রাজ্য সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন, সর্মথন করলেন তৃনমূলের ছাত্র সংগঠন, বন্ধ রয়েছে পঠন পাঠন,গবেষণার কাজ

বাংলাহান্ট-প্যারা টিচার এর পর আবার ফের আন্দোলনের রাস্তায় নামলেন মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা।

তারা একাধিক দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছে এবং বর্তমানে তারা আবার ফের আন্দোলন শুরু করেছে। সেই আন্দোলনকে সর্মথন করছে তৃনমূলের ছাত্র সংগঠন

IMG 20191220 WA0159

আন্দোলন কারিদের দাবী –

পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ গত 17 তারিখ থেকে আন্দোলনের পথে , বন্ধ রয়েছে পঠন পাঠন , গবেষণা ও অনান্য কাজকর্ম ।

মৎস্য উৎপাদনে শীর্ষে থাকা বঙ্গ কে পিছনে ফেলে দ্বিগুণ এগিয়ে গেছে অন্ধ্র। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল, এই ১৮ বছরে অন্ধ্রপ্রদেশে মাছের উৎপাদন  ৫.৯০ লক্ষ টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪.৫০ লক্ষ টন পৌঁছে গেছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মৎস্য উৎপাদন ১০.৬০ লক্ষ টন থেকে কোন রকমে ১৭.৪০ লক্ষ টনে পৌঁছেছে। ওদিকে বিহার, উড়িষ্যা এবং ঝাড়খন্ড রাজ্য গুলি মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির হারে পশ্চিমবঙ্গ কে প্রায় টক্কর দিতে চলেছে।

IMG 20191220 WA0168

এই সংকটের প্রধান কারণ হলো মৎস্য দপ্তরের দুর্বল পরিকাঠামো। বিষয়টি উপলব্ধি করেই ২০১৩ সালে এপ্রিল মাসে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ৬ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং তৎকালীন মুখ্যসচিবকে নিয়ে গঠিত হয় মৎস্য দপ্তর সম্পর্কিত ‘স্পেশাল টাস্কফোর্স অন ফিশারিজ ‘। চলতি বছরের জুলাই মাসে সেই কমিটি রিপোর্ট জমা করে এবং তাতে যে বিষয় গুলির উপর জোর দেওয়া হয় সেগুলি হল-

১. অতিসত্বর মৎস্য দপ্তরের পুনর্গঠন করা অর্থাৎ “Re-organisation and restructuring of the fisheries department”।

২. মৎস্য দপ্তর কে কৃষি দপ্তর এবং প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তর এর সমতুল্য গঠন পরিকাঠামো প্রদান করা।

৩. “Right man in right job” অর্থাৎ যোগ্য স্থানে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োজিত করা।

IMG 20191220 WA0162

বাংলার মৎস্য উৎপাদন সংকটে এবং তার নিরাময়ের জন্য টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ থাকা সত্বেও সব কিছুকে অবমাননা করে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্র-ছাত্রী তথা ৪ বছরের প্রফেশনাল বি.এফ.এসসি (Bachelor of Fisheries Science) স্নাতকদের ফিশারি এক্সটেনশন অফিসার (FEO) হিসাবে মৎস্য দপ্তরে প্রবেশের সুযোগ ৪০ শতাংশ কমিয়ে দিল দপ্তর নিজেই, যে স্নাতকেরাই একমাত্র পারে মৎস্য বিজ্ঞানের উন্নত প্রযুক্তি কে প্রান্তিক মৎস্য চাষীদের কাছে পৌঁছে দিতে। ফিশারি এক্সটেনশন অফিসারের সেই ৪০ শতাংশ পদ পদোন্নতি দিয়ে ভরিয়ে দেওয়ার নতুন নিয়ম তৈরি হলো ২০১৫ সালে, যা নিতান্তই লজ্জাজনক। এখন প্রশ্ন পদোন্নতি পাবে কারা, যার উত্তর হলো বৃত্তিমূলক (ভোকেশনাল) শিক্ষায় শিক্ষিত নিম্নপদস্থ ফিশারিজ ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট (FFA) রা। একজন প্যারামেডিকেল এর স্নাতক মেডিক্যাল অফিসার হলে যেমন শুনতে লাগবে এখানে এই পদোন্নতির বিষয়টি ঠিক তেমনই।  প্রতিবাদে সোচ্চার হয় পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞানের পড়ুয়ারা। দীর্ঘ আন্দোলন করেও মন্ত্রী মহোদয়ের কিছু শুষ্ক আশ্বাস ছাড়া বিশেষ কোন ফল মেলেনি তাদের।

অবশেষে ২০১৭ সালে সেই হাস্যকর পদোন্নতি টি দিয়েই ছাড়ল দপ্তর এবং ৪০ জন পেলেন সেই সুযোগ। অপমানিত হলো  মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘স্পেশাল টাস্কফোর্স অন ফিশারিজ’ এবং তার সুপারিশ। আবারও পথে নামতে হয় মৎস্য বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের; চলে দীর্ঘ ২২ দিনের বৃহত্তর অনশন আন্দোলন। অবশেষে মাননীয় মৎস্য মন্ত্রীর লিখিত আশ্বাস মোতাবেক আন্দোলন প্রত্যাহার করে পড়ুয়ারা এবং ওই বছরেই শুরু হয় মৎস্য দপ্তরের পুনর্গঠন এর কাজ কিন্তু তা আজও অসম্পন্ন।

IMG 20191220 WA0152

ছয় বছর পূর্বে মুখ্যমন্ত্রীর বাংলাকে মৎস্য উৎপাদনের শ্রেষ্ঠ স্থান দেওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজও পূরণ করতে পারেনি মৎস্য দপ্তর। দপ্তরের অগণিত শূন্যপদ এবং পরিকাঠামোগত দুর্বলতা সংকটে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য উৎপাদন এবং প্রফেশনাল বি.এফ.এস.সি (Bachelor of Fisheries Science) স্নাতকদের ভবিষ্যৎ কে। তাই এবার সরাসরি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আবারও পথে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞানের পড়ুয়ারা। অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে অনুষদের পঠনপাঠন, গবেষণা এবং প্রশাসনিক কাজকর্ম। মৎস্য দপ্তরের পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলে তবেই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে।

****এই লেখাটিতে বাংলাহান্টের না,ফলে এর দায় দায়িত্ব বাংলাহান্টের না****

Avatar
Udayan Biswas

সম্পর্কিত খবর