বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বৃহস্পতিবার চাকরিহারাদের (SSC Recruitment Scam) কর্মসূচি ঘিরে তেতে ওঠে বিকাশ ভবন (Bikash Bhawan) চত্বর। শিক্ষকদের ওপর দেদার লাঠিচার্জ করে পুলিশ। মারের চোটে রক্তাক্ত হয়েছেন বহু প্রতিবাদকারী। গায়ের ওপর পড়েছে লাঠির মোটা দাগ। এই আবহে শুক্রবার লাঠিচার্জের ব্যাখ্যা দিল রাজ্য পুলিশ (West Bengal Police)। সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করা হল, কর্মীদের বাইরে বের করতে যেটুকু বলপ্রয়োগ করতে হয়, সেটাই করা হয়েছে।
শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ নিয়ে আর কী বলল পুলিশ (West Bengal Police)?
গতকাল ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চে’র তরফ থেকে বিকাশ ভবন ঘেরাও অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেই কর্মসূচি ঘিরেই কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বিকাশ ভবন চত্বর। চাকরিহারা শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের প্রতি পুলিশের আচরণ নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। এই আবহে রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছেন উর্দিধারীরা। সংযত ছিল পুলিশ। চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের যেমন গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলনের অধিকার রয়েছে, সেই রকম অফিস শেষে বাড়ি ফেরার অধিকার আছে বিকাশ ভবনের কর্মীদেরও।
আটকে পড়া কর্মীদের বাইরে বের করতে গিয়েই যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেটার মোকাবিলা করতে গিয়েই পুলিশকে নূন্যতম বলপ্রয়োগ করতে হয় বলে দাবি করেন রাজ্য পুলিশের এই উচ্চপদস্থ কর্তা। সুপ্রতিম (Supratim Sarkar) বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে চাকরিহারা শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলেন। তবে গতকাল ব্যারিকেড ভেঙে বিকাশ ভবনের অন্দরে প্রবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ তখনও কিছু করেনি, সংযত থেকেছে’। উর্দিধারীরা ৭ ঘণ্টা সংযত থেকেছে বলে দাবি করা হয়।
আরও পড়ুনঃ খুইয়েছেন চাকরি, জুটেছে মার! বিক্ষোভের মাঝেই শুভেন্দুর কাছে বড় আবেদন SSC কাণ্ডে চাকরিহারাদের
এডিজি দক্ষিণবঙ্গ বলেন, ‘কর্মীদের যখন বাইরে বেরনোর রাস্তা করে দেওয়া হচ্ছিল, সেই সময় পুলিশের ওপর বিক্ষোভকারীরা চড়াও হয়’। বিকাশ ভবনের ভেতর আটকে পড়া কর্মীদের কারোর মা অসুস্থ, কারোর আবার বাড়িতে বাচ্চা রয়েছে। অনেকের বাড়ি বিকাশ ভবন থেকে প্রচুর দূর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তাঁদের যখন আটকে রাখা হয়, তখন আর সেই আন্দোলন গণতান্ত্রিক থাকে না।
পুলিশের দাবি, গতকাল অফিস ছুটির পরেও বেরোতে পারছিলেন না বিকাশ ভবনের কর্মীরা। পুলিশের কাছে প্যানিক কল আসে। আটকে পড়ার জেরে কেউ কেউ অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। অন্তঃসত্ত্বা একজন কর্মীও ভেতরে আটকে পড়েছিলেন। পুলিশের তরফ থেকে আবেদন করা হলেও আন্দোলনকারীরা তা ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন।
রাজ্য পুলিশের কথায়, ‘কর্মীদের বাইরে বের করতে যতটুকু বলপ্রয়োগ করতে হয়, সেটাই করা হয়েছে। লাঠিচার্জ করার আগে যাবতীয় প্রোটোকল মানা হয়েছে। বারবার পুলিশ মাইকে অনুরোধ করেছে’। বিকাশ ভবনের ভেতর আটকে পড়া কর্মীদেরও একটা অধিকার রয়েছে, জানায় পুলিশ।
এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম (Jawed Shamim) এদিন বলেন, ‘আন্দোলন নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। চাকরিহারাদের কষ্ট আমরা বুঝি। শুধুমাত্র আটকে পড়া কর্মীদের বাইরে বের করতে গতকালের পুলিশি অ্যাকশন হয়েছে। অফিসের গেট ভেঙে অফিস চত্বর দখল করা যায় না। সমাজের অন্যতম স্তম্ভ হলেন শিক্ষকরা। যা আন্দোলন হচ্ছে, সেখানে যদি সহযোগিতা করার হয়, আগামীদিনে করব’।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাস থেকে এসএসসি ২৬০০০ চাকরি বাতিল কাণ্ডে উত্তাল বাংলা। এর আগেও একাধিকবার চাকরিহারাদের প্রতিবাদের সাক্ষী থেকেছে রাজ্য। বৃহস্পতিবার এমনই একটি কর্মসূচি ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। চাকরিহারা শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের ওপর পুলিশের (West Bengal Police) লাঠিচার্জ নিয়ে নানান মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এই আবহে পুলিশের এহেন কার্যকলাপের ব্যাখ্যা দিলেন রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা।