বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আয়ের তুলনায় প্রতিবছর ব্যয় বেড়েই চলেছে রাজ্যের। তাই এবার থেকে অতিরিক্ত খরচের ক্ষেত্রে রাশ টানতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই কারণে এবার থেকে বাজে খরচ কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। যা এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। সামনেই রয়েছে আগামী অর্থ বর্ষের (২০২৫-২৬) রাজ্য বাজেট। এই বাজেটে বাড়তি খরচের সংস্থানও করতে হবে রাজ্যকে। এই অবস্থায় ডিজিটাল রেশন (Ration) কার্ডের তালিকা সংস্কার করে বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকা বাঁচাতে পেরেছে রাজ্য। যা ন্যূনতম হলেও রাজ্যকে সাহায্য করবে বলে আশা করছেন আধিকারিকদের একাংশ।
রেশন (Ration) খরচ বাঁচিয়ে বিরাট লক্ষ্মীলাভ রাজ্যের
একসময় কেন্দ্রীয় সরকারের আধারের কড়া বিরোধী ছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সারা দেশে এখন, ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর রেশন (Ration) কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগের কাজ শুরু করেছে নবান্ন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর এই কাজ শুরুর আগে রাজ্যের ডিজিটাল রেশন কার্ডের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ কোটি ৭০ লক্ষ। এখন দেখা যাচ্ছে রাজ্য ডিজিটাল রেশন কার্ডের সংখ্যা প্রায় প্রায় ১.৯৮ কোটি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৭১ লক্ষ ৫৮ হাজারে। এরফলে কমে গিয়েছে বাদ যাওয়া কার্ড পিছু খাদ্য শস্যের বরাদ্দ। যার ফলে এখন বছরে রাজ্যের সাশ্রয় হচ্ছে কমবেশি চার হাজার কোটি টাকা!
সম্প্রতি যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে তাতে উপভোক্তাদের তথ্য ভাণ্ডার সংশোধনের ক্ষেত্রে মূলত ভুয়ো কার্ড বাদ যাওয়ায় প্রত্যেক মাসে আনুমানিক ৭৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বেঁচে যাচ্ছে। বাৎসরিক হিসেবে তা প্রায় ৮.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। আধিকারিকদের বক্তব্য প্রত্যেক মাসে একজন রেশন গ্রাহক বিনামূল্যে ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য পেয়ে থাকেন। এক কেজি খাদ্যশস্যে ভর্তুকি দিতে সরকারের খরচ হয় কমবেশি ৩০ টাকা। প্রকৃতি ভেদে এই ধরনের রেশন গ্রাহকদের খাদ্যশস্যের পরিমাণেও হেরফের হয়ে থাকে। একাধিক রেশন (Ration) কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় রেশন থেকে রাজ্যের সব মিলিয়ে খরচ বাঁচছে কমবেশি চার হাজার কোটি টাকা। বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে রাজ্যের বাজেট পেশের আগে এই সাশ্রয় ইতিবাচক বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিগত কয়েক বছরে রাজ্যজুড়ে চালু রয়েছে একাধিক অনুদানমূলক সরকারি প্রকল্প। এই সমস্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে খরচের বহর বেড়েছে অনেকটাই। সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সাল থেকে শুধু লক্ষী ভান্ডারের জন্য ২.২১ কোটি উপভোক্তাকে প্রত্যেক মাসে আর্থিক সাহায্য দিতে এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে মোট ৪৮ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। আগামী দিনে আরো ৫ লক্ষ নতুন উপভোক্তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৬২৫ কোটি টাকা। এছাড়াও চালু রয়েছে কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী বিভিন্ন সামাজিক পেনশন প্রকল্প, পড়ুয়াদের ট্যাব দেওয়ার জন্য তরুণের স্বপ্ন প্রকল্প, কৃষক বন্ধু ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: ‘আমাকে তাড়িয়ে…’ মদন মিত্রের পর এবার শুভেন্দু! তৃণমূল নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ
সরকারি অনুদানমূলক এই সমস্ত প্রকল্প চালাতে মোটা টাকা খরচ হচ্ছে রাজ্যের। এছাড়াও রয়েছে বাকি দফতরগুলির জন্য বরাদ্দ বেতন এবং পেনশনের টাকা। সব মিলিয়ে ঋণ পরিশোধ বাবদ প্রায় ৭৬ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। তাই আয় না বাড়লেও বেড়েছে ব্যয়ের বহর। ফলে ব্যাপক ঘাটতির সম্ভাবনা রয়েছে রাজস্ব এবং রাজকোষের। এদিক থেকে তুলনামূলকভাবে ন্যূনতম হলেও রেশনের (Ration) খরচ বাঁচানোকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত আধার সংযোগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে বায়োমেট্রিক দিয়ে রেশন (Ration) তোলার ব্যবস্থা চালু হয়েছে ইতিমধ্যেই। প্রত্যেকটি কার্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উপভোক্তার মোবাইল নম্বর। ভবিষ্যতে চোখের মণি দিয়েও যাচাইয়ের পদ্ধতি চালু হতে পারে। জানা যাচ্ছে আঁধার সংযোগের পর এখনও পর্যন্ত ১.৯৮ কোটি কার্ড কোটি কার্ড নিষ্ক্রিয় করা হলেও এখনও দৈনিক কমবেশি এক হাজার করে রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগের কাজ চলছে।