বাজারে গেলেই হাত পুড়ছে মধ্যবিত্তের! মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম বন্ধ করতে বিরাট উদ্যোগ রাজ্যের

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বাড়তে থাকা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জেরে কার্যত নাভিঃশ্বাস ওঠার জোগাড় রাজ্যবাসীর (West Bengal)। চলতি অর্থবর্ষের শুরু থেকেই রোজকার প্রয়োজনীয় আনাজপাতি থেকে শুরু করে অধিকাংশ খাদ্য পণ্যের দাম রয়েছে আকাশ ছোঁয়া। যার ফলে এই সমস্ত জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে রীতিমতো হাত পুড়ছে মধ্যবিত্তের।

অরিতিক্ত মুনাফা লাভের বাড়বাড়ন্ত রুখতে নতুন দাওয়াই রাজ্যের (West Bengal)

নতুন বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার সামান্য কমলেও এখনও তা রিজার্ভ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার উপরেই রয়েছে। শাক-সব্জির মূল্যবৃদ্ধির অনেকগুলি কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো ফড়ে বা মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম। কম দামে কৃষকদের থেকে ফসল কিনে শহরের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে দেদার মুনাফা লুটছে এই মধ্যসত্ত্বাভোগীরা। অনেক সময় বাজারে কোনো পণ্যের চাহিদা তৈরির পিছনেও থাকে এই ফড়েদের কারসাজি। 

সাধারণ মানুষকে বেকায়দায় ফেলে এই মুনাফা লোটার কারবার কড়া হতে বন্ধ করতে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের জন্য প্রস্তাবিত রাজ্য (West Bengal) বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যে এই সমস্ত মধ্যসত্ত্বাভোগীদের দৌরাত্মকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে আরও ৩৫০ টি সুফল বাংলা স্টল এবং ২০০ টি সবজি ক্রয় কেন্দ্র চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

প্রশাসনিক এবং বিশেষজ্ঞ মহলের মতে রাজ্য (West Bengal) সরকারের এই পদক্ষেপ কৃষকদের ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করবে। কারণ সুফল বাংলা স্টলে যে সমস্ত ফসল থাকে তা সরাসরি কেনা হয় কৃষকদের কাছ থেকে। রাজ্য জুড়ে এমন আরও সুফল বাংলা স্টল চালু করা হলে কৃষকদের থেকে সরাসরি ফসল কেনার পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যাবে। একইভাবে ক্রয় কেন্দ্র বৃদ্ধি হলে আরো সহজে ন্যায্য মূল্যে নিজেদের উৎপাদিত ফসল বেচতে পারবেন কৃষকরা। এর ফলে এবার থেকে কৃষকদেরও আর কোন ফড়ের উপর নির্ভর করতে হবে না।

রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির নিয়ন্ত্রিত বাজার ও হাটগুলিতে ২০০ ধরনের সবজি কিনতে এই বাজেটে মোট ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্য। এই সমস্ত কেন্দ্রের কৃষকরা নিজেদের ফসল সরাসরি বিক্রি করতে পারবেন। ফলে খাদ্য পণ্য গুদামজাত করে রেখে দাম বাড়ানোর কারসাজিও বন্ধ হবে বলে আশা করছেন রাজ্যের (West Bengal) পদস্থ কর্তারা।

আরও পড়ুন: সঙ্ঘের ইতিহাসে বিরল ঘটনা! আজও বাংলা ছাড়ছেন না মোহন ভগবত

বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ফলে সবচেয়ে বেশি হয় সমস্যার মুখে পড়েন রাজ্যের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি। তাই এমন সমস্যা তৈরি হলে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে মাঝেমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কয়েক মাস আগে এমনই এক বৈঠক থেকে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে করা বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘শাক-সব্জি থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ন্যায্য মূল্যে পাওয়া রাজ্যবাসীর অধিকার। এই অধিকার থেকে তাঁরা বঞ্চিত হলে আমি সহ্য করব না।’ সেসময় তিনি বাজার গুলির ওপর নজরদারি বৃদ্ধিরও নির্দেশ দিয়েছিলেন।

Market Price

বর্তমানে রাজ্যে মোট ৬৪৬ টি সুফল বাংলা বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। যা সাধারণ মানুষের কাছে ন্যায্য মূল্যে পৌঁছে দেয় আলু, পেঁয়াজ সহ নানা সব্জি। এই সমস্ত বিক্রয় কেন্দ্র থেকে মাছও বিক্রি করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে কোনও সব্জির দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গেলে, তা ন্যায্য মূল্যে বিক্রির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার বড় উপায় হল এই কেন্দ্রগুলি। তাই রাজ্যের এই সিদ্ধান্তে আগামী দিনে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে বলেই মনে করছেন কৃষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্না।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর