“আর চাইনা ছুটি, এবার পড়াতে চাই”, রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদে নামলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাজ্য জুড়ে এর আগেও একাধিকবার বিভিন্ন দাবির ভিত্তিতে পথে নেমেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তবে, গ্রীষ্মের ছুটির পরিবর্তে স্কুল খোলার দাবি নিয়ে শিক্ষকদের প্রতিবাদ এই প্রথম চোখে পড়ল মহানগরের রাজপথে। মূলত, পড়ুয়াদের স্বার্থে ছুটি কমিয়ে স্কুল খোলার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগরের মূর্তির কাছে অবস্থান বিক্ষোভে বসলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা সামিল হন এই বিক্ষোভে।

এমনকি, তাঁদের গলায় ঝোলানো ছিল প্ল্যাকার্ডও। তাতে লেখা ছিল “আর ছুটি নয়। এবার স্কুলে পড়াতে চাই।” মূলত, করোনা আবহে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল স্কুল। যদিও, সংক্রমণের রেশ বর্তমানে কমে যাওয়ায় ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছিল স্কুলের পঠন-পাঠন। এমতাবস্থায়, মুখ্যমন্ত্রী গরমের জন্য দেড় মাস ছুটি ঘোষণা করেন। এদিকে, গরমের তীব্রতা এখন কম থাকায় দীর্ঘ দেড় মাস ছুটির দরকার নেই বলে দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

বৃহস্পতিবার কলেজ স্কোয়ারে “বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি”-র তরফে এই ধর্না-অবস্থান চলে সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। সেখানে যোগদান করেন প্রায় দেড়শ জনেরও বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা। মূলত, তাঁরা জানিয়েছেন, গত এপ্রিলে বেশ কয়েকদিন পরপর তাপপ্রবাহ চলছিল। সেই অনুযায়ী, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বৈঠকের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন তাপমাত্রা কমলে পরিস্থিতি বুঝে গরমের ছুটি দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পাশাপাশি তিনি আরও জানান, করোনাকালে দীর্ঘ দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকার জন্য পড়াশোনার ক্ষতির দিকটিও বিবেচনা করা হবে। যদিও, শিক্ষক-শিক্ষিকারা অভিযোগ তুলেছেন, সেই সব বিবেচনা না করেই আচমকা দীর্ঘ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেড় মাসের ছুটির প্রতিবাদ জানিয়ে স্কুল খোলার দাবি তুলেছেন তাঁরা।

এই প্রসঙ্গে “বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি”-র সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা জানান, স্কুল খোলার দাবিতে তাঁরা ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। দরকার হলে আবারও স্মারকলিপি দেবেন। পাশাপাশি, তিনি আরও জানান, পড়ুয়াদের স্বার্থে এই আন্দোলন থেকে কিছুতেই পিছু হটবেন না তাঁরা।

এমনকি, দাবি পূরণ না হলে তাঁরা ১৭ মে ফের অবস্থান-বিক্ষোভ করবেন বলেও জানিয়েছেন। পাশাপাশি, স্কুল খোলার দাবিতে শিক্ষকদের জমায়েত করতে চলেছে “নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি”-ও। এছাড়াও, আগামী ১৩ মে করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ডের কাছে শিক্ষকদের জমায়েত হবে বলেও প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে।

এদিকে, স্কুল খোলার প্রসঙ্গে বিভিন্ন মতামত জানিয়েছেন সেখানে উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। এক শিক্ষক জানিয়েছেন, “রাস্তাঘাটে আমাদের রীতিমত বিদ্রুপ করছেন সবাই। অনেকেই বলছেন যে, আমরা বাড়িতে বসে বসে বেতন নিচ্ছি। কিন্তু, আমরা এই দীর্ঘ ছুটি চাই না। বরং, স্কুলে গিয়ে পড়াতে চাই। কিন্তু, এটাই ওনারা বুঝতে চাইছেন না।”

banner 1

পাশাপাশি, উপস্থিত শিক্ষক-নেতা নবকুমার কর্মকার বলেছেন, “বর্তমানে আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখে সিদ্ধান্ত বদল করলে পড়ুয়ারাই উপকৃত হবে। কারণ, প্রথম সামগ্রিক মূল্যায়ন ঠিক সময়ে না হলে পরের মূল্যায়ন নিতে স্বাভাবিকভাবেই দেরি হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বে ছাত্র-ছাত্রীরা।” যদিও, এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা আবার কার্যত অভিযোগের সুরে জানিয়েছেন যে, দীর্ঘ ছুটি দিয়ে মূলত শিক্ষাকেই বেসরকারিকরণের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর