তাঁর ওই জমিতে গম ও ধানের চাষ করতেন এবং একদিকে বাড়ি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু, এখন তাঁকে এক্সপ্রেসওয়ে পেরিয়ে চাষের জন্য যেতে হবে।