বাংলা হান্ট ডেস্ক: যুদ্ধ ঘোষণা করে ইতিমধ্যেই ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সেই যুদ্ধের আজ চতুর্থ দিন। এদিকে, এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলেও তার প্রভাব পড়েছে সমগ্র বিশ্বজুড়েই। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, এই যুদ্ধের ফলে ভারত, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অপরদিকে, পাল্লা দিয়ে লাভবান হবে ইন্দোনেশিয়া।
উল্লেখ্য যে, ভারত তার তেলের মোট চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশ আমদানি করে। এমতাবস্থায়, আমদানির ক্ষেত্রে ভারতকে ধাক্কা দিতে পারে দামি অপরিশোধিত তেল। এতে বাণিজ্যে ঘাটতিও বাড়বে। কারণ সারা বিশ্বে ক্রুড তেলের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কটের জেরে বিশ্বের বাজারও প্রভাবিত হয়েছে।
ইতিমধ্যেই, শেয়ার বাজারে এর প্রভাব ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এমনকি, কিছু দেশের কারেন্সি ভ্যালুও যথেষ্ট ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। বিখ্যাত ফিনান্সিয়াল রিসার্চ সংস্থা নোমুরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ইউক্রেন সঙ্কটের কারণে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে ভারতের ওপর।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ভয়াবহ যুদ্ধের ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে ভারতকে। ইতিমধ্যেই ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রায় ৩ শতাংশ লাফিয়ে ব্যারেল প্রতি ১০৫ ডলারে পৌঁছেছে। গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ক্রুড তেল ও খাদ্যদ্রব্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে এশিয়ার অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব পড়বে। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং পাল্লা দিয়ে জোগানের ঘাটতি এই সমস্যাকে আরও কঠিন করে তুলবে।
এদিকে, ইকনমিক টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সর্বশেষ পরিস্থিতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন। অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়া তুলনামূলকভাবে লাভবান হবে। এদিকে, তেল আমদানিকারক হওয়ায় ভারতের জন্যও প্রত্যক্ষভাবে অনেক ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে।কারণ তেলের দাম এখন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে পেতে সমস্ত সীমা পার করে দিচ্ছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, “অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে উপভোক্তা ও ব্যবসার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। আমরা অনুমান করছি যে, তেলের দাম প্রতি ১০ শতাংশ লাফানোর জন্য, জিডিপি বৃদ্ধিতে প্রায় ০.২০ শতাংশ পয়েন্টের পতন হবে।”
পাশাপাশি, QuantEco-র গবেষণা অনুসারে জানা গিয়েছে যে, ভারতে অপরিশোধিত তেলের প্রতি লিটারে ১০ ডলারের দাম বৃদ্ধি ২০২২ সালে ৯.২ শতাংশ বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস থেকে ১০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি কমাতে পারে। এই প্রসঙ্গে ব্যাঙ্ক অফ বরোদার প্রধান অর্থনীতিবিদ মদন সাবনভিস বলেছেন যে, অপরিশোধিত তেলের ১০ শতাংশের স্থায়ী বৃদ্ধির কারণে WPI-ভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি ১.২ শতাংশ এবং CPI-ভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি ০.৩ থেকে ০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।
যার সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের পকেটে। এক কথায়, আর কিছুদিনের মধ্যেই আগুন জ্বলতে চলেছে গৃহস্থের হেঁসেলে। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধসংক্রান্ত এই জেদের কারণে এখন ভারতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে (আরবিআই) মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছু বড় সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।